ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
ইসলামী আক্বীদার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম (৪)
, ০৯ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কাজেই প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সময়কে গনিমত মনে করে, ঈমানদার থাকার জন্য কোশেশ করতে হবে। আর আক্বীদা বিশুদ্ধ রাখার জন্য কোশেশ করতে হবে। তাহলে তার জন্য কামিয়াবী। এজন্য বলা হয়েছে, ঈমান কি জিনিস?
وَالْإِقْرَارُ بِاللِّسَانِ وَالْعَمَلُ بِالْأَرْكَانِ اَلْاِيْمَانُ: اَلتَّصْدِيْقُ بِالْجَنَانِ بِمَا جَاءَ بِهِ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ عِنْدِ اللهِ
ঈমান হচ্ছে-
اَلتَّصْدِيْقُ بِالْجَنَانِ ‘অন্তরে বিশ্বাস করা”
اَلْإِقْرَارُ بِاللِّسَانِ ‘মুখে স্বীকার করা”
اَلْعَمَلُ بِالْأَرْكَانِ ‘আমলে বাস্তবায়িত করা।’
কিসের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে?
بِمَا جَاءَ بِهِ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ عِنْدِ اللهِ
আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তিনি যা কিছু বলেছেন, আদেশ-নির্দেশ করেছেন, হুকুম দিয়েছেন, নিষেধ করেছেন, সবগুলো যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা হচ্ছে ঈমানদার হওয়ার কারণ।’
আমাদের হানাফী মাযহাবে- اَلتَّصْدِيْقُ بِالْجَنَانِ ‘অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করলে সে ঈমানদার হয়ে যায়।
আর اَلْإِقْرَارُ بِاللِّسَانِ ‘মুখে স্বীকার করা।’ এটা একটা শর্ত দেয়া হয়েছে।
যদি কোন ব্যক্তি অন্তরে স্বীকার করল, কিন্তু মুখে কারো কাছে সে প্রকাশ করল না, তাহলে দুনিয়াবী যে ফায়দা সেটা সে পাবে না। দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করার জন্য তাকে মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাহলে সে দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করতে পারবে।
যদি খিলাফত কায়িম থাকে বা মুসলমানদের জন্য বিশেষ কিছু করা হয় তাহলে সেটার মধ্যে সে শরীক হবে।
আর অন্যান্য মাযহাবে যেটা বলা হয়েছে তা হলো- ‘অন্তরে বিশ্বাস করতে হবে, মুখে স্বীকার করতে হবে, সাথে সাথে সেটা আমলেও বাস্তবায়িত করতে হবে। ‘কিন্তু আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক- আমলে বাস্তবায়িত করা সেটা হচ্ছে ঈমানে কামিল হওয়ার জন্য শর্ত, ঈমানদার হওয়ার জন্য শর্ত নয়।’
বর্ণিত রয়েছে- اَلْاِيْمَانُ لَايَزِيْدُ وَلَايَنْقُصُ
‘ঈমান বাড়েও না, কমেও না।’ কিন্তু ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে। আমাদের হানাফী মাযহাবে, মাতুরুদি আক্বীদা সেটা হচ্ছে- ঈমান বাড়েও না এবং কমেও না। ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে এবং কমে। আর শাফিয়ী মাযহাব, আশায়েরা আক্বাইদ মুতাবিক- ঈমান বাড়ে এবং কমে। কিন্তু হাক্বীক্বতান আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, ঈমান বাড়েও না, কমেও না।
এটার মেছাল হচ্ছে- যেমন, একজন মানুষ সে সুস্থ, শক্তিশালী লোক, তার রূহ যতটুকু রয়েছে, একটা হাসপাতালের স্যালাইনের রোগী তার রূহটাও সমান। রূহের মধ্যে বাড়তি-কমতি নেই। কিন্তু একজনের শক্তি বেশি, আরেকজনের শক্তি কম। এখন তাকে খাওয়ালে, সুস্থ করলে স্যালাইনের রোগী সেও শক্তিশালী হতে পারবে। অর্থাৎ কুওওয়াত বাড়তে পারে কিন্তু তার রূহ বাড়বে না।
আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক ঈমান যার যা রয়েছে ঠিক তাই থাকবে। কিন্তু ঈমানের কুওওয়াত বাড়বে, ঈমানের শক্তি বাড়বে। কিন্তু ঈমান বৃদ্ধি হবে না। অন্যান্য মাযহাবে- উনারা বলেছেন উনাদের ফতওয়া মুতাবিক- ঈমান বৃদ্ধিও পেয়ে থাকে এবং কমেও থাকে। কিন্তু আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক ঈমান বাড়েও না কমেও না। কিন্তু ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে এবং কমে। যার জন্য দেখা যায়, এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ শরীফও রয়েছে-
مَنْ رَأٰى مِنْكُمْ مُّنْكَراً فَلْيُغَيِّرْهُ بيَدِهٖ
‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যদি কোন কাজ দেখ শরীয়তের খিলাফ তাহলে বাধা দিও হাত দিয়ে।’
فَإنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهٖ
‘যদি হাতে বাধা দিতে না পার, তাহলে যবানে বাধা দিও।’
فَإنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ فَبقَلْبِهٖ وَذٰلِكَ أضْعَفُ الإيْمَانِ
‘যদি যবানে বাধা দিতে না পার, তাহলে সেটা অন্তরে খারাপ জেনে সেখান থেকে সরে যেও, সেটা দুর্বল ঈমানের পরিচয়।’
অর্থাৎ, ঈমানী কুওওয়াত যদি কারো থাকে তাহলে হাতে বাধা দিতে পারবে, প্রথম স্তর। দ্বিতীয় স্তরের কুওওয়াত হচ্ছে যবানে বাধা দিবে। আর তৃতীয় স্তর হচ্ছে দুর্বল ঈমানের পরিচয়। সেটা হচ্ছে, সে অন্তরে খারাপ জেনে সেখান থেকে সরে যাবে। বাধা দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। ঈমান তার ঠিকই রয়েছে, সে ঈমানদার, মুসলমান, কুওওয়াত তার কম রয়েছে।
এজন্য যাদের ঈমানী কুওওয়াত বেশি থাকে তাদের পক্ষে নেক কাজ করা বেশি সম্ভব। আর যাদের ঈমানী কুওওয়াত কম থেকে থাকে তারা অনেক সময় লোক লজ্জায়, লোক ভয়ে, নামাযের জামায়াতে কি করে পড়ব, ভয় করে, লজ্জা করে।
টুপি মাথায় দিয়ে কি করে হাঁটব, মানুষ দেখলে কি বলবে। দাড়িটা কি করে রাখব, মানুষ কি বলবে, এ নানা রকম চু-চেরা একমাত্র ঈমানী কুওওয়াতের অভাবে হয়ে থাকে। ঈমান তার ঠিকই রয়েছে। কিন্তু ঈমানী কুওওয়াত তার কম রয়েছে। যারজন্য এই সমস্ত আমলগুলো করতে লজ্জা বোধ করে থাকে, ভয় পেয়ে থাকে। সে চু-চেরা কিল-কাল করে থাকে। কাজেই, ঈমান প্রত্যেকের যা রয়েছে তাই থাকবে। কিন্তু কুওওয়াত বাড়বে এবং কমবে।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন দেখ, প্রত্যেক মানুষের সাথে একটা জিন এবং একটা ফেরেশ্তা রয়েছে, ফেরেশ্তা মানুষকে নেক কাজে ধাবিত করে আর জিনটা মানুষকে পাপ কাজের দিকে ধাবিত করে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সাথেও কি একজন ফেরেশ্তা, একজন জিন শয়তান রয়েছে?
আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার সাথে ফেরেশ্তা এবং জিন রয়েছে। তবে জিনটাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদার করে দিয়েছেন সুবহানাল্লাহ! সে কুফরী অবস্থায় নেই, ঈমানদার অবস্থায় আমার সাথে রয়েছে।
কাজেই, সে নেক কাজই করবে এবং নেক কথাই বলবে। খারাপ কাজ করবে না এবং খারাপ কথা বলবে না। কাজেই মানুষ পাপ কাজে ধাবিত হয় কখন, যখন জিনটা তাকে ওয়াস্ওয়াসা দেয়, নফসের মধ্যে এসে জিন ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে, তখন পাপ কাজে সে সহজে চলে যায়।
আর যখন তার সাথে থাকা ফেরেশ্তা তাকে উৎসাহিত করতে থাকে নেক কাজে, তখন সে নেক কাজে ধাবিত হয়। এজন্য যে নেক কাজ বেশি করে, আস্তে আস্তে ফেরেশ্তা শক্তিশালী হয়ে যায়। তার জিন শয়তানটা দুর্বল হয়ে যায়। তার পক্ষে নেক কাজ করা সম্ভব হয়। আর যখন সে পাপ কাজ বেশি করতে থাকে তখন শয়তান শক্তিশালী হয়ে যায়। ফেরেশ্তা দুর্বল হয়ে যায়। তারপক্ষে নেক কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)