সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৪)
, ১৭ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০২ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(সময়ের ভিন্নতার কারণে যদি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হয়, তাহলে অবশ্যই দিনের পার্থক্যের কারণেও ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে)
সারা বিশ্বের প্রত্যেক অঞ্চল ও প্রত্যেক দেশের স্থানীয় সময় ভিন্ন ভিন্ন তাই প্রত্যেক অঞ্চল ও দেশের লোকেরা তাদের স্থানীয় সময় অনুযায়ী নামায পড়ে থাকে, রোযা রেখে থাকে, ঈদসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী করে থাকে। বলাবাহুল্য যে, সময়ের ভিন্নতাকে গ্রহণ করে যদি সারা বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করা জায়িয হয়, তাহলে সময়ের ভিন্নতার কারণে সারা বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করা শত-সহস্রবার জায়িয। মূলতঃ সময়ের পার্থক্যের কারণেই দিনের পার্থক্য হয়। আর সময় ও দিনের পার্থক্য মূলতঃ ভৌগলিক দূরত্বের কারণেই ঘটে থাকে। এইগুলি একটা অন্যটার পরিপূরক।
একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, ভৌগলিক দূরত্বের কারণেই সময়ের পার্থক্য হওয়ার সাথে সাথে দিনের ও নতুন চাঁদ দেখারও পার্থক্য হয়। যার কারণে বলা হয় যে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে
اِخْتِلَافُ الْمَطَالِعِ مُعْتَبَرٌ
অর্থাৎ নতুন চাঁদ উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য বা নতুন চাঁদ উদয়ের ক্ষেত্রে দেখার ভিন্নতা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। সে কারণে অবশ্যই ভিন্ন দিনেই পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। নচেৎ ঈদ ও রোযা কোনটাই আদায় হবে না। বরং অসময়ে ঈদ ও রোযা পালন করা জায়িয মনে করার কারণে কুফরী হবে এবং অসময়ে পবিত্র ঈদ ও রোযা পালনকারীরা ফেৎনাবাজ ও মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে। এবং মুরতাদের অন্যান্য হুকুমও তাদের উপর বর্তাবে। কেননা, ফাসিকরা ফতওয়া দেয় নফসের তাড়নায়, শয়তানের ওয়াস্ওয়াসায় ও স্বার্থের কারণে আর মুনাফিকরা জেনে শুনে, ভাল করে বুঝেই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ করে এবং অপব্যাখ্যা করে মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট করতে অপচেষ্টা চালায়। এমন নয় যে, তারা ভুল করে বিভ্রান্তিমূলক ফতওয়া দেয়। পবিত্র দ্বীন ইসলামে যেখানে ফাসিকের ফতওয়া গ্রহণ করা হারাম, সেখানে কে ফাসিক? কে মুত্তাক্বী? কে বা কাফির-মুরতাদ? এগুলি যারা যাচাই বাছাই করবে না, তারা অবশ্যই ফাসিক ও মুনাফিকদের মনগড়া চটকদার কথা শুনে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হবেই।
নতুন চাঁদ দেখে পবিত্র রোযা শুরু ও ঈদ করার হুকুম:
নতুন চাঁদ দেখে পবিত্র রোযা শুরু করার ও পবিত্র ঈদ করার ইশারা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَسأَلونَكَ عَنِ الأَهِلَّةِ قُل هِيَ مَواقيتُ لِلنّاسِ وَالحَجِّ
অর্থ: আপনার নিকট তারা নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন যে, এটি মানুষের (অন্যান্য ইবাদত) এবং (বিশেষ করে) হজ্জের জন্য সময় নির্ধারণকারী। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৯)
পবিত্র রোযা শুরু করার শর্তারোপ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থ: সুতরাং তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উক্ত (পবিত্র রমাদ্বান শরীফ) মাস পাবে সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৫)
আর এই বিষয়ে ফিক্বহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
فَفِيهِ بَيَانُ السَّبَبِ الَّذِي جَعَلَهُ الشَّرْعُ مُوجِبًا وَهُوَ شُهُودُ الشَّهْرِ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার উপস্থিত হওয়াকেই পবিত্র রোযা শুরু করা ওয়াজিব হওয়ার কারণ বর্ণনা করেছেন। (আল মাবসূতু লি সারাখসী ৪/৭)
কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে-
معلوم أن المراد شهود بعض الشهر بالتكليف لأنه لو كان المراد شهود جميع-
অর্থ: জানা গেল যে, এখানে উপস্থিত হওয়ার শরয়ী উদ্দেশ্য হলো রমাদ্বান শরীফ মাস উনার কিছু অংশ, যদিও এর দ্বারা গোটা মাসই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। (শরহু মুখতাছারিত্ব ত্বহাবী লিল জাসসাস ২/৪৪৭)
অর্থাৎ পবিত্র রোযা শুরু করার প্রথম শর্তই হলো নতুন চাঁদ দেখা।
নতুন চাঁদ দেখে পবিত্র রোযা শুরু ও শেষ করার অর্থাৎ পবিত্র ঈদ করার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
أَنَّ حَضْرَتْ عَبْدَ اللَّهِ بْن عُمَرَ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَه-
অর্থ: হযরত আব্দুুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে একথা বলতে শুনেছি যে, তোমরা যখন (পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার) নতুন চাঁদ দেখবে, তখন পবিত্র রোযা রাখবে। আর যখন শাওওয়াল শরীফ মাস উনার নতুন চাঁদ দেখবে তখন রোযা শেষ করবে। আর আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলে মাসের ত্রিশতম দিন পূর্ণ করবে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, সুবুস সালাম, উমদাতুল আহকাম)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ فَإِنْ غُمِّيَ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعَدَدَ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, তোমরা (পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার) নতুন চাঁদ দেখে রোযা রাখো। এবং (পবিত্র শাওওয়াল মাস উনার) নতুন চাঁদ দেখে ইফতার (অর্থাৎ ঈদ) করো। আর তোমাদের নিকট আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলে মাসের ত্রিশতম দিন পূর্ণ করো। (মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ وَالفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ وَالأَضْحَى يَوْمَ تُضَحُّونَ
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, তোমরা পবিত্র রোযা রাখবে, যেদিন সকলে রোযা রাখবে। রোযা ভাঙ্গবে, যেদিন সবাই রোযা ভাঙ্গে। আর কুরবানী করবে, যেদিন সকলে কুরবানী করে। (তিরমিযী শরীফ, দারা কুত্বনী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াজী, আওনূল মা’বূদ)
উল্লেখ্য যে, পবিত্র রোযা শুরু করার প্রথম শর্তই হলো নতুন চাঁদ দেখা অর্থাৎ পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস পাওয়া। সেজন্যই যে সকল দূরবর্তী অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে যারা নতুন চাঁদ দেখেনি, তাদের নিকট পবিত্র রমাদ্বান শরীফ-ও উপস্থিত হয়নি, ফলে তাদের উপর তাৎক্ষনিক পবিত্র রোযা রাখা ফরয হবে না। বরং নতুন চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুসারে পবিত্র রোযা শুরু, শেষ ও ঈদ করা ফরয হবে। যেমন পবিত্র ছলাত বা নামাযসহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগী ফরয হয়।
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী, কটাক্ষকারী, অবমাননাকারীদেরকে শরঈ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৭)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ৩ শ্রেণী
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মালিকুত তামাম, ক্বাসিমুন নিআম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ফাতহ মুবারক উনার বরকত ও ফযীলত (৩)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (৭)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৬)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মী-কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখা জায়েজ নেই
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)