ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
ইসলামী আক্বীদার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম (৩)
, ০৯ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
شَبَابَك قَبْلَ هَرَمِكَ ‘যৌবনকালকে গণিমত মনে করো বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে।’
কারণ বৃদ্ধ হয়ে গেলে অনেক আমল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করা সম্ভব হয়না। মা’জুর হয়ে যায়, মানুষ দুর্বল হয়ে যায়। এখন সে তাহাজ্জুদ নামায পড়বে, দুর্বল হয়ে যাবে, কাতর হয়ে যাবে, শীতে-গরমে তার তাহাজ্জুদ আদায় করা সম্ভব হলো না। অন্যান্য অনেক আমল রয়েছে যেটা দুর্বলতার কারণে অনেক সময় সম্ভব হয় না। কাজেই যৌবনকালকে গণিমত মনে করতে হবে। এ সময়টাকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
এরপর বলা হয়েছে, صِحَّتَكَ قَبْلَ سُقْمِكَ ‘সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার পূর্বে গণিমত মনে করো।’
রোগ-শোক হওয়ার পূর্বে, বীমার হওয়ার পূর্বে যে সুস্থতা রয়েছে সেটাকে গণিমত মনে করো। অসুখ হয়ে গেলে, মানুষের রোগ হয়ে গেলে অনেক কিছুই সে করতে পারেনা। কাজেই সুস্থতাকে যেন গণিমত মনে করে।
হাদীছ শরীফে রয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি যদি সুস্থ অবস্থায় যে অনেক আমল করে থাকে, যখন সে অসুস্থ হয়ে যাবে, বিমারী হয়ে যাবে, তখন যে সমস্ত আমল সে করতে পারবে না, সুস্থ অবস্থায় সে করেছিল, মহান আল্লাহ পাক তিনি সে সমস্ত আমল তার আমলনামায় দিয়ে দিবেন।’ সুবহানাল্লাহ! যেহেতু সে মা’জুর।
কাজেই সুস্থতাকে গণিমত করতে হবে।
غِنَاك قَبْلَ فَقْرِكَ ‘অভাবের পূর্বে যে স্বচ্ছলতা রয়েছে তা গণিমত মনে করতে হবে।’
মানুষ যখন স্বচ্ছল থাকে তখন তার নেক কাজ করা উচিত বেশি বেশি। দান-খয়রাত হোক এবং এ ধরনের যা কিছু রয়েছে বেশি বেশি করা উচিত। অভাব যখন আসে বা মানুষের সঙ্কীর্ণতা আসে রিযিকের তখন তার পক্ষে হয়তো অনেক কাজ করা সম্ভব হয় না। কাজেই স্বচ্ছলতাকে গণিমত মনে করতে হবে।
فَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ ‘ব্যস্ততার পূর্বে অবসর মুহূর্তকে গণিমত মনে করতে হবে।’ যে সময়টা মানুষ অবসর পায় সেই সময়টাকে গণিমত মনে করে মূল্যবান কাজে তা ব্যয় করা উচিত। তাহলে প্রত্যেকটার একই হুকুম রয়েছে। যে কেউ যদি স্বচ্ছল অবস্থায় বেশি বেশি দান-খয়রাত করে, সুস্থ অবস্থায় বেশি বেশি মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দির কোশেশ করে, অবসর সময় বেশি বেশি রিযামন্দির কোশেশ করে, সে ব্যক্তি যদি ব্যস্ত হয়ে যায়, অসুস্থ হয়ে যায়, অভাবগ্রস্ত হয়ে যায়, ঠিক তার স্বচ্ছলতার সময়, সুস্থতার সময়, অবসর সময় যে নেকীগুলো করেছিল, তার নিয়ত যেগুলো ছিল তার অসুস্থতার কারণে, অভাবের কারণে, ব্যস্ততার কারণে সে পারতেছে না; মহান আল্লাহ পাক তিনি সেগুলোর ছওয়াব বা নেকী তার আমলনামায় দিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
যে- نِيَّةُ الْمُؤْمِنِ خَيْرٌ مِّنْ عَمَلِهٖ ‘মু’মিনের নিয়ত তার আমল থেকে উত্তম।’ সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, এটা গণিমত মনে করো এবং সর্বশেষ যেটা বলেছেন, حَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ‘তোমার সম্পূর্ণ হায়াতকে (বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, আশি, নব্বই, একশ বৎসর যা হায়াত পেলে সেটাকে) গনিমত মনে করো।’ সম্পূর্ণ হায়াতটাকে। যেহেতু যে ইন্তিকাল করেছে সে যদিও অনেক সুস্থ ছিল, স্বাস্থ্য ছিল, বয়স কম ছিল, তারপরও সে ইন্তিকাল করেছে। তারপক্ষে আমল করা সম্ভব নয়। এখন যে বেঁচে আছে সে যদি দুর্বল হয়, অনেক বয়সও হয়ে থাকে, তারপরও সে হায়াতে রয়েছে। ইচ্ছে করলে সে যত প্রকার অসুস্থ থাকুক না কেন, শুয়ে শুয়ে যিকির-ফিকির ইত্যাদি সে করতে পারে, নামায-কালাম সে পড়তে পারে। সেটারও অনেক বদলা রয়েছে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য, রিযামন্দির জন্য সে কোশেশ করতে পারে। কাজেই, সম্পূর্ণ হায়াতটাকে গণিমত মনে করতে হবে। সম্পূর্ণ হায়াতকে গণিমত মনে করতে হবে। কাজেই শেষ অবস্থায় যদি কারো আমলে ত্রুটি এসে যায়, তাহলে তার জন্য ক্ষতি ছাড়া কিছু থাকবে না।
সেজন্য বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ হায়াতটাকে গণিমত মনে করো। বিশেষ করে যৌবন কালটাকে। এজন্য বলা হয়েছে,
در جوانی توبہ کردن شیوائے پیغمبری
‘দর জাওয়ানি তওবা করদান শেওয়ায়ে পয়গম্বরী’
