সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৮)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ২৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে সফর:
আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল ছিলো বোখারা। সেখানে প্রায় সব মাশায়িখগণের সাথে সাক্ষাত করলাম। উনাদের মধ্যে প্রত্যেকেই এমন সৌন্দর্য মুবারকের অধিকারী ছিলেন যে, উনাদের প্রশংসা বর্ণনাতীত। এমনি সফর করতে করতে দশটি বছর স্বীয় সম্মানিত পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে কাটালাম। সফরের উপযোগী প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র মাথায় করে পথ চলতাম। সফরের দশ বছর পূর্ণ হলে আমরা পবিত্র বাগদাদ শরীফে এসে পৌঁছলাম। তারপর আমার মহান মুর্শিদ ক্বিবলা বিশেষ ইবাদত-বন্দেগীর জন্য নির্জনতা অবলম্বন করলেন। আর আমাকে বললেন, আমি হুজরা শরীফ থেকে বাইরে বের হবো না। আপনি প্রতিদিন একবার আমার কাছে চলে আসবেন। বিশেষ কিছু কথা বলবো- যা আমার অবর্তমানে আপনার কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! (আনীসুল আরওয়াহ-১৮)
সিস্তানে অবস্থান:
কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল হিন্দ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পরে আমি আমার প্রাণ প্রিয় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে আউশ হতে সিস্তানের দিকে রওয়ানা হলাম। শহরের নিকটবর্তী হয়ে দেখতে পেলাম, এক ইবাদতখানায় একজন বুযূর্গ ব্যক্তি বাস করছেন। ঐ বুযূর্গ ব্যক্তিত্বের নাম হযরত সদরুদ্দীন মুহম্মদ সিস্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি একজন উঁচু তবকার ওলীআল্লাহ ছিলেন। আমরা কয়েকদিন উনার খানকা শরীফে অবস্থান করলাম। দেখতে পেলাম যে, যারা উনার খানকা শরীফে আসেন তারা কেউই খালি হাতে ফিরে যান না। গায়েবী বা অদৃশ্য জগত থেকে সেই ব্যক্তির কাঙ্খিত বিষয়বস্তু এনে তাকে দেয়া হতো। বলা হতো এ দরবেশকে পবিত্র ঈমান সুরক্ষার জন্য দোয়ার মাধ্যমে উনাকে স্মরণ করবে। কেননা যে ব্যক্তি সম্মানিত ঈমান উনাকেসহ কবরে প্রবেশ করতে পারবে সে ব্যক্তি ধন্য বা কামিয়াব হবে।
আমরা লক্ষ্য করলাম তিনি যখন কবরের কথা বলছিলেন তখন তিনি বাঁশপাতার মত কাঁপতেছিলেন। আর চোখ মুবারক হতে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছে। মনে হচ্ছিল যে, উনার চোখ মুবারক যেন ঝর্ণাধারা। উনার সেই কান্না সাত দিন পর্যন্ত চলতে থাকলো। তারপর চোখ খুলে খোলা বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকতেন। উনার এরূপ অবস্থা দেখে আমাদেরও কান্না আসলো।
যখন ঐ জগত হতে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতেন তখন বলতেন, “হে লোকসকল! মৃত ব্যক্তিকে মাটির নীচে যখন রাখা হয় তখন কবরের মধ্যে যাদের আগমন ঘটে তাদের ভয়ঙ্কর রূপ ও আচরণ যদি তোমরা দেখতে পেতে তাহলে ভয়ে নিমক পানি হয়ে যাওয়ার মতো তোমাদের অবস্থা হতো।”
তারপর তিনি নিম্নোক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করলেন:
একবার আমি বসরায় এক বুযূর্গকে দেখেছিলাম। তিনি বেশিরভাগ সময় মুরাকাবায় বা ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন। আমি উনার সাথে একদিন একটি কবরের পাশে বসেছিলাম। ঐ বুযূর্গ ব্যক্তি কাশফের অধিকারী ছিলেন। তিনি উনার কাশফ দ্বারা জানতে পারলেন যে, উক্ত কবরে অবস্থানকারী ব্যক্তির উপর কঠিন আযাব চলছে। ঐ দৃশ্য দেখে তিনি তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বললেন এবং দুনিয়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারকে চলে গেলেন। যেমন- লবণ গলে পানি হয়ে যায়।
“যেমন ভয়-ভীতির ছাপ আমি ঐ বুযূর্গের চোখে মুখে দেখেছিলাম তেমনি ভয়-ভীতির ছাপ আমি আজ পর্যন্ত অন্য কারো মাঝে দেখিনি। আর কারো নিকট শুনতেও পাইনি।
অতঃপর বললেন, “আমি কবরের আযাবের ভয়ে সকলের নিকট হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী বসবাসকে লাযিম করে নিয়েছি। ৩০ বছর পর আজ তোমার সাথে কথা বললাম এবং এ ঘটনা বর্ণনা করলাম।
হে বন্ধুবর! সাধারণ লোকদের সাথে চলে সময় নষ্ট করার চেয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-ফিকির, মুরাকাবা-মুশাহাদায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ঠতর। কেননা যতক্ষণ একজন দরবেশ মানুষের সাথে কথা বলবে ঠিক ততক্ষণই সে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে গাফিল বা বিচ্ছিন্ন হতে থাকবে।
কাজেই, সাধারণ মানুষের নিকট হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে। তাদের ছোহবত বা সংস্পর্শ হতে দূরে থাকবে। মঞ্জিলে মাকছুদের দিকে নিজের চলার পথকে সবসময় কন্টকমুক্ত রাখবে। চলার পথের ধারা ও গতির দিকে নজর রাখবে যাতে চলার গতির মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকে।
আমাদের যে শেষ দিনটি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই দিনের জন্য আমাদের সম্মানিত ঈমানকে ছালামত তথা বিশুদ্ধ রাখতে হবে। যাতে ঐদিন আমরা একটি সুন্দর ও পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হাজির হতে পারি।
এরপর তিনি আমার হাতে দুটি খোরমা তুলে দিয়ে ঐ স্থান হতে উঠে চলে গেলেন। তারপর উনার কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। দেখলাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সান্নিধ্যে বিলীন হয়ে আছেন। (দলীলুল আরেফীন, পৃষ্ঠা ১৬,১৭) (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)