সম্মানিত মালিকী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম-
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক (৩)
, ২৬ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষায় পারিবারিকভাবে উৎসাহিত হলেও উনার চেষ্টা-কোশেশ এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অসাধ্য সাধন করেছেন। শয়নে স্বপনে সব সময় একই চিন্তা, কিভাবে তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষালাভ করবেন। মানুষ যখন অবসরে, তিনি তখন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সন্ধানে। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একবার ঈদের ছলাতে ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখে মনে করলেন, আজ মানুষ ঈদের আনন্দে ব্যস্ত, হয়তো ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে একাকী পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষার সুযোগ পাওয়া যাবে। ঈদের ময়দান থেকে চলে গেলেন ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাসায়, দরজার সামনে বসলেন। ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভিতর থেকে লোক পাঠালেন, গেটে কে দেখার জন্য, ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জানানো হলো যে, গেটে আপনার ছাত্র ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি। ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ভিতরে আসতে বলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি ভিতরে গেলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, মনে হয় আপনি ছলাতের পর বাড়িতে যাননি? আমি বললাম, না যাইনি; জিজ্ঞেস করলেন, কিছু খেয়েছেন কি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, খান। আমি বললাম, খাওয়ার চাহিদা নেই। তিনি বললেন, তাহলে আপনি কি চান? আমি বললাম, আমাকে পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা দিন। অতঃপর তিনি আমাকে সতেরটি পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অধিকাংশ সময় একাকী থাকা পছন্দ করতেন। উনার বোন পিতার কাছে অভিযোগ করলেন, আমাদের ভাই মানুষের সাথে মেলামেশা করেন না। পিতা জবাব দিলেন যে, মা, তোমার ভাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ মুখস্থ করায় ব্যস্ত, তাই তিনি একাকী থাকা পছন্দ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিঃসন্দেহে পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষার ব্যাপারে খুবই তৎপর ছিলেন। যার কারণে তিনি ঈদের আনন্দ-উৎসব বাদ দিয়ে এবং পরিবারে সময় না দিয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা ও মুখস্থকরণে ব্যস্ত থাকতেন। কাজেই তিনি ছিলেন এক বেমেছাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং শয়নে-স্বপনে সর্বদা পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ সংগ্রহে কঠোর সতর্কতা:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা ও সংগ্রহে সর্বদা ব্যস্ত থাকলেও যার-তার নিকট থেকে যেনতেনভাবে তা গ্রহণ করতেন না- যতক্ষণ না তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারীর ঈমান-আক্বীদা ও সততা সম্পর্কে অবগত হতে পারতেন। বিশ্বস্ত প্রমাণিত হলে পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণ করতেন, অন্যথায় নয়। ইমাম সুফইয়ান ইবনু ‘উয়ায়নাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে রহম করুন, তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ও বিদ্বানগণের ব্যাপারে কতই না সতর্ক থাকতেন এবং কঠিনভাবে যাচাই বাছাই করতেন, সহজেই কারো পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণ করতেন না।’
আলী ইবনুল মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণে কঠোর নীতি ও সতর্কতায় সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ন্যায় আর কেউ আছে বলে আমি জানি না।’ সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিদয়াতীদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণ করতেন না।
এই সতর্কতা শুধু নিজেই অবলম্বন করেননি, বরং তিনি অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পবিত্র হাদীছ শরীফ হলো দ্বীনের অন্যতম ভিত্তি। অতএব ভালোভাবে লক্ষ্য করো, তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করেছো। আমি সত্তরজন এমন ব্যক্তি পেয়েছি, যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আমি তাদের কিছুই গ্রহণ করিনি। যদিও তারা অর্থ-সম্পদে আমানতদার। কিন্তু এ বিষয়ে তাদেরকে আমি নির্ভরযোগ্য মনে করিনি। অথচ আমাদের মাঝে ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগমন ঘটলে পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা ও সংগ্রহে আমরা উনার দরবারে ভিড় জমাতাম।
সুতরাং ইমামু দারিল হিজরা বা মদীনাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা ও সংগ্রহে স্বীয় জীবন যেমন কুরবান করেছেন, তেমনি পবিত্র হাদীছ শরীফ সংরক্ষণে খুব কঠোর ভূমিকা রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)