সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম (৩)
বিলাদত শরীফ: হিজরত পূর্ব ৬৭ সন বিছাল শরীফ: ২৮ হিজরী (৬৫০ খ্রি:) বয়স মুবারক: ৯৫ বছর
, ০৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
খিদমত মুবারকের সার্বক্ষণিক আঞ্জাম দান:
হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন এই খবর শুনতে পেলেন, তিনি তখন অত্যাধিক হুযুনী শান মুবারকে (বেহুঁশী শান মুবারক) সময় অতিবাহিত করছিলেন, আমি উনার পাশেই অবস্থান করছিলাম। উনার শুশ্রুষা করার মত উনার হুজরা শরীফে আমি ব্যতীত আর কেউ ছিল না। আমি আমার সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বদিক থেকে দিবা-রাত্র নিরলসভাবে উনার সেবা শুশ্রুষা করতে লাগলাম। অতঃপর এক সুমহান রাত্রে উনার মহাসম্মানিত হুজরা শরীফ আলোকিত করে উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সন্তান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির প্রতি ইহসান করে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন, যাঁর মুবারক তাশরীফ বা আগমনে সারা পৃথিবীর ঘন অন্ধকার বিদূরিত হলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র লখতে জিগার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুই নূরুল মাগফিরাত মুবারক বা হাত মুবারক ধারণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর উনার সম্মানিত দাদা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ওজুদ পাক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোল মুবারকে নিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করে আসেন।
তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী অভিজাত ঘরের শিশুগণকে মরুভূমির মুক্ত পরিবেশে প্রতিপালিত হওয়ার জন্য ও মিষ্টভাষী আরবদের বিশুদ্ধ ভাষা আয়ত্ব করার জন্য মরুভূমিতে অবস্থানকারী কোন দায়ীর নিকট সমর্পন করা হতো। মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ওজুদ পাক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বাআহ আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম (হযরত হালিমা সা’দিয়াহ আলাইহাস সালাম) উনার নিকট দুধ পানের নিমিত্তে সমর্পন করা হলো তখনও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একমাত্র খাদিমা হিসাবে অবস্থান করছিলেন।
যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক ৬ বৎসর, তখন উনার সম্মানিতা মাতা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, উনার সম্মানিত আহাল বা যাওজুম মুর্কারম আলাইহিস সালাম উনার রওজা মুবারক যিয়ারত করে আসবেন। সে অনুযায়ী কোন এক সকালে উনারা তিনজন একত্রে- হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম ও সম্মানিত ওজুদ পাক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সিরিয়াগামী একটি বড় কাফেলার সাথে একটি বৃহৎ উটের উপর একটি হাওদায় আরোহণ পূর্বক রওয়ানা হলেন।
কাফেলা পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছতে ১০ দিন সময় লাগলো। হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মদীনা শরীফে বনু নাজ্জার গোত্রে উনার মামাদের বাড়ীতে রেখে সম্মানিত যাওজুম মুর্কারম আলাইহিস সালাম উনার যিয়ারত মুবারকে গেলেন। যে কয়েক সপ্তাহ তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে ছিলেন প্রতিদিনই তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকেসহ সম্মানিত যাওজুম মুর্কারম আলাইহিস সালাম উনার যিয়ারত মুবারকে যেতেন এবং নীরবে অশ্রু বর্ষণ করতেন।
হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে ফেরার পথে উনার জ্বর আসলো। পবিত্র মদীনা শরীফ ও মক্কা শরীফ উনাদের মাঝ-পথে “আবওয়া” নামক স্থানে তিনি অবতরণ পূর্বক অবস্থান করতে লাগলেন। অতি দ্রুত উনার মারিদ্বী শান মুবারক বেড়ে গেল। এমতাবস্থায় তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে ডেকে অল্প আওয়াজে বললেন, হে বারাকাহ! অতি সত্বর আমি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাব। আমি আমার সম্মানিত আওলাদ-সন্তান উনাকে আপনার নিকট অর্পন করলাম। তিনি যখন আমার খিদমত মুবারকে (রেহেম মুবারকে) ছিলেন তখন উনার সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনাকে হারিয়েছেন। আর এখন উনার চোখের সামনে উনার সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনাকেও হারাচ্ছেন। আপনাকে উনার সম্মানিতা মাতা উনার স্থলাভিষিক্ত হতে হবে এবং কখনও উনাকে ছেড়ে যাবেন না।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম বলেন, আমার অন্তর চৌচির হয়ে যাচ্ছিল, দুঃখে আমি ক্রন্দন করতে লাগলাম। আমার কান্না দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন এবং নূরুল মুহব্বত মুবারক (কান্না মুবারক) করতে লাগলেন। তিনি উনার সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার বাহু মুবারকের অভ্যন্তরে এসে উনার গলা মুবারক জড়িয়ে ধরলেন। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪২)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে সমস্ত উলামায়ে সূ’ ও তাদের শাগরেদ নামধারী মুসলমানরা মুশরিকদের মন্দির ও পূজায় পাহারা দিয়েছে তাদের ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা (৩)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রত্যেক মুসলমান পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা ফরয
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যে সমস্ত উলামায়ে সূ’ ও তাদের শাগরেদ নামধারী মুসলমানরা মুশরিকদের মন্দির ও পূজায় পাহারা দিয়েছে তাদের ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা (২)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)