সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৮)
, ০৮ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৬ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও, এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীনসহ চার মাযহাবের এমন একজন ইমাম মুজতাহিদও নাই, যিনি এমন কথা বলেছেন যে, “সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে ঈদ পালন করতে হবে ও রোযা শুরু করতে হবে”। ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতাকে গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে, কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারাবিশ্বে একই সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও রোযা শুরু করতে হবে। এবং নিজেরাও কখনো সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে রোযা ও ঈদ কোনটা পালন করেন নাই। বরং এটা এমন এক শ্রেণীর বিদয়াতী ও গোমরাহ লোকদের গোমরাহী ও কুফরী বক্তব্য, যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের ইবাদত বন্দেগীসমূহ নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এবং এরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায়।
মূলত: তিনটি কারণে একই দিনে সারাবিশ্বে রোযা শুরু করা ও ঈদ পালন করা একেবারেই অসম্ভব তা হলো:
(১) اِخْتِلَافُ الْاَوْقَاتِ : সময়ের পার্থক্য।
(২) اِخْتِلَافُ الْمَطَالِعِ: নতুন চাঁদ উদয়স্থলের পার্থক্য।
(৩) اَلْمَسَافَاتُ الْجِغْرَافِيَّةُ: ভৌগলিক দূরত্ব।
(১) সময়ের পার্থক্য:
ধারাবাহিক আলোচনা....
একই দিনে পবিত্র ছলাত, সাহরী ও ইফতারে সময়ের ভিন্নতাকে মানতে বাধ্য হয়েও যারা সারা বিশ্বে পবিত্র ঈদ ও রোযা শুরুর ক্ষেত্রে দিনের ভিন্নতাকে মানে না, তারা সময়কে নাসীকারী, তারা নিঃসন্দেহে মুরতাদ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا يُحِلُّوْنَهٗ عَامًا وَّيُحَرِّمُوْنَهٗ عَامًا لِّيُوَاطِئُوْا عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللهُ فَيُحِلُّوْا مَا حَرَّمَ اللّٰهُ زُيِّنَ لَهُمْ سُوْءُ أَعْمَالِهِمْ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ .
অর্থ: নিশ্চয়ই নাসী (তথা মাস, দিন বা সময়কে আগে-পিছে) করা কেবল কুফরীকেই বৃদ্ধি করে। যার ফলে কাফিররা গোমরাহীতে পতিত হয়। এরা একে কোন বছরকে হালাল করে নেয় এবং কোন বছরকে হারাম করে নেয়। যাতে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিষিদ্ধ মাসগুলোর গণনা পূর্ণ করে নিতে পারে। ফলে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার হারামকৃত মাসগুলোকে হালাল করে নেয়। তাদের মন্দকাজগুলো তাদের জন্যে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৭)
যে দূরবর্তী অঞ্চলে নতুন চাঁদ দেখা যায় নাই, ঐ অঞ্চলের লোকদের উপর রোযা ফরয হয় নাই। কিন্তু তা সত্বেও ঐ অঞ্চলের লোকদের নতুন চাঁদ না দেখেই রোযা রাখতে হবে। ফলে মাস ঊনত্রিশ বা ত্রিশ দিন পূর্ণ করার পরও কোন অঞ্চলে দেখা যাবে শাওওয়াল শরীফ মাসের চাঁদ দেখা যায়নি অর্থাৎ রমাদ্বান শরীফ মাস শেষ হয়নি, ফলে রোযার দিনে পবিত্র ঈদ করতে হবে। যা কুফরী কাজ। আবার কোন অঞ্চলে রমাদ্বান শরীফ মাসের নতুন চাঁদ দেখেছে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের চাঁদ দেখার অনুসরণ করে একদিন পর রোযা রাখল। ফলে পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসের নতুন চাঁদ দেখেও তাদেরকে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযা রাখতে হবে। অর্থাৎ পবিত্র ঈদের দিনেও রোযা রাখতে হবে। ফলে এক দিনের রোযা কম হবে অথবা বেশি হবে। তখন দেখা যাবে কোন অঞ্চলের লোকেরা ঈদের দিন রোযা রাখছে, কোন অঞ্চলের লোকেরা রোযার দিনে ঈদ করছে। যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নাসী বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা স্পষ্ট হারাম ও কুফরী।
মধ্য প্রাচ্যে বা সৌদি আরবে নতুন চাঁদ দেখার অনুসরণে পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ শুরু করা চরম মূর্খতা:
