সম্মানিত হিজরী তৃতীয় সনে রাজী’র জিহাদ ও মর্মান্তিক ঘটনা (১)
, ০৩ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
হযরত আবু মুহম্মদ আব্দুল মালিক ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, হযরত যিয়াদ ইবনে আব্দুল্লাহ বাককায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব মুত্তালিবী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, হযরত আসিম ইবনে উমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, সম্মানিত উহুদ জিহাদের পর আযল ও কারাহ গোত্রের একদল লোক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আযল ও কারা হচ্ছে হাওন ইবনে খুযাইমা ইবনে মুদরিকার শাখা গোত্র।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, হাওনকে হূনও বলা হয়।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সেই গোত্রের লোকজন এসে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে বলল: ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের গোত্রে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিস্তার লাভ করেছে। কাজেই আপনার সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে কিছু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে আমাদের সাথে দয়া করে পাঠিয়ে দিন, যাতে উনারা আমাদেরকে মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুকুম-আহকাম সম্পর্কে শিক্ষা দিবেন, আমাদেরকে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করাবেন এবং মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিস্তারিত তা’লীম তালক্বীন মুবারক আমাদেরকে দিবেন। তখন তাদের কথার প্রেক্ষিতে কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তাদের সাথে পাঠানো হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে-
فَبَعَثَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَفَرًا سِتّةً مِنْ أَصْحَابِهِ وَهُمْ حَضْرَتْ مَرْثَدُ بْنُ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَحَضْرَتْ خَالِدُ بْنُ الْبُكَيْرِ اللّيْثِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَحَضْرَتْ عَاصِمُ بْنُ ثَابِتِ بْنِ أَبِي الْأَقْلَحِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَحَضْرَتْ خُبِيْبُ بْنُ عَدِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَحَضْرَتْ زَيْدُ بْنُ الدّثِنّةِ بْنِ مُعَاوِيَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَحَضْرَتْ عَبْدُ اللّهِ بْنُ طَارِقٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সাথে ছয়জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পাঠিয়ে দিলেন। উনারা হচ্ছেন- ১. হযরত মারছাদ ইবনে আবূ মারছাদ গানাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ২. হযরত খালিদ ইবনে বুকাইর লায়সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৩. হযরত আসিম ইবনে ছাবিত ইবনে আবুল আক্বলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৪. হযরত খুবাইব ইবনে ’আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৫. হযরত যায়িদ ইবনে দাসিনা ইবনে মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও ৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ত্বারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। (উমদাতুল ক্বারী, উয়ূনুল আছার, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
কোন কোন বর্ণনায় দশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কথা উল্লেখ রয়েছে। (ইবনে সা’দ, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
স্মরণীয় যে, হযরত মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মিত্র। হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন ‘আদী ইবনে কা’ব গোত্রের মিত্র। হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন জাহজাবা ইবনে কুলফা ইবনে আমর ইবনে আওফ গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তি। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন বানূ বায়যা ইবনে আমর ইবনে যুরাইকা ইবনে আবদ হারিছা ইবনে মালিক ইবনে গাযব ইবনে জুশাম ইবনে খাযরাজ গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তি এবং হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন বানূ জাফর ইবনে খাযরাজ ইবনে আমর ইবনে মালিক ইবনে আওসের মিত্র। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মারছাদ ইবনে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সকলের আমীর মনোনীত করেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত মারছাদ ইবনে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বাকিদেরকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। হিজাযের প্রান্তভাগে হাদআর উপকন্ঠে হুযাইল গোত্রের একটি খালের নাম রাজী’। উনারা সেখানে পৌঁছলে আযল ও কারাহ গোত্রের লোকেরা উনাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। নাউযুবিল্লাহ! তারা বানূ হুযাইলকে সাহায্যের জন্য ডাকলো। দেখতে না দেখতে তরবারিধারী লোকজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ঘিরে ফেললো। উনারা সাওয়ারী হতে অবতরণ করারও অবকাশ পেলেননা। এ অবস্থাতেই উনারা তরবারি মুবারক হাতে নিয়ে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি মুবারক গ্রহণ করলেন। শত্রুরা ভয় পেয়ে বলল, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা আপনাদের শহীদ করতে চাই না। আসলে আমরা আপনাদের বিনিময়ে পবিত্র মক্কাবাসীদের থেকে কিছু অর্থ আদায় করতে চাই। আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারকে ওয়াদা দিচ্ছি আপনাদেরকে শহীদ করব না।
একথা শুনে হযরত মারছাদ ইবনে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত খালিদ ইবনে বুকাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা কোন মুশরিকদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি কখনও গ্রহণ করব না।
তখন হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবৃত্তি করলেন-
مَا عِلّتِي وَأَنَا جَلْدٌ نَابِلٌ ... وَالْقَوْسُ فِيهَا وَتَرٌ عُنَابِلُ
অর্থ: ‘আমার কিসের দুর্বলতা, যেখানে আমি একজন শক্তিমান বর্শাধারী? আমার রয়েছে ধনুক, অতি মজবুত তার ছিলা।
تَزِلّ عَنْ صَفْحَتِهَا الْمَعَابِلُ ... الْمَوْتُ حَقّ وَالْحَيَاةُ بَاطِلُ
তার থেকে নিক্ষিপ্ত হয় দীর্ঘ ফলাবিশিষ্ট তীর। প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুই পরম সত্য, জীবন সেতো মিথ্যা।
وَكُلّ مَا حَمّ الْإِلَهُ نَازِلُ ... بِالْمَرْءِ وَالْمَرْءُ إلَيْهِ آئِلُ إنْ لَمْ أُقَاتِلْكُمْ فَأُمّي هَابِلُ
মহান আল্লাহ পাক তিনি যা স্থির করেছেন, তা মানুষের জন্য অবধারিত। শেষ পর্যন্ত মানুষতো উনারই নিকট ফিরে যাবে। শোন, আমি যদি তোমাদের সাথে জিহাদ না করি, তবে আমার মা হোক সন্তানহারা।’ (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, আর রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, তারিখুল খমীস, উয়ূনুল আছার, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)