সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল শান মুবারক
, ১৭ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
দ্বিতীয় হিজরী সনের পবিত্র ১৭ রমাদ্বান শরীফ পবিত্র বদরের জিহাদে মুসলমান ও মুশরিক উভয় বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়। তৎকালীন যুদ্ধরীতি অনুযায়ী পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে আগত মুশরিকদের পক্ষ হতে উতবা, শায়বা এবং ওলিদ নামক তিন জন সদর্পে ময়দানে অবতরণ করে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীকে যুদ্ধে আহবান জানালে তাদের মোকাবেলায় সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামজা আলাইহিস সালাম, হযরত উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে পাঠানো হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত হামজা আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাতে উনাদের স্ব স্ব^ প্রতিদ্বন্দ্বী নিহত হয়। অতঃপর হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাহায্যার্থে অগ্রসর হন এবং প্রতিপক্ষ শায়বা নিহত হয়। অতঃপর সর্বাত্মক জিহাদ শুরু হয়ে যায়। এই পবিত্র জিহাদে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বীরত্বের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে তাবারী শরীফ)
হিজরী তৃতীয় সালে সংঘটিত উহুদের জিহাদে মুশরিকরা মুসলমানদেরকে আক্রমণ করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সমস্ত দুরভিসন্ধিই ব্যর্থ করে দেন। মুশরিক বাহিনীর পতাকাবাহী আবূ সা’দ ইবনে আবি তালহাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আহবান জানালে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক আঘাতেই তাকে ধরাশায়ী করেন; কিন্তু তার অসহায়তা ও হতবিহ্বলতা দেখে তিনি তাকে হত্যা করেননি। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে হিশাম)
হিজরী ৭ম সনে খাইবরের পবিত্র জিহাদ সংঘটিত হয়। এই পবিত্র জিহাদে খাইবরের সর্বাধিক সুদৃঢ় দুর্গ ‘কামুস’-এর অধিকর্তা মারহাব নামক এক ইহুদী বীরকে হত্যা করে তিনি অতুলনীয় বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দান করেন। অতঃপর কয়েকদিন অবরোধের পর তিনি দুর্গ অধিকারে সক্ষম হন। এই পবিত্র জিহাদে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুদৃঢ় দুর্গ ‘কাছরে মারহাব’ জয় করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। (ইবনে হিশাম)
সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফত আমলে পরামর্শদাতা ছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সুমহান পবিত্র ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর হিজরী ৩৫ সনের ২৫শে যিলহজ্জ শরীফ সম্মানিত খিলাফত উনার মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় চার বছর পৌনে ৯ মাস যাবৎ এ দায়িত্ব মুবারক যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন নবী খান্দানের সদস্য। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষা মুবারক লাভ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ইলম উনার নগরী, আর হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই নগরীর প্রবেশদ্বার। ’’ সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন, পবিত্র কুরআনে হাফিয, শ্রেষ্ঠ মুফাস্সির এবং অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনাকারী রাবী। সুবহানাল্লাহ!
হিজরী ৪০ সনের ১৬ই রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার ফযর নামাযে গমনকালে মুনাফিকদের যড়যন্ত্রে ইবনে মুলজিম নামক খারিজী ঘাতকের তলোয়ারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পরের দিন ১৭ই রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুস সাব্ত (শনিবার) পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার জ্যোষ্ঠ আওলাদ সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র জানাযার নামায পড়ান। কূফার নাজফে আশরাফে জামে মসজিদের পাশে উনার পবিত্র রওযা শরীফ অবস্থিত অর্থাৎ সেখানে তিনি মুবারক অবস্থান গ্রহণ করেন। গ্রহণযোগ্য মতে, সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশকালে উনার বয়স মুবারক হয়েছিলো ৬৩ বছর। সুবহানাল্লাহ!
মূলকথা হচ্ছে- হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তাই উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জেনে ও উনাকে মুহব্বত করে এবং অনুরসণ-অনুকরণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি মুবারক হাছিল করা আমাদের সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সে তাওফীক দান করুন। আমীন!
-আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)