মধ্য প্রাচ্যে বা সৌদি আরবে নতুন চাঁদ দেখার অনুসরণে পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ শুরু করা চরম মূর্খতার তিনটি কারণ-
১। সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের লোক ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য চাঁদ দেখার বা তালাশ করার প্রয়োজন থাকবে না। ফলে নতুন চাঁদ তালাশ করার ওয়াজিব হুকুম সৌদি আরবের লোক ছাড়া পৃথিবীর সকল লোকের উপর থেকে বাতিল হয়ে যাবে। যা কাট্টা হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
২। সৌদি আরব বা মধ্য প্রাচ্যের পশ্চিমেও অনেক দেশ রয়েছে, তাই সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখবে একথা সঠিক নয়। নতুন চাঁদ সৌদি আরব বা মধ্য প্রাচ্যের পশ্চিমে অবস্থিত অঞ্চলসমূহ থেকে শুরু করে, সারাবিশ্বের যে কোন স্থানে দেখা যেতে পারে।
তাই সৌদি আরবের নতুন চাঁদ দেখার অনুসরণে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করলে দেখা যাবে কোন অঞ্চলের লোকেরা পবিত্র ঈদের দিন রোযা রাখছে, আবার কোন অঞ্চলের লোকেরা পবিত্র রোযার দিনে পবিত্র ঈদ পালন করছে। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
৩। যে দিন সৌদি আরবে নতুন চাঁদ দেখা গেল, ধরে নেই সন্ধ্যা ৫টায় নতুন চাঁদ দেখা গেল। আর পবিত্র রোযা রাখা ফরয হয়ে গেল বিশ্বের সকল দেশ বা অঞ্চলের লোকদের উপর। কিন্তু যে সমস্ত দেশ বা অঞ্চলসমূহে ঐ সময় রাত ২টা থেকে সকাল ৬টা বাজে, তাহলে তাদেরকে হয়তো সাহরী না খেয়েই পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে, অথবা একদিন বিলম্ব করে দ্বিতীয় দিন রোযা রাখতে হবে। যদি একদিন পরে রোযা রাখে, তাহলে তো আর একই দিনে রোযা রাখার দাবি টিকল না। আবার সৌদি আরবের চাঁদ দেখার অপেক্ষায় না খেয়ে রোযা রাখার নজীর বা দৃষ্টান্ত তখন পৃথিবীতে নতুন করে ঘটতে শুরু করবে। যা পৃথিবীর যমীনে কোন দিন ঘটে নাই। যা হবে একটি শরীয়ত বিরোধী নিকৃষ্ট আমল।
অন্যদিকে, সৌদি আরবের সাথে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা যে সকল দেশের সময়ের পার্থক্য রয়েছে তাদের তো একই দিনে পবিত্র ঈদ ও রোযা শুরু করার কল্পনা করাটাই আহমকী। অর্থাৎ প্রত্যেক দেশে সূর্যাস্তের সাথে সাথে নতুন একটি তারিখ, দিন এবং বারের শুরু হয়ে যায়। যার কারণে কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করেও কেউই সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ উদযাপন করতে পারবে না।
কাজেই, তাদের উক্ত দাবিটি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী স্পষ্ট কুফরী কথা ও কাজ। যা কোন কালেও ঘটেনি, ভবিষ্যতেও ঘটবে না।
মূলতঃ একই দিনে পবিত্র রোযা ও ঈদ শুরুর দাবি করার উদ্দেশ্য হলো- সাহরী ও ইফতার সঠিক সময়ে না করিয়ে পবিত্র ঈদ ও রোযাকে নষ্ট করা ও মুসলমানদের পবিত্র ঈমান-আক্বীদা ধ্বংস করা নাউযুবিল্লাহ!
মধ্য প্রাচ্যের চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করার দাবিকারীরা এতই কান্ডজ্ঞানহীন যে, তারা পবিত্র রোযা শুরু করে সৌদি আরবের নতুন চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে, কিন্তু উক্ত রোযার সাহরী ও ইফতার করে তারা তাদের নিজস্ব স্থানীয় সময় অনুযায়ী। তাদের দাবি অনুযায়ী তারা সৌদি আরব বা মধ্য প্রাচ্যের নতুন চাঁদ দেখে রোযা রাখলে সাহরী ও ইফতারের ক্ষেত্রেও উক্ত মধ্য প্রাচ্যের বা সৌদি আরবের সময়েরই অনুসরণ করা উচিৎ ছিল। কিন্তু তারা একই রোযার ক্ষেত্রে কিছু মানে নিজের দেশের স্থানীয় সময়ের, আর কিছু মানে বিদেশী সময়ের। মূলতঃ ঐক্যের নামে এদের এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, বহুরূপী ইসলাম কায়েম করে সম্মানিত মুসলমানদের পবিত্র রোযা, পবিত্র ঈদসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী নষ্ট করা, পবিত্র ঈমান-আক্বীদাকে ধ্বংস করা এবং মুসলমানদেরকে শত শত দলে বিভক্ত করে ইহুদী-খৃষ্টানদের প্রাধান্যতা ও প্রভাবকে দুনিয়াতে জারী রাখা। নাউযুবিল্লাহ!
চলবে........
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)