ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম- (২)
, ০৭ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।’
إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
এবং ‘তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।’ প্রথমে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানের কথা বলেছেন। আমলের কথা বলেননি। যেহেতু ঈমান ব্যতীত আমলগুলো আমলে ছালেহ হয়না। সেটা ভালো কাজ হতে পারে কিন্তু আমলে ছালেহ বলতে যা বুঝানো হয়েছে সেটা হয়না। এইজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু প্রত্যেক মানুষকে যমীনে পাঠানোর সময়ই নির্দিষ্ট সময় ও সম্পদ দিয়ে পাঠিয়েছেন যা পবিত্র কুরআন শরীফে ঘোষণা করা হয়েছে। যখন আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে পাঠান তখনই বলে দিয়েছেন-
وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَّمَتَاعٌ إِلَى حِيْنٍ
“হে হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম! আপনি জেনে রাখুন, আপনার জন্য, আপনার আওলাদদের জন্য নির্দিষ্ট সময় এবং সম্পদ দিয়ে দেয়া হলো।’ এ সময় এবং সম্পদ ভোগ করে যথা সময়ে আমার কাছে চলে আসতে হবে। এখন সম্পদ দেয়া হলো, সময় দেয়া হলো, সেটা ভোগ করে চলে আসতে হবে। সেটা ভোগ করে কি করবে? কেন ভোগ করবে? যেন সময় এবং সম্পদ ব্যয় করে সে মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী বান্দা বা বান্দি হওয়ার জন্য কোশেশ করে। সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সময় দিয়েছেন, সম্পদ দিয়েছেন। ঈমান বিশুদ্ধ করে সে যমীন থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতে যাবে। যারজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি একটা সূরা শরীফ-ই নাযিল করেন সময় সংক্রান্ত। যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি খ- খ- আয়াত শরীফে সময়ের সম্পর্কে বলেন-
وَالفَجْرِ، وَالَّيْلِ، وَالضُّحٰى، وَالنَّهَارِ.
‘কসম সকালের, কসম রাত্রির, কসম চাশতের সময়ের, কসম দিনের।’ মহান আল্লাহ পাক তিনি সময়ের কসম করেন সময়ের গুরুত্বটা বুঝানোর জন্য। কাজেই দিন, রাত্র, সকাল, সন্ধ্যা, দুপুর প্রত্যেকটা সময়ের গুরুত্ব রযেছে, তাৎপর্য রয়েছে। এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি একটা সূরা শরীফের মধ্যে স্পষ্ট বলেন- وَالْعَصْرِ ‘কসম সমস্ত সময়ের’ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ‘নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত।’ এটা বলার পর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিলেন إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ-
চারটা কথা মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘোষণা করলেন, নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ যারা সময় গুলোকে নষ্ট করে দিয়েছে, যিন্দিগীকে বরবাদ করে দিয়েছে, জাহান্নাম ওয়াজিব করে নিয়েছে, ঐ সমস্ত ব্যক্তি ব্যতীত- এক নম্বর হচ্ছে- إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا ‘যারা ঈমান এনেছে।’ দুই নম্বর হচ্ছে- وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ‘আমলে ছালেহ করেছে।’ অর্থাৎ, আমলে ছালেহ কোনটা, এখানে চারটাও বলা যেতে পারে, দুটাও বলা যেতে পারে, ঈমান এবং আমলে ছালেহ। আমলে ছালেহ-এর ব্যাখ্যা হচ্ছে وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ-‘যারা সত্য এবং ধৈর্য-ছবর সম্পর্কে নছীহত করে থাকে।’ ইত্যাদি আমলে ছালেহ যারা করে থাকে ঈমান আনার পর তারাই কামিয়াব। এখানে অর্থ দু’টা হচ্ছে, আবার চারটাও হচ্ছে। অর্থাৎ প্রথম হচ্ছে ঈমান, যে ইমান এনেছে। এরপর হচ্ছে আমলে ছালেহ। আমলে ছালেহগুলো কি? সৎ কাজের আদেশ করবে, ছবর সম্পর্কে বা ধৈর্য সম্পর্কে আদেশ করবে, অছিয়ত-নছীহত করবে, তা’লীম-তালক্বীন দিবে, শিক্ষা-দিক্ষা দিবে, তাহলে তা আমলে ছালেহ-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আমলে ছালেহ ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈমান আনবে।
