সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল,
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৫)
, ৩০ শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১৭ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
![সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৫)](https://www.al-ihsan.net/uploads/1738178140_বড়পীর ছাহিব.jpg)
বিলাদত শরীফ-এর প্রথম দিনেই রোযা পালন:
ঊনত্রিশে শা’বান অপরাহ্নে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়। রাতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল। এ দিন পবিত্র রমাদ্বান শরীফ-এর চাঁদ উঠার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছে কিনা তা কেউ জানতে পারেনি। তাই এলাকাবাসী পরের দিন সকালে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ শুরু হয়েছে কিনা তা জানার জন্য আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ ছালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট উপস্থিত হলেন। ঘটনাক্রমে সে সময় তিনি বাড়ীতে ছিলেন না। তাই পর্দার আড়াল থেকে উম্মুল খায়ের, আমাতুল জাব্বার, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার খিদমতে বিষয়টি পেশ করা হলো।
আগন্তুকদের কথা শুনার সাথে সাথে উম্মুল খায়ের, আমাতুল জাব্বার রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার খেয়াল হলো যে, ছুবহি ছাদিকের পর থেকে উনার সদ্যজাত শিশু কিছুতেই মধু কিংবা দুধ পান করছেন না। এক প্রহর বেলা গড়িয়ে গেল এখনো তিনি দুধ পানে বিরত রয়েছেন। এটা মনে হতেই তিনি উপস্থিত লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, আমার সদ্যজাত সন্তান উনি ছুবহি ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত মধু ও দুধ পান করেছেন। কিন্তু ছুবহি ছাদিকের পর থেকে এ পর্যন্ত শত চেষ্টা করেও উনাকে মধু কিংবা দুধ কোনকিছুই পান করাতে পারছি না। এতে আমার মনে হচ্ছে তিনি রোযা রেখেছেন। আমার ধারণা আজ পহেলা রমাদ্বান শরীফ।
উপস্থিত লোকেরা জানতেন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ ছালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন কামিল ওলীআল্লাহ। আর উনার আহলিয়া তিনিও আল্লাহওয়ালী রমনী। উনাদের ঘরে যে পূত পবিত্র সন্তানটি আগমন করেছেন নিশ্চয়ই তিনি তদ্রƒপই হবেন। কাজেই, যারা রোযাদার ছিলেন উনারা মনের আনন্দে এবং যারা রোযা ছিলেন না উনারা অনুতপ্ত হয়ে যার যার বাড়ি চলে গেলেন। মুহূর্তেই সদ্যজাত সন্তান উনার রোযা রাখার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো।
এ সংবাদ শুনে নারী-পুরুষ দলে দলে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ ছালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাড়িতে সমবেত হতে লাগলেন মুবারক সন্তানটিকে একনজর দেখার জন্য। সারাদিন এক অভূতপূর্ব আনন্দ মজলিস অব্যাহত থাকল। সকলেই দেখলেন যে, মুবারক সন্তান তিনি হাত-পা নাড়াচাড়া করছেন। কিন্তু দুধ কিংবা মধু বা অন্যকিছু মুখের কাছে আনতেই তিনি অন্যদিকে মুখ মুবারক ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। এরূপ সারাদিন কেটে গেল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল এবং যখন মাগরিবের আযান শুরু হলো তখন এ মুবারক সন্তান অর্থাৎ গাউছুল আ’যম, মাহবূবে সুবহানী, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বাভাবিকভাবেই মধু পান করলেন। সুবহানাল্লাহ!