যৌবনকালে তওবা করা হচ্ছে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাছলত। অর্থাৎ, এর অর্থ এটা যেন কেউ না বুঝে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ যৌবনকালে তওবা করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
নবীগণ নবী- اَلنَّبِىُّ نَبِيًّا وَلَوْ كَانَ صَبِيًّا ‘নবীগণ জন্ম বা বিলাদত শরীফ থেকে নবী হয়ে এসেছেন।’ কাজেই, উনাদের এখানে আলোচনা আসেনা, তারপরও বলার বিষয় হচ্ছে, নবীগণ তওবা করা অর্থ হচ্ছে, নুবুওওয়াতী খাছলত মুবারক এটা। যৌবন বয়সে তওবা করা হচ্ছে নুবুওওয়াতী খাছলত মুবারক।
وقت پیر گرگے ظالم ہر شود پرہزگاری
‘ওয়াক্তে পীরে গোরগে যালেম হার শাওয়াদ পরহেযগারী’
‘বৃদ্ধ বয়সে সে জালিম বাঘ ও সিংহ- পরহিযগার হয়ে যায়।’ অর্থাৎ সে তো শিকার ধরতে পারে না, তখন সে বলে, আমি এগুলি আর শিকার করি না। আমি কোন পশু মারি না ইত্যাদি ইত্যাদি। সে তখন পরহিযগার হয়ে যায়। অপারগ হয়ে। কাজেই এটা বুঝানো হয়েছে, মানুষ যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবে, অক্ষম হয়ে যাবে, অপারগ হয়ে যাবে। হয়তো অনেক কাজ তার ইচ্ছা থাকা সত্বেও সে করতে পারবে না। ভিতরে হয়তো তার পাপ কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে, সে পাপ করতে পারতেছে না। অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার পরহিযগারী। সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।
কাজেই, সক্ষম থাকা অবস্থায় তওবা- ইস্তিগ্ফার করা সেটা হচ্ছে বেশি ফযীলতের কারণ। হ্যাঁ, এরপর বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর যদি কেউ ইস্তিগ্ফার করে খালিছ, সেটা গ্রহণযোগ্য। মৃত্যুর পূর্বেও ইস্তিগ্ফার করলে, মৃত্যুর গড়গড়া উঠার পূর্বে কেউ যদি ইস্তিগ্ফার করে, সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে। তবে শর্ত হচ্ছে, অন্তর থেকে ইস্তিগ্ফার করতে হবে। কাজেই, প্রতিটি সময়কে গণিমত মনে করতে হবে। এক সেকেন্ডকেও গণিমতের বাইরে মনে করা যাবে না। সেটা জন্মের শুরুতে হোক, আর জন্মের শেষ অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বেই হোক না কেন, সেটাকে গণিমত মনে করতে হবে। একটা সেকেন্ড একটা মানুষকে ঈমানদার করে দিতে পারে, আবার তাকে ঈমানহারাও করে দিতে পারে।
যেমন, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যখন মৃত্যুর সময় এসে গেল। ইবলিস এসে উনাকে ধোঁকা দিল- হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, আপনিতো সারা জীবন মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রিযামন্দির উদ্দেশ্যে আপনার যিন্দিগীটা কাটিয়ে দিয়েছেন এবং সেই মকছূদ আপনার পুরা হয়েছে। এখন কোন চিন্তার কারণ নেই। যখন ইবলিস এ কথা বললো তখন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ‘হে ইবলিস! তুমি কি আমাকে শেষ মুহূর্তে ধোঁকা দিয়ে আমার ঈমানটা নিয়ে যেতে চাও। আমার সম্পূর্ণ জিন্দিগী আমি নেক কাজে অতিবাহিত করেছি, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জনে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জনে আমি ব্যয় করেছি সত্যিই। মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমার প্রতি রহমত করেন, দয়া করেন, অবশ্যই আমি কামিয়াবী হাছিল করবো এবং করেছি। তবে শেষ মুহূর্তে তোমার কথায় যদি আমি গাফিল হয়ে যাই, তবে তুমি আমার ঈমানটা নিয়ে যাবে। কাজেই, ঈমান নিয়ে ইন্তিকাল করার পর আমি ইতমিনান হবো এর পূর্বে ইতমিনান হবো না।’ যখন তিনি সুস্থ হলেন তখন এ কথাটা বললেন, উনার যারা মুরীদ-মু’তাক্বিদ ছিলেন তাদের কাছে। এরপর তিনি ঈমান নিয়ে যমীন থেকে বিদায় নিলেন এবং কামিয়াবী হাছিল করলেন।
কাজেই মানুষের জন্য একটা সেকেন্ড তার ঈমান আনার জন্য যথেষ্ট। আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন ঈমানহারা হয়ে যাওয়ার জন্যও যথেষ্ট। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খেলাধুলা নাজায়িয ও হারাম হওয়া সম্পর্কে সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মানুষকে আমলের প্রতি নিরুৎসাহিত করতেই পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে মওজু-জয়ীফ ইত্যাদি অপপ্রচার করছে বাতিল ফিরক্বারা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩০)
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মাজার শরীফে হামলাকারী বেয়াদব ও লানতপ্রাপ্ত
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে -৪
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৬)
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)