কাজেই, সময়ের প্রতি কসমের দ্বারা সময়ের কত গুরুত্ব রয়েছে, কি তাৎপর্য রয়েছে, সেই সময়টাকে কিভাবে যথাযথভাবে ব্যয় করতে হবে তা বুঝানো হয়েছে। অতঃপর বলা হয়েছে, সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত, শুধুমাত্র ঐ সমস্ত ব্যক্তি ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে। ঈমান আনার পর আমলে ছালেহ-এর প্রসঙ্গ আসবে। অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি ইত্যাদি যা কিছু রয়েছে সেটা সে করবে। কাজেই ঈমান ব্যতীত কোন আমলই আমলে ছালেহ হতে পারে না। আগে ঈমান আনতে হবে তারপর নেক আমল, আমলে ছালেহ হবে। কাজেই, সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরাতুল আছর শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। যে, তোমরা সময় সম্পর্কে সাবধান থাকবে, সতর্ক থাকবে। অর্থাৎ তোমাদেরকে যে নিদিৃষ্ট সময় দেয়া হয়েছে সেই নির্দিষ্ট সময়ে তুমি ঈমান এনে, আমলে ছালেহ করে যমীন থেকে আসবে। তাহলেই তোমার জন্য কামিয়াবী। অন্যথায় কোন কামিয়াবী নেই। এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَجِّلُوْا بِالتَّوْبَةِ قَبْلَ الْمَوْتِ. عَجِّلُوْا بِاِسْتِعْدَادِ الْمَوْتِ قَبْلَ نُزُوْلِ الْمَلَكِ الْمَوْتِ.
‘তোমরা তাড়াতাড়ি মৃত্যুর পূর্বে তওবাহ করে নাও। মালাকুল মউত নাযিল হওয়ার পূর্বে তাড়াতাড়ি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো।’ অর্থাৎ তওবাহ করে ঈমানদার হয়ে যাও। মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো। মালাকুল মউত নাযিল হওয়ার পূর্বে ঈমানদার হয়ে যাও। অর্থাৎ ঈমান এনে, নিজেকে ঈমানদার করে নাও তাহলেই কামিয়াবী রয়েছে। যেহেতু ঈমান ছাড়া কারো কোন আমল মৃত্যুর পর কোন ফায়দা দিবে না। যমীনে অবশ্যই বদলা পাবে যদি কোন ভাল কাজ করে। যেমন যারা বেদ্বীন-বদদ্বীন রয়েছে, যমীনে তারা তার বদলা পাবে। কিন্তু মৃত্যুর পর তা থেকে এক বিন্দু পরিমাণও কোন ফায়দা হাছিল করতে পারবেনা দুনিয়াবী ভাল কাজের জন্য। কিন্তু আমলে ছালেহ যদি হয় অর্থাৎ ঈমান এনে নেক কাজ করলে সেটার বদলা ইহকালেও পাবে, পরকালেও পাবে। যারজন্য হাদীছ শরীফে আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- اِغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ ‘পাঁচটা
জিনিসকে পাঁচটা জিনিসের পূর্বে গনিমত মনে করো।’ شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ ‘যৌবনকালকে বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে গনিমত মনে করো।’ صِحَّتَكَ قَبْلَ سُقْمِكَ ‘অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে গনিমত মনে করো।’ غِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ ‘অভাবের পূর্বে স্বচ্ছলতাকে গনিমত মনে করো।’ فَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ ‘ব্যস্ততার পূর্বে অবসর মুহূর্তকে গনিমত মনে করো।’ حَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ ‘মৃত্যুর পূর্বে সম্পূর্ণ হায়াতকে গনিমত মনে করো।’ (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)