সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪২)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আজমীর শরীফে আগমন:
পৃথ্বিরাজ শাদি দেওকে ডেকে আনলো। পুরোহিতদের অভিযোগের সমস্ত কথা তাকে বললো। তাকে এটাও বললো, প্রতিকার কি করে করা যায়? শাদি দেও খুব বিচক্ষণ লোক ছিলো। সে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবলো, তারপর পৃথ্বিরাজকে বললো, আপনি একটা মহাসভার আয়োজন করুন। সেখানে ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিতর্ক হবে। সেই বিতর্কে ঐ মুসলমান দরবেশ উনাকে মঞ্চে আহ্বান করুন। আমি আমার ধর্মের বাণী যাদুর সাথে এভাবে পেশ করবো যে, তিনি আমার একটি কথারও উত্তর দিতে পারবেন না। বিতর্কের জন্য শর্ত থাকবে যে, যদি তিনি পরাজিত হন তাহলে তিনি এদেশ থেকে চলে যাবেন। কোনোদিন ফিরে আসবেন না। আর তিনি যদি আমাকে পরাস্ত করতে পারেন, যদিও তা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়, তাহলে তিনি এদেশে থেকে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। যদিও আমরা উনাকে সে সুযোগ দিবো না। নাঊযুবিল্লাহ! আর একটি কাজ করতে হবে, ঐ বিতর্কের বিষয়বস্তু কার সঙ্গে কার বিতর্ক হবে, কোথায় হবে, কখন হবে, তা সমস্ত রাজ্যে প্রচার করে দিতে হবে। যাতে হিন্দু ধর্মের লোকেরা উপস্থিত থেকে তাদের ধর্মের বিজয় প্রত্যক্ষ করতে পারে। আর ভবিষ্যতে তারা যেনো কখনো অন্য ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। নাঊযুবিল্লাহ!
শাদি দেওয়ের প্রস্তাব পৃথ্বিরাজের খুবই মনপূতঃ হলো। মন্ত্রীকে ডেকে বিতর্ক সভার আয়োজন করতে বললো। দিন, তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে শাদি দেওকে তৈরী হতে বললো। কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল হিন্দ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বিষয়টি জানানো হলো। তিনি তাদের বাহাছ বা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে সম্মতি দান করলেন।
রাজ্যময় একটা হৈ চৈ পড়ে গেলো। হিন্দুরা লাফালাফি ও আস্ফালন করতে লাগলো। নির্দিষ্ট দিন, সময়, স্থান এবং বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা সুচারুরূপে সুসম্পন্ন হলো।
শাদী দেও-এর সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ:
আজমীর শরীফ উনার সব মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিল শাদীদেও। কেউ কেউ তাকে শাদীদেব বলে উল্লেখ করেছেন।
ঐ সময় হিন্দু শাস্ত্রের সে ছিলো পরম পূজনীয় ব্যক্তি। জ্ঞান-গরীমা ও যাদু বিদ্যায় তৎকালীন হিন্দুস্থানের বিশেষ লোকদের অন্যতম। রাজপুতরাও তাকে খুবই মানতো ও সম্মান করতো।
নির্ধারিত দিনে শাদীদেও নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই তার লোকজনকে সাথে নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হলো। বিতর্কের স্থানটি ছিল লোকে লোকারণ্য। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত প্রায়। কিন্তু সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখনও হাজির হননি। হিন্দুরা চিৎকার করে বলছে যে, প্রতিপক্ষ কোথায়?
শাদী দেও মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো, “মুসলমানগণ হয়তো ভয়ে পালিয়ে গেছে। ” নাঊযুবিল্লাহ! তোমরা দু-একজন গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আসো। এমতাবস্থায় দেখা গেল দু তিনজন লোক মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছেন। একটু নিকটে আসতে বুঝা গেল উনারাই বিতর্কের বিপক্ষ দল।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দু’ তিনজন খাদিমসহ মঞ্চে উঠলেন। শাদীদেও বাধ্য হয়ে সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়িয়ে গেল। সভাস্থল একেবারে নিরব, নিস্তব্ধ। কি ঘটবে তা দেখার জন্য সকলে উৎসুক চিত্তে অপেক্ষমান।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মঞ্চে বসে দৃষ্টি দিলেন শাদীদেও এর দিকে। দৃষ্টি মুবারক দেয়ার সাথে সাথে শাদীদেব উনার দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। উনার নূরানী চেহারা মুবারকের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সে থর থর করে কাঁপছে। সব যাদু বিদ্যা ভুলে গেল। তার সব ক্ষমতা খর্ব হলো। সে নিথর, নিস্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে কাছে ডেকে নিলেন। চোখে চোখ রেখে উচ্চ স্বরে বললেন, শাদী দেও! আমি লওহে মাহফূযে তোমার নাম ঈমানদারগণের তালিকায় দেখতে পাচ্ছি।
জযবা ও হালের সাথে তিনি বললেন, হে শাদী! পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করো-
لَا إلٰهَ إلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وَسَلَّمَ
সাথে সাথে শাদীদেও সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারক জড়িয়ে ধরে অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলো। আর জোরে জোরে পাঠ করলো-
لَا إلٰهَ إلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত রসূল, হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মুসলমান হওয়ার পর তার নাম মুহম্মদ সাদী রাখলেন। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৬)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গান-বাজনা অকাট্য দলীল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে হারাম
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)