সরকারের অবহেলায় দেশের ৩০ হাজার কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার চলে যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে।
অথচ ৫ গুণ কম খরচে একই যন্ত্রপাতি দেশেই তৈরী হচ্ছে, যা দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। সরকারের উচিত- কৃষি যন্ত্রাংশ শিল্পের পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা দেয়া।
, ১৫ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৯ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মন্তব্য কলাম
উল্লেখ্য, দেশের শতভাগ জমির ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য লাগবে মাঝারি সাইজের ন্যূনতম এক লাখ মেশিন। বর্তমানে দেশে জাপান ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের ধানকাটার মেশিন বা কম্বাইন হারভেস্টার বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো এসব মেশিন কিনে ন্যূনতম অর্থে কৃষকের ধান কেটে দিয়ে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু কৃষককে এর জন্য বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় কম্বাইন হারভেষ্টার নামক কৃষি যন্ত্রটি। এই যন্ত্রটি দিয়ে ধানকাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও একইসাথে বস্তাবন্দি করা যায়। কিন্তু কৃষক ইচ্ছে করলে এই যন্ত্রপাতি কিনতেও পারছেনা। কারণ জাপানী কোম্পানিগুলো এই একেকটি মেশিন বিক্রি করছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আর চীনা কোম্পানিগুলো বিক্রি করছে ২০ লাখ টাকা। অথচ দেশেই সাশ্রয়ী মূল্যে তৈরী হয়েছে এই কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনটি। দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ির কৃষক আনোয়ার হোসেন অনেক আগেই এই অতিমূল্যের কৃষি যন্ত্রটি দেশীয় পদ্ধতিতে মাত্র ৬ লাখ টাকায় তৈরী করেছেন।
শুধু এই কম্বাইন হারভেস্টারই নয় বাংলাদেশে প্রায় সব ধরণের কৃষি যন্ত্রপাতিই দেশীয়ভাবে উদ্ভাবিত হচ্ছে। দেশের কৃষি যন্ত্রাংশের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশের জোগানদাতা বগুড়ার ফাউন্ড্রি শিল্প। বগুড়ায় ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬২টি। এর সঙ্গে আরও কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর ফাউন্ড্রি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ওয়ার্কশপ রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজারের মতো। বগুড়ার কারখানায় অন্তত ৮০ ভাগ যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। বগুড়ায় উৎপাদিত হাজার হাজার কৃষিপণ্য ব্যবহূত হচ্ছে কৃষিকাজে। প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনের সেচপাম্প, লায়নার, পিস্টন, হস্তচালিত টিউবওয়েল, পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, লেদ মেশিন, গাড়ির ব্রেক ড্রাম, করাতকল, ফ্লাওয়ার মিল, টেক্সটাইল মিল, অয়েল মিল, এমনকি ধান কাটা মেশিনসহ অন্যান্য মেশিনের যন্ত্রাংশ। এসব যন্ত্রাংশের ওপর দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। বগুড়ায় তৈরি এই যন্ত্রাংশগুলো জেলার কৃষিকাজের চাহিদা মিটিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিকাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে কৃষি যন্ত্রাংশের যে বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে তা দেশীয় যন্ত্রাংশ শিল্পই করায়ত্ব করতে পারবে। কিন্তু এরজন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। যা এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরে দাবী করে আসছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই শিল্পের প্রতি কোনো নজরই প্রদান করা হচ্ছেনা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সরকার সংশ্লিষ্টরা সবসময়ই আমদানিনির্ভর আচরণ প্রদর্শন করে। যে যন্ত্রপাতি দেশেই অতি সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদিত হয় সেই যন্ত্রপাতির প্রতি সরকার নজর না দিয়ে, সেই শিল্পে ভর্তুকি না দিয়ে, সেই শিল্পের আধুনিকায়ন না করে বিদেশ থেকে ৫গুন বেশি দামে যন্ত্রপাতি আমদানি করছে। সমালোচক মহলের মতে, সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা একটি মহলই দেশীয় শিল্পকে ধ্বংস করে বিদেশ থেকে কয়েকগুন বেশি দামে যন্ত্রপাতি আমদানি করে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বিশাল মুনাফা পকেটস্থ করতে চাইছে বা করছে।
ফলে বছরের পর বছর ধরে দেশীয় চাহিদা পূরণ করলেও দেশীয় যন্ত্রাংশ শিল্প অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপের কারনে এই যন্ত্রপাতি প্রসারে প্রয়োজনীয় ব্যাংকঋণ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছেনা। অন্যদিকে, দেশীয় পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত এই যন্ত্রপাতি মাঠপর্যায়েও কৃষকদের কাছে পৌছানো যাচ্ছেনা। আরও এরও মূখ্য কারণ ব্যাংক ঋণ। নানা জটিলতার কারণে কৃষকরা ব্যাংক থেকে এই যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ঋণ নিতে পারছে না। সাধারণত কৃষক কৃষি যন্ত্রপাতি, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ব্যাংক ঋণ নিতে গেলে এর বিপরীতে জমিজমা সম্পত্তি বন্ধক দাবি করে ব্যাংক প্রচলিত বিধি মোতাবেক। কিন্তু এদেশে বেশিরভাগ কৃষক এখনো তেমন সচ্ছল এবং সামর্থ্যবান নয় যে, তারা ব্যাংকের চাহিদা মোতাবেক নিজের জমি, ভিটে সম্পত্তি ঋণ গ্রহণের জন্য ব্যাংকে বন্ধক দিতে পারে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা বিভিন্ন এনজিও’র কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অথবা বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে এসব যন্ত্রপাতি চড়া সুদে কিস্তিতে ক্রয় করছে। কেউ কেউ কোম্পানি অথবা ডিলারের কাছ থেকে কিস্তিতে যন্ত্রপাতি কিনতে গিয়ে বাধ্য হয়ে নগদ মূল্যের চেয়ে বেশ কয়েক লাখ টাকা বেশি প্রদান করছে। কিন্তু ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ নিয়ে যদি কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে পারতো, তাহলে তার অর্থের সাশ্রয় হতো।
