সারাদেশে চলছে ভুয়া প্রকল্প ও ভুয়া বিলের ছড়াছড়ি তথা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হাজার রকমের দুর্নীতি (৪৪৫)
, ২৬ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) বিশেষ প্রতিবেদন
রাজধানীর আগারগাঁও
নতুন অফিসপাড়ায় নতুন সিন্ডিকেট
দেশের সরকারি বেশিরভাগ দপ্তরের নতুন গন্তব্য রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার আগারগাঁও। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশাপাশি এই এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল। এসব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র করে উত্থান ঘটেছে নব্য এক সিন্ডিকেটের। বিভিন্ন সরকারি কাজের ঠিকাদারিতে একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে প্রায় দিনই চলছে মহড়া। মারধরের ঘটনা ঘটেছে প্রকৌশলীদের। এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন প্রকৌশলীরা। নিরাপত্তা চেয়ে বন্ধ রেখেছিলেন উন্নয়ন কাজও। হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন ও নিয়মিত কাজ, সরকারি জমিতে মার্কেট নির্মাণ, অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য, অবৈধ জায়গায় ফার্মেসি তৈরি করে বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে এই মাফিয়া সিন্ডিকেটের সদস্যরা। আর এসব কাজে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শেরেবাংলা নগর এলাকার ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিক হাসান কাজলের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগারগাঁওকেন্দ্রিক নতুন একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সরকারি সংস্থার উন্নয়ন কাজ এই সিন্ডিকেটের কব্জায় নিতে চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। কেউ কথা না শুনলে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। চালানো হয় নির্যাতন। অনেকেই নির্যাতনের শিকার হলেও ভয়ে মুখ ফুটে কিছু বলতে চান না। সর্বশেষ গত রোববার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। আর এ কাজে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা তারিক হাসান কাজল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কাজল নিজেও প্রকৌশলীদের মারধর করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কাজ ঠিকাদারদের মধ্যে বণ্টন নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছিলেন তারিক হাসান কাজল। প্রায়ই দলবল নিয়ে এসে হুমকি ধমকি দিতেন। তবে প্রকৌশলীরা বরাবরই ঠিকাদারি কাজের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়মের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। এতেই ক্ষুব্ধ হন তারিক হাসান কাজল। এই পরিপ্রেক্ষিতেই গত রোববার দলবল নিয়ে গিয়ে মুনিরুজ্জামানকে মারধর করেন তারিক হাসান কাজল এবং শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সাব্বির হোসেন মাসুদ। প্রতিবাদ করায় সহকারী প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেনকেও মারধর করা হয়। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয় নির্বাহী প্রকৌশলীকেও। ঘটনার পরপরই শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা।
কেবল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরই নয়, আগারগাঁও এলাকার প্রায় সব অফিস এবং হাসপাতালের উন্নয়ন কাজ ও নিয়ন্ত্রণে একচ্ছত্র আধিপত্য এই সিন্ডিকেটের।
সরকারি বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ অফিস এখন আগারগাঁওয়ে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), পাসপোর্ট অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), ডাক বিভাগের সদর দপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সিইজিআইএস, আইসিটি মন্ত্রণালয়, বিআইডিএসসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিস বর্তমানে আগারগাঁও এলাকায় অবস্থিত। তবে এসব অফিসের ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণের জন্যই বাহিনী গঠন করে ত্রাস সৃষ্টি করছেন কাজল।
এ ছাড়া আগারগাঁও এলাকায় রয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ,জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা শিশু হাসপাতাল। এসব হাসপাতাল কেন্দ্র করে অন্তত ১৫টি ফার্মেসি গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সরকারি জমিতে এসব ফার্মেসি তৈরি করলেও সব টাকা যায় তারিক হাসানের পকেটে। হাসপাতাল ঘিরে তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু ক্যান্টিনও। অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও এই সিন্ডিকেটের হাতে। সিরিয়াল তৈরি, পার্কিংসহ সবকিছুই দেখভাল করেন তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগারগাঁও এলাকার সরকারি জমিতে সৃষ্টি মেডিকেল কর্নার, তাজ ফার্মেসি, আজিম ফার্মেসি, তাজ ফার্মা, লাইফ ফার্মা, মাগুরা ফার্মা, খাজা আজমেরী, সাথী সার্জিক্যাল সেন্টার, অন্তরা ফার্মেসিসহ অনেক ফার্মেসি তৈরি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি জমিতে এসব ফার্মেসি তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন তারিক হাসান কাজল। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এসব ফার্মেসি থেকে ভাড়া তোলেন। যার একটা অংশ পৌঁছে দেওয়া হয় তারিক হাসানের কাছে। এ ছাড়া এসব হাসপাতালের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ, জরুরি পণ্য সরবরাহ, ফুটপাত বাণিজ্যসহ নানা কাজেই যুক্ত রয়েছে তারিক হাসান কাজলের সহযোগীরা। এ ছাড়া আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার মাধ্যমে কয়েকটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন সমান্তরাল প্রশামন। সেখানে ভর্তি থেকে শুরু করে বিছানা পাওয়া সবই এই সিন্ডিকেটের দখলে। কিছুদিন আগে শিশু হাসপাতালে এই সিন্ডিকেটের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় একজন রোগীর স্বজনকে পিটিয়ে মেরে চোর বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। যদিও পরে দেখা গেছে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রায় সব হাসপাতালের সামনে পার্কিং ব্যবসাও পরিচালনা করছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এটিআই কলেজের সীমানা প্রাচীর ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে ত্রিরতœ ক্যাফে।
স্থানীয়রা বলছেন, পুরো আগারগাঁও এলাকায় এই সিন্ডিকেটের কথার বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে যে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করতে গেলেও ভাগ দিতে হয় তাদের। বিশেষ করে সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ওসমান গণি সোহেল ওরফে কাল্লু সোহেল নির্যাতন করেন সাধারণ মানুষকেও। গণপূর্তের কলোনির মধ্যে তৈরি করেছেন টর্চার সেলও।
আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উল্টোপাশে বিশাল একটি মার্কেটের অবস্থান। স্থানীয়ভাবে যা পাকা মার্কেট নামে পরিচিত। প্রায় পাঁচশ দোকানের এ মার্কেটের বৈধতা নেই। গণপূর্ত অধিদপ্তরের জমিতে গড়ে ওঠা এ মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর হাতে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ মার্কেটে ছোট-বড় প্রায় পাঁচশ দোকান রয়েছে। জমজমাট এ মার্কেটের দোকানপ্রতি ভাড়া ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। তবে সরকারি জমিতে তৈরি হওয়া এসব দোকান ভাড়া কোনো সরকারি সংস্থা পায় না। সবকিছুরই ভাগবাটোয়ারা হয় স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাদের মধ্যে।
কেবল পাকা মার্কেটই নয়, পাশেই রয়েছে রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ফুলের মার্কেট। দেড় শতাধিক দোকান এখানে। দোকান ভাড়া আকারভেদে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতিটি দোকান নিতে অগ্রিম দিতে হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী যে তন্ত্রের উপর নির্ভর করে, যে প্রশাসনের উপর নির্ভর করে, যে আর্থ-সামাজিক আবহের উপর নির্ভর করে দুর্নীতি বন্ধ করতে চায় তাতে রয়েছে গলদ, অপূর্ণতা ও ভ্রান্তি।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যমীনে এবং পানিতে যা ফিতনা-ফাসাদ রয়েছে সবই মানুষের হাতের কামাই।” অপরদিকে সবকিছুর সমাধান সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই এই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আমি সবকিছু বর্ণনা করেছি।”
অর্থাৎ কেবলমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যস্থিত হুকুম-আহকাম মুতাবিক চললেই দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল সম্পূর্ণ সম্ভব। কিন্তু দেশের সরকার তা কবে বুঝবে? জনগণই বা কবে উপলব্ধি করবে? (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ভারতীয় পানি আগ্রাসন, ফারাক্কা ও তিস্তা ব্যারেজ : বাংলাদেশের মরণ ফাঁদ (২)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৫)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৪)
০৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৩)
০৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৩)
০৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (২)
০৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (১)
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৬)
০১ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৫)
৩১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৪)
৩০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৩)
২৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-২)
২৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)