সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৪)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ১রা রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৫ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ০২ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১৭ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আনা সাগরের পানি গায়েব ও হিন্দু যোগী, রাজপুতদের সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ:
পাহারাদার সৈন্যরা রাজদরবারে হাজির হলো। পাহারাদারদের প্রধান বললো, মহারাজ! সর্বনাশ হয়েছে। মুসলমান দরবেশগণকে আনা সাগরের পানি ব্যবহার করতে না দেয়ার কারণে উনারা যাদু দিয়ে সব পানি শুকিয়ে ফেলেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
পৃথ্বিরাজ বললো, তোমরাও তোমাদের যাদু দ্বারা পানি পূর্ণ করে দাও। প্রধান পাহারাদার বললো, আজমীর শরীফে এমন শক্তিধর যাদুগীর নেই, যে যাদু দ্বারা এমন অসাধ্য সাধন করতে পারবে।
পৃথ্বিরাজ স্বচক্ষে অবিশ্বাস্য ঘটনা দেখার জন্য আনা সাগরে হাজির হলো। অবস্থা দেখে সে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লো। ভাবতে লাগলো কি উপায়ে এর পানি ফিরিয়ে আনা যায়। সে ভেবে চিন্তে দেখলো যিনি পানি গায়েব করেছেন তিনি একমাত্র পানি আনতে পারবেন। সে তার প্রজাদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে স্থির করলো যে, তাদের মধ্যে দু’জন যাবে সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট। তারা যেকোনো শর্তে উনাকে বুঝিয়ে পানি ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে। পৃথ্বিরাজের নির্দেশ মোতাবেক তারা উভয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত মুবারকে গেলো। উনার সম্মুখে তা’যীমের সাথে দাঁড়িয়ে বললো, হুযূর! আমরা পৃথ্বিরাজের লোক। আমাদেরকে সে পাঠিয়েছে, তার সালাম জানাতে। সেই সাথে তার পাহারাদার সৈন্যরা যে বেয়াদবী করেছে আপনাদের সাথে সেজন্য রাজা ক্ষমা চেয়েছে। আপনি মেহেরবানী করে একটু দয়ার দৃষ্টিতে দেখুন যে, এ পানি হচ্ছে সবকিছুর জীবন। পানি নেই তো সবকিছু মৃত। পশু-পাখি, জীব-জানোয়ার, মানুষ সকলেই পানির জন্য হাহাকার করছে। আপনি দয়া করে, করুনা করে আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দিয়ে আনা সাগরের পানি ফিরিয়ে দিন। আমরা কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে আর কখনও আপনাদের কেউ পানি আনতে গেলে লাঞ্ছিত করা তো দূরের কথা আপনাদের কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হবে না। অতএব দয়া করুন, করুনা করুন। মানুষ বাঁচান ও জীব-জানোয়ার বাঁচান।
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার খাদিমকে বললেন, তুমি যাও আনা সাগরের পানি ফেরত দিয়ে আসো। আর রাজার লোকদেরকে বললেন, তোমরা যাও, আনা সাগরের পানি ফেরত যাচ্ছে। খাদিম সেই পানি ভর্তি পেয়ালা মুবারক হাতে নিয়ে আনা সাগরের দিকে চললেন। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার হুজরা শরীফ থেকে বাইরে এসে টিলার উপর দাঁড়ালেন। রাজার লোক দু’জন দৌড়াতে লাগলো ঘটনাটি কিভাবে ঘটে তা দেখার জন্য। খাদিম ছাহিব আনা সাগরের পানি পেয়ালা মুবারক থেকে আনা সাগরে ঢেলে দিলেন। একই সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নির্দেশ মুবারক দিলেন যে আনা সাগর তুমি পানি পূর্ণ হও। নির্দেশ মুবারক পেয়ে আনা সাগরের পানি পূর্বের রূপে ফিরে আসলো।
আনা সাগরের সব পাড়ে দাঁড়ানো সমস্ত লোকজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। আনা সাগরের পানি কিভাবে ফেরত আসবে তা দেখার জন্য সকলে উদগ্রীব। শুধুমাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খাদিমের হাত থেকে এক পেয়ালা পানি সাগরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর এক নিমিষে আনা সাগর পানিতে ভরে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। এটা দেখে সবাই অবাক ও বিস্মিত। সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই কারামত মুবারক দেখে ঐদিন বহু মন্দিরের পূজারী, অনেক রাজপুত ও অনেক পাহারাদার সৈনিক ও অনেক সাধারণ মানুষ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। সুবহানাল্লাহ!
জয়পাল বা অজয়পালের
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ:
জয়পাল বা অজয়পাল হচ্ছে ভারতের সর্বাপেক্ষা শক্তিধর যাদুকর। যাদু বিদ্যায় পারদর্শী। সে নিজেকে অপরাজেয় মনে করতো। সে ধরাকে সরা জ্ঞান করতো। রাজপুতসহ লক্ষ লক্ষ লোকের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণে পৃথ্বিরাজ ভীত সন্ত্রস্ত হলো। অনতিবিলম্বে ভারত মুসলমানদের করতলগত হবে। এই ভেবে সে চিন্তায় মুহ্যমান। সে জরুরী সভার আয়োজন করলো।
অনাগত বিপদের সম্মুখীন হলে কি করবে তার একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। যেভাবেই হোক ঐ মুসলমান দরবেশ উনাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। অন্যথায় আমাদের শেষ রক্ষা হবে না। নাঊযুবিল্লাহ! মন্ত্রী পরিষদের সর্বসম্মত মত পৃথ্বিরাজের নিকট পেশ করা হলো। হিন্দুস্থানের তথা ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী-সাধক ও যাদুকর জয়পালযোগী বা অজয়পাল যোগীকে আমন্ত্রণ জানানো হোক মুসলমান ও ফকিরদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার জন্য।
তাদের মতামত গৃহীত হলো। জয়পাল যোগীকে ডেকে পাঠানো হলো। সে পৃথ্বিরাজের আমন্ত্রণ পেয়ে আজমীর শরীফে হাজির হলো। পৃথ্বিরাজ তাকে আজমীর শরীফে হিন্দুদের অবনতি ও করুন পরিণতির কথা বললো। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খমিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযা শরীফ
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত সৌন্দর্য মুবারক ও শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আরব মহিলাদের নিসবতে ‘আযীম শরীফের প্রস্তাব এবং উনার বেমেছাল পবিত্রতা মুবারক
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত মু’জিযাহ্ শরীফ দর্শন
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব (২)
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী যে কারণে (৭)
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র লাইলাতুর রাগায়িব শরীফ উনার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব (১)
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)