সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (২)
, ১৩ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনার ইমাম:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সকল প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। কিন্তু প্রকাশ্যভাবে পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাকে আঁকড়ে ধরা হতে সামান্যতম ছাড় দিতে প্রস্তুত নন। প্রয়োজনে জীবন যেতে পারে তবুও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার অনুসরণ বর্জন হতে পারে না।
ইমাম ইসহাক বিন রাহুয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যদি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি না হতেন এবং তিনি যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার জন্য ত্যাগ স্বীকার না করতেন তাহলে ইসলাম বিনাশ হয়ে যেত, অর্থাৎ যখন সকলেই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মাখলুক হিসাবে স্বীকার করে নিলো, তখন পৃথিবীর বুকে একজনই মাত্র সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক বিশ্বাস ধারণ করেছিলেন, তিনিই হলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাধ্যমেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক আক্বীদাহ্ বিশ্বাসকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে চলে আসা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সঠিক বিশ্বাস:
“পবিত্র কুরআন শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম, কোন সৃষ্ট বস্তু নয়। ” কিন্তু জাহমিয়া ও মু’তাযিলাদের আবির্ভাবে এ বিশ্বাসে বিকৃতি ঘটানো হয়। শুরু হয় “পবিত্র কুরআন মাখলূক্ব বা সৃষ্ট বস্তু” এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রচারণা। এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে আব্বাসীয় তথাকথিত খলীফা হারুনুর রশীদ এবং পরবর্তী তথাকথিত খলীফা মামুনুর রশীদ প্রভাবিত হলো এ ভ্রান্ত বিশ্বাসে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা হলো সকলকে বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, “পবিত্র কুরআন শরীফ মাখলূক্ব বা সৃষ্ট বস্তু, এ বিশ্বাসের কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না। নাউযুবিল্লাহ! বাধ্য হয়ে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় প্রায় সকলেই ঐক্যমত পোষণ করলো। শুধুমাত্র দু’জন দ্বিমত পোষণ করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মুহম্মদ বিন নূহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। নির্দেশ দেয়া হলো উনাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য। গ্রেফতার করে আনার পথে জুলুমের কারণে মুহম্মদ বিন নূহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইন্তেকাল করেন। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দুআ করেছিলেন যেন তথাকথিত খলীফা মামুনের সাথে সাক্ষাৎ না হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কারাবাস দেয়া হয়। নাউযুবিল্লাহ! প্রায় আটাশ (২৮) মাস কারাগারে আবদ্ধ হয়ে থাকলেন তিনি এবং তথাকথিত খলীফা মু‘তাসিম এর নির্দেশে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ না করায় বেত্রাঘাত করা হয়। হাত বেঁধে নিষ্ঠুরভাবে কোড়াঘাত করা হয়। নাউযুবিল্লাহ! কোড়াঘাতে রক্ত ঝরতে থাকে, গায়ের কাপড় পর্যন্ত রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ! জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আবার জ্ঞান ফিরলে জিজ্ঞাসা করা হয় তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসে একমত কিনা? একমত না হলে আবার কোড়াঘাত শুরু হয়। এভাবে নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হন। এর কারণ শুধু একটিই তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অনুসারী এবং বিদয়াতী বিশ্বাস বর্জনকারী। পরিশেষে খলীফা আল মুতাওয়াক্কিল তিনি সঠিক বিষয় উপলব্ধি করে গোটা মুসলিম জাহানে হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত অনড়, অটল একক ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কারামুক্ত করেন এবং উনাকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করেন।
আক্বীদাহ্-বিশ্বাস:
পৃথিবীর বুকে যখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সকলেই মু’তাযিলাদের বাতিল আক্বীদাহ-বিশ্বাস করে তখন একক ব্যক্তি যিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার আলোকে সঠিক আক্বীদাহ্ বিশ্বাসের উপর অটল ছিলেন। এমনকি নির্মম, নিষ্ঠুর নির্যাতনেও তিনি সঠিক আক্বীদাহ হতে সামান্যতমও বিচ্যুত হননি। সুতরাং একবাক্যে বলা যায় যে, তিনি সঠিক আক্বীদায় শুধু বিশ্বাসী নয় বরং সঠিক আক্বীদায় বিশ্বাসীদের অন্যতম ইমাম ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শিক্ষকবৃন্দ:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাগদাদসহ গোটা মুসলিম জাহানের প্রায় সকল শিক্ষা কেন্দ্রে জ্ঞানের সন্ধানে বিচরণ করেন। ফলে উনার শিক্ষক হাতে গণা কয়েকজন হতে পারে না বরং উনার শিক্ষক অগণিত ও অসংখ্য।
হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “মুসনাদে আহমদ” গ্রন্থের পবিত্র হাদীছসমূহ যে সব শিক্ষক হতে গ্রহণ করেন উনাদের সংখ্যা হলো দুইশত তিরাশি (২৮৩) জন। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বহু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন। নিম্নে উনাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করা হলো-
(১) হযরত ইমাম সুফইয়ান বিন উয়ায়নাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি।
(২) ইমাম ওয়াকী বিন আল জাররাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি।
(৩) ইমাম মুহম্মদ বিন ইদরীস আশ্ শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
(৪) ইমাম আব্দুর রাযযাক আস সানআনী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
(৫) ইমাম কুতাইবাহ বিন সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি।
(৬) ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
(৭) ইমাম ইবনু আবী শাইবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)