সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল,
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৯)
, ২রা রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৪ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ৩ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফ হাছিলের জন্য বাগদাদ শরীফ-এ গমন:
গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই বলেন, ইহা শুনে আমি বাড়িতে ফিরে আসলাম। বাড়ির ছাদে আরোহণ করতঃ গভীর চিন্তায় মগ্ন হলাম। এমন সময় দূরে দেখতে পেলাম- একটি বিরাট কাফেলা বাগদাদ শরীফ-এর দিকে যাচ্ছে। আমি এ দৃশ্য দেখে ছাদের উপর আর স্থির থাকতে পারলাম না। ছাদ থেকে নেমে স্নেহময়ী মাতার নিকট মনের অবস্থা ও আরজু ব্যক্ত করলাম। প্রায় ৭৮ বছর বয়স্কা বৃদ্ধা মাতা দ্বিধাহীন চিত্তে, পরমপ্রিয় চোখের মণি, একমাত্র সহায়-সম্বল, ইলিম পিপাসী পুত্রকে স্বাচ্ছন্দ্যে অনুমতি দিলেন। সাথে দিলেন পিতার রেখে যাওয়া ৮০টি স্বর্ণমুদ্রা থেকে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা। বগলের নিচে জামা আস্তিনের মধ্যে সেলাই করে দিলেন।
মাতা আরো বললেন, প্রিয় বৎস! মনে রাখবেন আপনার প্রতিপালনকারী একমাত্র আল্লাহ পাক। কাজেই, সদা-সর্বদা উনার উপরই তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখবেন। সবসময় সত্য কথা বলবেন। মিথ্যাকে চরমভাবে ঘৃণার সাথে বর্জন করে চলবেন। ” স্নেহময়ী মায়ের যবান মুবারকে উচ্চারিত উপদেশ শুনে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতঃ ক্বদমবুছি করে বাগদাদ শরীফ-এর দিকে রওয়ানা হলেন। উনারা হামদান-এর নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছলে ষাটজন ডাকাত কাফেলা আক্রমণ করে সকলের পুরো ধনসম্পদ লুট করে নিলো। একজন ডাকাত এসে উনাকে বললো, যুবক! আপনার কাছে কি কিছু আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, জবাব দিতেই ডাকাতটি উনাকে সরদারের কাছে নিয়ে গেল। ডাকাত সরদারকেও একই জবাব দিলেন। সরদার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বললো, এগুলো সন্ধান আপনি কেন দিলেন?
তিনি বললেন, আমার মাতা আমাকে উপদেশ দিয়েছেন, ‘কখনও মিথ্যা বলবেন না” আমি কি আমার মায়ের আদেশ অমান্য করতে পারি? এরূপ জবাব শুনে ডাকাত সরদার উনার হাত মুবারকে বুছা দিলো এবং সাথীদের সবাইকে নিয়ে উনার মুবারক হাতে তওবা করতঃ বাইয়াত হলো। যিকির-ফিকির করে পরবর্তীতে সবাই অতি উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মুহিউদ্দীন লক্বব মুবারকের তাৎপর্য:
একবার এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে ‘মুহিউদ্দীন’ লক্বব মুবারকের তাৎপর্য জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, আমি একবার এক দীর্ঘ সফর শেষ করে বাগদাদ শরীফে ফিরে আসছিলাম। পথে এক অসুস্থ লোকের দেখা হলো, যার চেহারা ছিল ফ্যাকাশে এবং শরীর ছিল শীর্ণকায়। তিনি আমাকে সালাম করলেন। আমি ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’ বললাম। তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন। আমি কাছে গেলে তিনি বললেন, দয়া করে আমার হাত ধরুন। আমি উনার হাত ধরে উনাকে উঠালাম। তৎক্ষণাৎ তিনি একজন খুব ছুরত এবং তরুণ যুবকে পরিণত হলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি হলাম দ্বীন ইসলাম। আমি জীর্ণ-শীর্ণ এবং দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম। মহান আল্লাহ পাক আপনার উছীলায় আমাকে নতুন জীবন দান করেছেন। আজ থেকে আপনার লক্বব মুবারক মুহিউদ্দীন তথা দ্বীন যিন্দাকারী।
যখন আমি জামে মসজিদে ফিরে আসলাম, তখন এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি আমাকে “হে সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন’ বলে সম্বোধন করলেন। নামায আদায় করার পর দেখলাম লোকেরা আদব সহকারে আমার সামনে দাঁড়িয়ে গেল। আমার হাত মুবারকে চুমু দিতে লাগলো। আর মুখে ‘ইয়া সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন’ বলতে লাগলো, অথচ ইতোপূর্বে কেউ আমাকে এ লক্ববে সম্বোধন করেনি। সুবহানাল্লাহ! (যুবদাতুল আছার-৫৫, নুজহাতুল খাতিরিল ফাতির ফী মানাকিবিশ শায়েখ আব্দিল কাদির-৪২)
যুগের গাউছ উনার প্রতি আদব প্রদর্শন:
শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, হযরতুল আল্লামা রুহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
