সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘ছাদিক্ব’ লক্বব মুবারক উনার সত্যতা
, ১৪ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১২ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কতটুকু ছাদিক্ব বা সত্যবাদী হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন তা নিচের ঘটনাটি দ্বারাই কিছুটা আঁচ করা যায়।
সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি একদিন বাদ-মাগরিব রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সে সময় খুব অন্ধকার ছিলো। রাস্তা দেখা যাচ্ছিলো না। রাস্তার মধ্যে একটা কূপের মতো ছিলো। হয়তো কোনোকালে সেটা কূপ ছিলো। সেটা এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তার গভীরতা রয়েছে। তবে তাতে পানি নেই। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি হঠাৎ করে কুদরতীভাবে সে কূপের ভিতরে পৌঁছে গেলেন। কূপের পাশে একটা পাথর ছিল সেই কূপের মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু কেউ হয়তো খুলে রেখেছিল। সেই কূপের মধ্যে কোনো পানি ছিল না। নরম মাটি ছিল। দুর্বা ঘাস ছিল, যার কারণে তিনি কোনো ব্যাথা পেলেন না। ভিতরে বসে তিনি ফিকির করতে লাগলেন যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো হিকমত রয়েছে। কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো কাজই হিকমত থেকে খালি নয়।
তিনি আরো ফিকির করতে লাগলেন, মানুষ আমাকে ছাদিক্ব (সত্যবাদী) বলে। ঠিক আছে, আমি যদি ছাদিক্ব হয়েই থাকি, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে কুদরতীভাবে হিফাযত করবেন। তিনি সেখানে বসে যিকির-ফিকিরে মশগুল হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি টের পেলেন যে, মনে হচ্ছে সে রাস্তা দিয়ে কোনো লোকজন যাচ্ছে। তারা এসে সে গর্তটা দেখতে পেয়ে মনে করলো, এই গর্তে যদি কোনো মানুষ পড়ে যায় তাহলে ব্যাথা পাবে। কাজেই সেই পাথরটা এনে তারা গর্তের মুখ বন্ধ করে দিলো।
সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরেই মশগুল রইলেন। তিনি মনে মনে ফিকিরও করলেন, ঠিক আছে- আমি ছাদিক্ব, নাকি কাজিব; সত্যবাদী, নাকি মিথ্যাবাদী- সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। তিনি যিকির-ফিকিরে মশগুল রইলেন।
এমন সময় হঠাৎ বিকট একটা আওয়াজ শুনতে পেলেন। মনে হলো কেউ এসে জোরে ধাক্কা দিয়ে পাথরটা সরিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর তিনি গরম বাতাস অনুভব করলেন। মনে হচ্ছে কেউ গরম বাতাস দিচ্ছে। অতঃপর তিনি আরো অনুভব করলেন যে, কোনো কিছু উনাকে সম্মানের সাথে প্যাঁচিয়ে ধরলো। প্যাঁচিয়ে ধরে সম্মানের সাথে আস্তে করে উনাকে গর্ত থেকে তুলে যমীনের উপর রেখে দিলো। যখন রেখে দেয়া হলো তিনি দেখতে পেলেন যে, বিরাট আকারের একটি অজগর সাপ। সেটা এসে উনাকে সম্মানের সাথে প্যাঁচ দিয়ে ধরে যমীনে তুলে দিয়ে সাপটা অদৃশ্য হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!
তিনি মনে মনে ফিকির করতে লাগলেন- এটা কি হলো? তখন গায়িব (অদৃশ্য) থেকে নেদা (বলা) হলো- হে ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম! আজকে প্রমাণিত হলো যে, সত্যি আপনি ‘ছাদিক্ব’। মানুষ আপনাকে যে ‘ছাদিক্ব’ বলে থাকে তার সত্যতার প্রমাণ হলো। আপনি সত্যি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া-১/৫)
তিনি ‘ইমামুল মুহসিনীন’:
সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন- ‘ইমামুল মুহসিনীন’। অর্থাৎ তদানীন্তন সময়ের সকল মুহসিন ব্যক্তিগণ উনাদের ইমাম। মুহসিন হচ্ছেন- মু’মিন মুসলমানগণ উনাদের মধ্যে বিশেষ এক শ্রেণীর ব্যক্তিত্ব। উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা স্বয়ং আহকামুল হাকিমীন মহান আল্লাহ পাক তিনিই বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনগণ উনাদের নিকটবর্তী।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহসিনগণ উনাদেরকে বিশেষভাবে মুহব্বত করেন।” সুবহানাল্লাহ!
‘মুহসিন’ শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে- পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ, নেক্কার। তবে এখানে ‘মুহসিন’ বলতে যাঁরা ইহসানের সর্বোচ্চ দরজা মুবারক হাছিল করেছেন উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ ইহসানের দরজা হাছিলকারী আর পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ এক নয়।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক ইহসান উনার দরজা দুটি। একটি হচ্ছেন- মহান আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী ছূরতে দেখে ইবাদত করা। আর অপরটি হচ্ছেন- ইবাদতকারীকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখছেন এ ধারণা অন্তরে বদ্ধমুল হওয়া। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন- “মহান আল্লাহ পাক উনার এমনভাবে ইবাদত করবে, যেন তুমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও তাহলে ধারণা করবে যে, তিনি তোমাকে দেখতেছেন।” (মিশকাত শরীফ)
এই দুটি দরজার যেকোনো একটি দরজা যিনি হাছিল করেছেন উনাকে ‘মুহসিন’ বলে। আর যিনি প্রথম দরজাটি হাছিল করতে পেরেছেন তিনি হচ্ছেন আ’লা দরজার মুহসিন।
এই আ’লা দরজার মুহসিনগণ উনাদের ইমাম হচ্ছেন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম। যার কারণে উনাকে ইমামুল মুহসিনীন বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!
স্মর্তব্য যে, ইহসান উনার দরজা, হাছিল করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে, হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা কামিল মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া। উনার নির্দেশ মতো যিকির-ফিকির করা। ছোহবত ইখতিয়ার করা। রিয়াজত-মাশাককাত করা। সর্বোপরি শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সন্তুষ্টি হাছিল করা। এটা ব্যতীত ইহসান উনার দরজা মুবারক লাভ করা যায় না।
উল্লেখ্য যে, আমরা “মহান আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী ছূরতে দেখার বিষয়টি এজন্য বলেছি, কারণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা (বিশ্বাস) হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কেউই দুনিয়াতে হাক্বীক্বীভাবে দেখতে পাবে না। যারা হাক্বাক্বীভাবে দেখার দাবি করবে তারা কাফির হবে। যারা দেখেছেন বা দেখবেন তারা মিছালী ছূরতে দেখেছেন বা দেখবেন। সুবহানাল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)