ওলীআল্লাহগণ উনাদের সন্তান ওলীআল্লাহ হয়ে থাকেন এটাই স্বাভাবিক। উনাদের সন্তান-সন্ততির জন্য এটা সহজও বটে। বিপরীত হওয়াটা একেবারে নগণ্য। আর যা নগণ্য তা ধর্তব্য নয়।
মুজাদ্দিদে যামান, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ ওলীআল্লাহ। যে তাক্বওয়া বা পরহেযগারিতা সবকিছুর মূল। উনারা সেই তাক্বওয়া বা পরহেযগারিতার যে চরম পরাকাষ্ঠা মুসলিম উম্মাহকে দেখিয়েছেন তা আগত-অনাগত সকল উম্মাহর জন্য অন্যতম আদর্শ।
উনার আব্বা-আম্মা উনারা ছিলেন সাইয়্যিদ পরিবারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। উনার আব্বার মুবারক নাম হযরত আবূ ছালেহ মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য অনেক জিহাদ (যুদ্ধ) করেছেন। জিহাদ ছিল উনার প্রিয় ও পছন্দনীয় অন্যতম আমল। যার কারণে তিনি জঙ্গী দোস্ত বা যুদ্ধপ্রিয় লক্ববে মশহূর হয়েছেন। উনার বংশ মুবারক-এর ধারা সাইয়্যিদু শাবাবী আহলিল জান্নাহ, ইমামুল হুমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু মুহম্মদ হাসান আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক)-এর সাথে মিলিত হয়েছে। উনার সম্মানিতা আম্মা তিনিও ছিলেন সাইয়্যিদ পরিবারের মহাসম্মানিতা ব্যক্তিত্ব। উনার রক্ত মুবারক-এর ধারা সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুল হুমাম, সাইয়্যিদুনা ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুন নাজাত মুবারক অর্থাৎ রক্ত মুবারক-এর সাথে মিলিত হয়েছে। উনার মুবারক নাম হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা। তিনি আমাতুল জাব্বার ও উম্মুল খায়ের লক্বব মুবারক-এর দ্বারা সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। উনার সম্মানিতা নানা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ছাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও ছিলেন যুগ শ্রেষ্ঠ আলিম-ওলীআল্লাহ।
উনার বুযুর্গ পিতা এবং মাতা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের আমল আখলাক ও জীবন সম্পর্কে পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবো যে, সত্যিই উনারা গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা-মাতা হবার উপযোগী। তিনি যখন যুবক ছিলেন, তখন একদিন তিনি ক্ষুধার্ত অবস্থায় দজলা নদীর তীর দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দজলা নদীর মধ্যে একটি ছেব ফল ভাসমান অবস্থায় দেখে ক্ষুধার তাড়নায় খেয়ে ফেললেন। তিনি রাতে বিছানায় শুয়ে চিন্তা করতে লাগলেন ছেব ফল খাওয়া কতটুকু জায়িয হল। (যদিও শরীয়তের মাসয়ালা হল, কোন ব্যক্তি যদি ৩ দিন না খেয়ে থাকে তার জন্য জরুরত আন্দাজ হারাম খাওয়া মুবাহ) এথেকেই বুঝা যায় যে, উনারা হালাল খাবারের প্রতি কতটা দৃঢ় ও মজবুত ছিলেন। কেননা, এক পয়সা হারাম খেলে চল্লিশ দিন ইবাদত কবুল হয় না। কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
يايها الناس كلوا مما فى الارض حلالا طيبا ولا تتبعوا خطوات الشيطان انه لكم عدو مبين
অর্থ: “হে ইনসানেরা! তোমরা যমীনে হালাল খাদ্য খাও আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ” (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১)
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আব্দুল ওয়াহিদ বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত শায়েখ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ক্বায়িম মাক্বাম
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হাক্বীক্বী মুহব্বত-মা’রিফত ও নিসবত-কুরবত মুবারক ব্যতিত কখনোই পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাক্বীক্বী অর্থ ও ব্যাখ্যা করা সম্ভব না (১)
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল কায়িনাত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীমার্থে ক্বিয়াম শরীফ করা সুন্নত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ (৫)
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুসলমানদের বুদ্ধি-শ্রম ব্যবহার করেই বিধর্মীরা এত শক্তিশালী হয়েছে
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতবাসীর সমস্ত নিয়ামত মুবারক বণ্টনকারী
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
অন্যায়কে ঘৃণা না করলে ঈমানদার থাকা যায় না
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)