জীবনী মুবারক
সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনে নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বিছাল শরীফ: ৩য় হিজরী (৬২৫ খৃ:)
, ০৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নাম মুবারক- হযরত আনাস, পিতা- নদ্বর বিন দামদাম, সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনে নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পবিত্র মদীনা শরীফের প্রখ্যাত “বনু নাজ্জার” গোত্রে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাদিম, প্রখ্যাত ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত চাচা। হযরত আনাস বিন নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন উনার গোত্রের নেতা। মহিলা ছাহাবী হযরত রুবাইয়া বিনতু নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন উনার বোন। উনাদের মাতাও ছিলেন একজন ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
হযরত আনাস বিন নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শেষ আক্বাবায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।
জিহাদে অংশগ্রহণ:
হযরত আনাস ইবনে নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন অজ্ঞাত কারণে বদরের জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। উহুদের জিহাদে অংশগ্রহণ করেন এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সেদিন উনার দেহে ৮০টির উর্ধ্বে তীর, বল্লম ও তরবারীর আঘাত লেগেছিল। উনার শান মুবারকে পবিত্র সূরা আহযাব শরীফের ২৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়-
مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوْا تَبْدِيْلًا
অর্থ: ঈমানদারদের মধ্যে এমন লোক রয়েছেন, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কৃত ওয়াদা সত্য প্রমাণ করে দেখালেন। উনাদের মধ্যে কেউ স্বীয় মানত পূর্ণ করেছেন আর কেউ সময় আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। উনারা নিজেদের আচরণে কোন পরিবর্তন সূচিত করেননি। (উসুদুল গাবা)
তিনি বদরের জিহাদে উপস্থিত হতে না পারায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আনাস বিন নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মুশরিকদের সাথে আপনার প্রথম জিহাদেই আমি অনুপস্থিত রইলাম। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যদি আমি মুশরিকদের সাথে আর কোন জিহাদ পাই, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখবেন আমি কি করি! (তিনি ইহা বলেননি যে আমি দেখিয়ে দিব, কারণ তিনি যদি দৃঢ়পদ না থাকেন তবে উনার উক্তরূপ বলা ঠিক হবে না। তাই তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখবেন আমি কি করি)। (উসুদুল গাবা)
ফযীলত ও মর্যাদা:
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফে হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, হযরত আনাস বিন নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বোন হযরত রুবাইয়া বিনতে নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এক আনছারী মহিলার মুখে চপেটাঘাত করে বসেন। তাতে সেই মহিলার একটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। হযরত রুবাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার পক্ষ থেকে উনাদের নিকট ক্ষমা চাওয়া হয়, কিন্তু উনারা ক্ষমা করতে অস্বীকার করেন। উনাদেরকে দিয়াত বা ক্ষতিপূরণ দানের প্রস্তাব দেয়া হয়। উনারা তাও প্রত্যাখ্যান করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ অনুযায়ী এখন ক্বিছাছ বা বদলা অপরিহার্য। ইহা শুনে হযরত আনাস বিন নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলে উঠলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত রুবাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দাঁত ভাঙ্গা হবে? যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন সেই মহান সত্তা উনার কসম! উনার দাঁত ভাঙ্গা হবে না।
অতঃপর আকস্মিকভাবে বাদী পক্ষ দিয়াত গ্রহণে সম্মত হয়ে যায়। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার এমন অনেক বান্দা আছে, যারা উনার নামে কসম করলে তিনি নিজেই উনাদের কসম পূরণ করে দেন। উনাদেরই একজন হযরত আনাস বিন নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, উসুদুল গাবা)
উহুদের জিহাদে উনার সাহসিকতা ও বীরত্ব-ব্যঞ্জক উক্তি উনার ঈমানের দৃঢ়তা এবং উনার বিশেষ বুযুর্গী ও ফযীলতের পরিচয় বহন করে।
শাহাদাত বরণ:
উহুদের জিহাদে শত্রুর আক্রমণে মুসলমানগণ যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন, তিনি সম্মুখে অগ্রসর হলেন। হযরত সা‘দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আনাস বিন নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন হযরত আনাস বিন নদ্বর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আনাসের রব তায়ালা উনার কসম! এই যে আমি উহুদ পাহাড়ের পেছন হতে বেহেশতের সুঘ্রান পাচ্ছি। (ইছাবা)
এই বলে তিনি মুশরিকদের মধ্যে ঢুকে পড়লেন এবং জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন। যখন উনার জিসিম মুবারক পাওয়া গেল, দেখা গেল উনার শরীরে ৮০টির অধিক তরবারী ও তীরের আঘাত আছে। উনার মেয়ে উনার আঙ্গুল দেখে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন।
সূত্র: উসুদুল গাবা, ইছাবা, হিলইয়া, বিদায়া, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ।
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (৭)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৬)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মী-কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখা জায়েজ নেই
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৫)
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার সঠিক তারিখ ২৭শে রজব; মুসলমানদেরকে বিশেষ দিবসের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করতেই একটি গোষ্ঠী তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় (৩)
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)