আবূ সাঈদ আব্দুল্লাহ ৫৮০ হিজরীতে দামেস্কে বর্ণনা করেছিলো, “আমি যুবক অবস্থায় ইলিম অর্জনের জন্য বাগদাদ শরীফ-এ উপস্থিত হয়েছিলাম। সে সময় নিজামিয়া মাদরাসাতে ইবনুছ ছাক্কাহ নামে আমার একজন সহপাঠী ছিলো। আমরা উভয়ে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির করতাম। পাশাপাশি তথাকার বুযূর্গগণ উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করতাম। বাগদাদ শরীফ-এ সে সময় একজন গাউছ ছিলেন। তিনি অনেক সময়ে মানুষের চোখের আড়াল হয়ে যেতেন। একবার আমি, ইবনুছ ছাক্কাহ ও হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি আমরা তিনজন উক্ত গাউছ উনার সাক্ষাত লাভের ইচ্ছায় বাড়ী থেকে বের হলাম। আমরা রাস্তা দিয়ে গমনকালে ইবনুছ ছাক্কাহ বললো, আমি উক্ত গাউছ উনাকে এমন প্রশ্ন করবো যার উত্তর দিতে তিনি সক্ষম হবেন না। আমি বললাম, আমিও একটি প্রশ্ন করবো, দেখি তিনি কি উত্তর দেন। আর সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, নাঊযুবিল্লাহ! আমি যার দীদারে, বরকত লাভের আশা পোষণ করি, উনার সামনে উপস্থিত হয়ে কোন প্রশ্ন করতে পারবো না। আমরা উনার নিকটে উপস্থিত হয়ে উনার স্থানে উনাকে দেখতে পেলাম না। একটু পর উনাকে সেখানে বসা দেখতে পেলাম। তারপর তিনি ইবনুছ ছাক্কাহ্র দিকে অসন্তুষ্ট অবস্থায় তাকালেন এবং বললেন, হে ইবনুছ ছাক্কাহ, তোমার জন্য আফসোস, তুমি আমার নিকট এরূপ প্রশ্ন করবে, যার উত্তর দিতে আমি সক্ষম হবো না। তোমার সে প্রশ্ন এই, তার উত্তর এই। নিশ্চয়ই আমি দেখছি, কুফরীর আগুন তোমার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে। এরপর তিনি আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! তুমি আমার নিকট এরূপ একটি প্রশ্ন করবে, যার উত্তর আমি দিতে পারি কিনা তা তুমি দেখবে। তোমার প্রশ্ন এই, তার উত্তর এই। তুমি যে আমার সাথে বেয়াদবী করেছো সে কারণে দুনিয়া তোমার মাথা ঘিরে নিবে। তারপরে তিনি হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। উনাকে বললেন, হে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি যে আদব রক্ষা করেছেন সে জন্য মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি আপনাকে দেখছি যে, আপনি কুরসির উপর আরোহন পূর্বক শ্রোতাদেরকে উপদেশ প্রদানকালে বলছেন, “আমার এ ক্বদম মুবারক প্রত্যেক ওলীআল্লাহ উনাদের গর্দানের উপর। ” আমি আপনার সময়ের ওলীআল্লাহ উনাদেরকে দেখছি, আপনাকে সম্মান করার উদ্দেশ্যে উনারা নিজেদের গর্দান নত করছেন, তারপর উক্ত গাউছ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এরপর আমরা আর উনাকে দেখতে পাইনি।
তিনি হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে যা বলেছেন, পরিণামে তাই সংঘটিত হয়েছে। ইবনুছ ছাক্কাহ ইলমে ফিক্বাহ বা কিতাবী ইলিম শিক্ষা করে তাতে পারদর্শী হয়েছিলো। তার সাথে বাহাছে কেউ বিজয় লাভ করতে পারেনি। তৎকালীন খলীফা তাকে উন্নত পদে সমাসীন করলেন এবং তাকে কনস্টান্টিনোপলের খ্রিস্টান রাজার নিকট দূতরূপে পাঠালেন। খ্রিস্টান রাজার চোখে সে অত্যন্ত সম্মানিত প্রতিপন্ন হলো। এক পর্যায়ে সে রাজ কন্যাকে দেখে বিমুগ্ধ হয়ে রাজার নিকট বিবাহের প্রস্তাব দিলো। রাজা তার খ্রিস্টান হওয়া ব্যতীত বিবাহে সম্মত হলো না। ইবনুছ ছাক্কাহ খ্রিস্টান হয়ে রাজ কন্যাকে বিবাহ করলো। আর সুলতান নুরুদ্দীন শাহী আবু ছাইদ আব্দুল্লাহকে দামেস্কে নিয়ে এসে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলোর কর্তৃত্ব দিলেন। এতে সে তার কর্তত্ব ভার গ্রহণকরতঃ সম্পূর্ণরূপে দুনিয়াদারিতে লিপ্ত হয়ে গেল। নাঊযুবিল্লাহ! (নুযহাতুল খাতিবিল ফাতির ফী মানাকিবে শায়েখ আব্দুল কাদির-৬৬) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নিজ থেকে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বানানো নিষেধ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেশের কৃষি খাতে বিরাজমান সংকট ও উত্তরণের পথে আঞ্জুমানে আল ফাল্লাহ্ অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষক আঞ্জুমান নীতি আদর্শ বর্জিত পাল্টাপাল্টির অসুস্থ রাজনীতি পরিহার করুন, কৃষি খাতকে রক্ষা করুন।
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শরীয়ত বিরোধী কাজ দেখলেই বাধা দেয়া ঈমানের আলামত
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৬)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৭)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)