সারাদেশে চলছে ভুয়া প্রকল্প ও ভুয়া বিলের ছড়াছড়ি তথা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হাজার রকমের দুর্নীতি (৪৩২)
, ০৮ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০২ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) বিশেষ প্রতিবেদন
দেশে ও জনগণের টাকা প্রকল্পের নামে হয় চুরি। পুকুর চুরি নয়; সাগর চুরি। কিন্তু জনগণ থাকে অন্ধকারে। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়েই দুর্নীতি বন্ধ নেই। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা সবক্ষেত্রেই শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। দেশ ও জনগণের সচেতনতার জন্য ধারাবাহিকভাবে এখানে উল্লেখ করা হলো:
ব্যবসা পরিবেশ উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি : সিপিডি জরিপ
বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে গত পঞ্জিকা বছরে (২০২২ সাল) বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের অগ্রগতি হয়নি। আগের বছরের তুলনায় এটি হয়তো স্থবির ছিল বা আরও খারাপ হয়েছে। তবে অন্যান্য কাঠামোগত এবং নতুন নতুন সমস্যার ফলে দুর্নীতির তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসা পরিবেশ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কর্তৃক পরিচালিত এক জরীপে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার সংস্থার ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ বিজনেস এনভায়নমেন্ট স্টাডি ২০২২ : ফাইন্ডিং ফ্রম দ্য এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিং-এ বলা হয়।
জরীপের ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, জরীপে অংশগ্রহণকারী ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ উদ্যোক্তা মনে করেন যে, দেশের ব্যবসায় প্রধান বাধা হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি। এ প্রসঙ্গে যেসব খাতগুলো এসেছেÑ এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন কর প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি; ৫৪ শতাংশ বলছেন লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি; গ্যাস ও বিদ্যুৎ নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা বলছেন ৪৯ শতাংশ এবং আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা বলছেন ৭৫ শতাংশ ব্যবসায়ী।
দুর্নীতির কারণে শুধু উৎপাদন খরচ নয়, সেবার মূল্যও অনেকখানি বেড়ে যায়। এই মূল্যের ঘানিটা সাধারণ মানুষেরই ওপর পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি হলে শুধু ব্যবসার পরিবেশ নয়, অর্থনৈতিক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্নীতি ছাড়াও ব্যবসার অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলোর বিষয়ে বলা হয়, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, ব্যাংক থেকে ঋণ প্রাপ্তির চ্যালেঞ্জ, দুর্বল আমলাতন্ত্র, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার উত্থান-পতন ও নীতিগত সমস্যা ইত্যাদিও ব্যবসার জন্য প্রতিবন্ধক।
শেষ মুহুর্তে সওজ এ মহা-লুটপাটে ব্যস্ত রফিক-ফজলু সিন্ডিকেট
যান্ত্রিক শাখার একজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করলেও মুল হোতা রফিক-ফজলু সিন্ডিকেট রয়েছে ধরাছোয়ার বাহিরে। তাদের বিরুদ্ধে ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ থাকলেও দুদক কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করছেনা। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমান করতে হলে তাদের কর্মকালীন সময়ের সমস্ত নথি পত্র দুদক কর্তৃক অনুসন্ধান চালাতে হবে। তাহলেই তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
দীর্ঘদিন যাবৎ যান্ত্রিক শাখায় একটি বিশেষ সিন্ডিকেট সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। আর এ নিয়ন্ত্রনের নেপথ্যে রয়েছে সাবেক একজন কর্মকর্তা তিনি হলেন ফজলুল হক। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা ফজলুল হকের কারনে সাধারন কোনো ঠিকাদার ও নির্বাহী প্রকৌশলীরা সঠিকভাবে নিয়মিত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ফজলুল হক যান্ত্রিক শাখার সমস্ত কার্যক্রমের ক্যাশিয়ার। বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের ডান হাত হিসেবে খ্যাত এ ফজলুল হক। প্রকৌশলী স্বপন মৃধা, শামীমুল হক, ও ফজলু সিন্ডিকেটের হোতা। ভুয়া টেন্ডার, ঘুপচি টেন্ডার, টেকনিক্যাল স্প্যাসিফিকেশন নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়াই এ সিন্ডিকেটের মূল কাজ।