সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (১০)
, ০৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৫ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২৫ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শিক্ষকতা:
শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখযূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাদরাসায়ে নিযামিয়া-এর অন্যতম সুযোগ্য মুয়াল্লিম বা অধ্যাপক ছিলেন। সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছাত্র অবস্থায় উনার সেই মাদরাসায়ে নিযামিয়া উনার শিক্ষার্থী হিসেবে যোগদান করলেন। তিনি উনাকে অত্যন্ত ¯েœহ ও যতœ করতেন এবং উনার তা’লীম-তরবিয়ত বা শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি বিশেষ নজর রাখতেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন বাগদাদ শরীফ-উনার একজন শ্রেষ্ঠ আলিম, খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ এবং অত্যন্ত কামিল বুযূর্গ। পরবর্তীতে তিনি নিজে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে নিজেই তাতে শিক্ষা দান করতেন।
ছাত্র অবস্থায় সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তীক্ষè ধীশক্তি, অপরিসীম যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, কর্তব্যপরায়ণতা, দৃঢ়তা এবং অদম্য আগ্রহ-উদ্দীপনার পরিচয় পেয়ে তিনি নিজের এই সুযোগ্য ছাত্রটির প্রতি অত্যন্ত সুধারণা এবং উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করে আসছিলেন যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অত্যন্ত নৈকট্যপ্রাপ্ত হবেন। উনারই মাধ্যমে ইলম উনার সিলসিলা ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। এবার সেই ছাত্রই যখন বাগদাদ শরীফ উনার বাহির থেকে অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে ফিরে আসলেন, তখন তিনি উনার হাতে স্বীয় মাদরাসার শিক্ষকতা ও পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্বভার আগ্রহের সাথে তুলে দিলেন। সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এ জাতীয় একটি কাজের জন্য অতীব আগ্রহান্বিত ছিলেন। কারণ শিক্ষকতা বা শিক্ষাদান, যেটা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত। উপরন্তু তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
ان الله وملئكته واهل السماوات والارض حتى نملة فى حجرها حتى حوت فى جوفها يصلون على معلم الناس الخير.
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, আসমানবাসী, যমীনবাসী এমনকি গর্তের পিপীলিকা এবং সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত সবাই শিক্ষাদানকারীর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করেন।”
অতএব, তিনি তৎকালীন মৃতপ্রায় দ্বীন ইসলাম উনার কিছু খিদমত করার সুযোগ পেয়ে খুবই খুশি হলেন। এ মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমেই উনার কর্মময় মুবারক জীবন শুরু হলো।
উস্তাদ প্রদত্ত মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত হয়ে তিনি গভীর মনোযোগ ও অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই উনার শিক্ষকতা এবং পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে লাগলেন। তৎকালীন সময়ে উনার ইলিম-হিকমত, তাক্বওয়া-পরহেযগারিতা এবং কর্মদক্ষতার সাথে তুলনা করার মতো আর কেউ ছিল না। তাই একাধারে যেমন মাদরাসার শিক্ষার্থীবৃন্দ উনার মতো অতুলনীয় শিক্ষক লাভ করে ধন্য হয়েছিল। তেমনি বাগদাদবাসীগণ দীর্ঘদিন পরে তাদের প্রাণের লোক উনাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়লেন।
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জ্ঞান লাভ কেবল মাদরাসায় অধ্যয়নের ভিতরই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং উনার ইলিম ও পবিত্র হিকমত বিকশিত হয়েছিল আলোক রশ্মির মূল উৎস স্থল থেকে। যেখানে সকল জ্ঞান ও সত্যের উৎস মুখ, সেখান থেকেই উনার হৃদয়ে ইলিম ও হিকমতের অমিয়ধারা প্রবাহিত হয়েছিল। মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের থেকে তিনি খাছভাবে তা’লীম-তরবিয়ত পেয়েছেন তথা ইলমে লাদুন্নী পেয়েছেন। ফলে উনার শিক্ষাদান পদ্ধতি যে ছাত্র মহলে কত ব্যাপক ও গভীরভাবে সাড়া জাগিয়েছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি প্রাচীন শিক্ষানীতিকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে তা এক নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উনার সুনাম-স্খ্যুাতি বিভিন্ন দেশে ¯্রােতধারার ন্যায় ছড়িয়ে পড়লো। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জ্ঞানান্বেষী, শিক্ষার্থীগণ এবং আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফাত তালাশীগণ দলে দলে উনার মাদরাসায়, উনার ছোহবতে এসে হাজির হলেন। সকলে উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার নিকট পবিত্র ইলিম ও হিকমত তালাশ করাকে পরম গৌরবের বিষয় বলে মনে করছিল।
ছাত্রজীবনে সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে তেরটি বিষয়ে গভীর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন, সেই তেরটি বিষয়েরই তিনি অধ্যাপনা করতেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ, উছূল, সাহিত্য, ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণ এবং মুয়ামিলাত-মুয়াশিরাত বা লেনদেন, জীবন-যাপন পদ্ধতি শিক্ষাদান করতেন। আবার যোহরের পর থেকে ইশা পর্যন্ত তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনুবাদ, তাওহীদ (একত্ববাদ), বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়িল এবং অন্যান্য জরুরী বিষয়সমূহ শিক্ষা দিতেন। এমনিভাবে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে তা’লীম-তরবিয়ত দানের মাধ্যমে আদর্শ মানুষ, আদর্শ আলিম হিসেবে গড়ে তুলতে লাগলেন।
-সঙ্কলিত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)