সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অনন্য খুছুছিয়ত মুবারক
, ১৩ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৮ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১১ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কায়িনাতে একক ব্যক্তিত্ব। যিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। উনার পূর্বে অন্য কেউই পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেননি। আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউই এরূপ করতে সামর্থ্যবান হবেন না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حضرت انس رضى الله تعالى عنه قاَلَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَ حضرت أَبُو بَكْرٍ أَسَاسُهَا وَ حضرت عُمَرُ حِيطَانُهَا وَ حضرت عُثْمَانُ سَقْفُهَا وَ حضرت عَلِيٌّ عليه السلام بَابُهَا
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ইলমের শহর মুবারক। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খুঁটিস্বরূপ। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার দেয়ালস্বরূপ। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ছাদস্বরূপ। এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার দরজাস্বরূপ। (নুজহাতুল মাজালিস)
অর্থাৎ হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই ইলমের জামে’। তবে ইলম প্রকাশিত হবে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে। যা অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت حبيرة رحمة الله عليه قال خطبنا الحسن بن على عليهما السلام فقال لقد فارقكم رجل بالامس لـم يسبقه الاولون بعلم ولا يدركه الاخرون.
অর্থ: হযরত হুবায়রা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করার পর ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাসান আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র খুতবা মুবারক প্রদানকালে ইরশাদ মুবারক করেন, গতকাল এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব তোমাদের থেকে পর্দা করেছেন যিনি ইলম প্রকাশের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তীগণ উনাদের চেয়ে অগ্রগামী। আর পরবর্তীরা তো উনার নাগালই পায়নি। (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
সত্যিই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইলম মুবারক প্রকাশের ক্ষেত্রে সকলের অগ্রগামী। বলা হয়, ইলম দু’ প্রকার। জাহিরী এবং বাতিনী তথা ইলমে ফিক্বহ এবং ইলমে তাসাউফ।
ইলমে তাসাউফের অনেকগুলো সিলসিলা বা ত্বরীক্বা মুসলিম উম্মাহর মাঝে চালু রয়েছে। তবে শুধুমাত্র নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা ব্যতিত অন্য সব তরীক্বা উনার মাধ্যমেই জারি হয়েছে। মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা ইমামুল উমাম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত শাজরা শরীফ তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
ইলমে ফিক্বহর প্রথম আলোচ্য বিষয় ইলমে তাফসীর। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ইলমে তাফসীর সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال ان القران انزل على سبعة احرف ما منها حرف الا له ظاهر وباطن وان على بن ابى طالب عليه السلام عنده منه علم الظاهر وعلم الباطن.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ সাত হরফে নাযিল হয়েছে। প্রতিটি হরফেরই একটি জাহিরী এবং একটি বাতিনী অর্থ রয়েছে। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট জাহিরী-বাতিনী উভয় প্রকার ইলম মুবারকই রয়েছে। (মানাকিবু আসাদিল গালিব)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قسمت الحكمة عشرة اجزاء فاعطى على عليه السلام تسعة اجزاء والناس جزء واحدا
অর্থ: ইলম ও হিকমতকে দশ (১০) ভাগ করা হয়েছে। তন্মধ্যে নয় (৯) ভাগ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া করা হয়েছে। আর এক ভাগ মানুষদের বণ্টন করা হয়েছে। (আবূ নুয়াইম)
তাই তো, তাফসীর, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ, উছূল, ক্বাওয়ায়িদ, বালাগাত, ফাসাহাত, ফারায়েয, ইলমে তিব্ব, ইলমে হুনুরসহ সমস্ত প্রকার ইলম প্রকাশের ক্ষেত্রে উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। ইলম হাছিল করতে হলে উনার আনুষ্ঠানিক নিসবত প্রয়োজন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا مدينة العلم وعلى عليه السلام بابها فمن اراد العلم فلياته من بابه.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ইলম মুবারক উনার শহর। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার দরজাস্বরূপ। অতএব, যে ইলম হাছিল করতে চায়, সে যেন ইলমের দরজা দিয়ে আসে। (আবু নুয়াইম)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, জাহিরী ইলম তো অবশ্যই এমনকি বাতিনী ইলম তথা এমনকি বাতিনী নিয়ামত হাছিল করতে হলেও সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিসবত মুবারক বা উনাকে উসীলা হিসেবে গ্রহণ করা অতীব জরুরী।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি মানুষদেরকে নসীহত করুন। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো অনারবী। আরবীদেরকে কিভাবে নসীহত মুবারক করবো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ মুবারক-এ নূরুল বারাকাত মুবারক প্রদান করলেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিও নূরুল বারাকাত মুবারক প্রদান করলেন। আর সেই মুবারক দিন হতেই হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা’লীম দেয়া শুরু করেন।
অনুরূপভাবে নিসবত মুবারকের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি নির্দেশ মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমামুল উমাম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে জামিউল ইলম পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার তা’লীম মুবারক প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যে সুদীর্ঘ ঘটনা অনেকেরই জানা।
কাজেই উম্মাহর দায়িত্ব-কর্তব্য হলো সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শান জেনে হুসনে যন পোষণ করত উনার নিসবত মুবারক হাছিল করে রেযামন্দি হাছিলের কোশেশ করা। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন!
-আহমদ নুছাইর।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)