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে যে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়, তা যদি শুল্কমুক্ত করা যেত, তাহলে দেশীয় কৃষি যন্ত্রপাতি অনেক সুলভ মূল্যে কৃষকের কারছে সরবরাহ করা যেত। উদাহরণস্বরুপ: দেশে উৎপাদিত পাওয়ার টিলারের দাম ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু এগুলোর যন্ত্রাংশ যদি শুল্কমুক্ত হয়, তাহলে তা ৫০ হাজার টাকায় বিপনন করা সম্ভব। এতে দেখা যাবে কৃষকেরা সহজেই এসব যন্ত্রপাতি সুলভ মূল্যে ক্রয় করে কৃষিতে অভাবনীয় পরিবর্তন ও সাফল্য বয়ে আনতে পারবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেশে কৃষিকাজে যেসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে তার বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আর এর বিপরীতে বিদেশিদের হাতে দিতে হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি আমদানি বাবদ এতো বড় অঙ্কের টাকা চলে যাওয়ার কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। অথচ সরকারের সামান্য পৃষ্ঠপোষকতাতেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি দেশ কৃষি যন্ত্রপাতিতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে।
তাই আমরা মনে করি-সরকারের উচিত হবে দেশের এই ৩০ হাজার কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার যাতে বিদেশীরা দখলে না নিতে পারে সেজন্য দেশীয় পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতিগুলো ভর্তুকি ও বাজেট বরাদ্দ করে সেগুলো মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। এতে ফসলের উৎপাদন ব্যয়ও কমবে, কৃষকও ন্যায্যম্যূল্য পাবে আবার জনগনও খাদ্যপণ্য কম দামে ক্রয় করতে পারবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঢাকা আর কত মারাত্মক দূষিত হলে ও বসবাসের অযোগ্য হলে এবং জনজীবন বিপর্যস্থ হলে বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা উঠবে? কাজ শুরু হবে? সেন্টমার্টিন নিয়ে এত হৈচৈ আর ৩ কোটি লোকের জনপদ ঢাকা নিয়ে রহস্যজনক নীরবতা!
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাপবিত্র রওজা শরীফ ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফের পবিত্র ভূমি জাজিরাতুল আরবকে অপবিত্র করে দিন দিন পরিণত করা হচ্ছে অবাধ পাপাচারের পঙ্কিলরাজ্যে নাউযুবিল্লাহ! কা’বা শরীফের আদলে তৈরি মঞ্চে চলছে খোলামেলা পোশাকে ফ্যাশন শো, উদ্দাম কনসার্ট, বিক্রি হয়েছে ৩৬ লাখ কোটি টাকার ভারতীয় সিনেমার টিকিট; পালিত হচ্ছে হ্যালোইনও! নাউযুবিল্লাহ!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ : কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা ও ক্বিয়ামতের তথ্য
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার অনবদ্য তাজদীদ ‘আত-তাক্বউইমুশ শামসী’ সম্পর্কে জানা ও পালন করা এবং শুকরিয়া আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরয। মুসলমান আর কতকাল গাফিল ও জাহিল থাকবে?
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: ভয়ঙ্কর জেদ, মহা দাম্ভিকতা, চরম সীমালঙ্ঘন, প্রতিহিংসা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ইত্যাদি কুরিপুর কারণে সরকারের পতন কিন্তু কুরিপুর সংজ্ঞা, প্রতিকার, পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়ার বর্ণনা সংবিধানে তথা রাষ্ট্রীয় কোন কিতাবে নেই তাহলে রাষ্ট্রের সংস্কার হবে কীভাবে? নাগরিক সুরক্ষা হবে কেমনে?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচারণার বিপরীতে রপ্তানি আসলে কতটা চাঙা হবে প্রকৃত রপ্তানি আয় আসলে কত? ১০ বছরে রপ্তানি বেশি দেখানো হয়েছে ৬৫ বিলিয়ন ডলার পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়নের রাজনীতির মিথ্যাবুলি, মহা সাগর চুরি আর অর্থপাচারের নিকৃষ্ট কাহিনী
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা।
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১লা জানুয়ারি ২০২৫ থেকে সুইজারল্যান্ডে মুখ ঢেকে রাখলেই প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা (নাউযুবিল্লাহ) বোরকা পড়াকে সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপীয় দেশ পর্দার আড়ালে নারীদের বন্দী, বৈষম্য এবং পিছিয়ে পড়ার অপবাদ দিলেও বাস্তবতা হচ্ছে গোটা ইউরোপ-আমেরিকায় নারীর প্রতি বৈষম্য হয়রানি, সহিংসতা, অত্যাচার আর ব্যভিচারের মাত্রা ভয়াবহ পশ্চিমাদের বোরকা নিষিদ্ধের প্রবনতা শুধুই ইসলাম আর মুসলিম বিদ্বেষ (পর্ব-১)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)