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে ঘিরে এ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এরা প্রত্যেকেই অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন গনমাধ্যমে রফিক-ফজলু সিন্ডিকেটের নিয়ে প্রচুর সংবাদ প্রকাশের পরেও অদৃশ্য কারনে মন্ত্রণালয়ে ও দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যকর তেমন কোনো ভূমিকা এদের বিরুদ্ধে নিতে দেখা যায়নি। যদিও রফিকুল ইসলামের একটি তদন্ত মন্ত্রণালয়ে চলমান রয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে রফিকুল ইসলামের কার্যকাল মেয়াদ শেষ হবে। সর্বশেষ তিনি রয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌড়ে। এ ব্যাপারে তিনি জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। যান্ত্রিক শাখার সংরক্ষন ডিভিশন নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হকের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ নির্বাহী আদেশে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিব এ.বি.এম আমিন উল্লাহ নুরী’র কঠোর মনোভাবের কারনে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তার পরেও থেমে নেই এখানকার বিভিন্ন শাখার অনিয়ম ও দুর্নীতি।
মিথ্যা ঘোষণার আমদানিতে সর্বনাশ
মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে খাদ্যপণ্য ও ওষুধের কাঁচামাল আমদানির আড়ালে আনা হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট। এতে বিদেশে চলে যাচ্ছে মার্কিন ডলার, যা চলমান ডলার সংকট আরও ঘনীভূত করছে। এতে করে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি এনবিআরের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সিগারেট। কম নিকোটিনের দোহাই দিয়ে এসব বিদেশি সিগারেট বাজারে ছাড়া হচ্ছে দেদার। এদিকে রাজস্ব ক্ষতির সঙ্গে জনস্বাস্থ্যও চরম হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা মহামারির পর বিদেশি সিগারেট আমদানি কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানা গেছে। অর্থ বিভাগের এক মূল্যায়নপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ জন্য এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগকে আরও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পৃথক পত্র ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা অবৈধ বিদেশি সিগারেট। শহরের অলিগলি থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেদার বিক্রি হচ্ছে এসব সিগারেট। কম মূল্য, আকর্ষণীয় মোড়ক, ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভার ও সহজলভ্য হওয়ায় তরুণ প্রজন্মের ধূমপায়ীরা ঝুঁকছেন এসব সিগারেটে। এতে একদিকে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অন্যদিকে মিথ্যা ঘোষণায় দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
এনবিআরের এক প্রতিবেদনের তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, চট্টগ্রাম সমুদ্র ও বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে শক্তিশালী চক্র মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিদেশি সিগারেট দেশে নিয়ে আসছে। চোরাকারবারিরা ফ্ল্যাট, বাসা ভাড়া নিয়ে মজুদ করছে এসব সিগারেট। পরে বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে তা সারা দেশের পাইকারি, মাঝারি ও ক্ষুদ্র দোকানিদের কাছে বিক্রি করছে।
প্রধানমন্ত্রী যে তন্ত্রের উপর নির্ভর করে, যে প্রশাসনের উপর নির্ভর করে, যে আর্থ-সামাজিক আবহের উপর নির্ভর করে দুর্নীতি বন্ধ করতে চান তাতে রয়েছে গলদ, অপূর্ণতা ও ভ্রান্তি।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যমীনে এবং পানিতে যা ফিতনা-ফাসাদ রয়েছে সবই মানুষের হাতের কামাই।” অপরদিকে সবকিছুর সমাধান সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই এই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আমি সবকিছু বর্ণনা করেছি।”
অর্থাৎ কেবলমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যস্থিত হুকুম-আহকাম মুতাবিক চললেই দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল সম্পূর্ণ সম্ভব। কিন্তু দেশের সরকার তা কবে বুঝবে? জনগণই বা কবে উপলব্ধি করবে? (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ভারতীয় পানি আগ্রাসন, ফারাক্কা ও তিস্তা ব্যারেজ : বাংলাদেশের মরণ ফাঁদ (২)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৫)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৪)
০৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৩)
০৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (৩)
০৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (২)
০৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ঘাদানি কমিটির শাহরিয়ার কবিরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার (১)
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৬)
০১ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৫)
৩১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৪)
৩০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-৩)
২৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-২)
২৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)