সম্মানিত হিজরী তৃতীয় সনে রাজী’র জিহাদ ও মর্মান্তিক ঘটনা (৩)
, ১৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফের কুরাইশ কাফির মুশরিকদের কাছে হুযাইল গোত্রের দু’জন বন্দী ছিলো। তাদের বিনিময়ে তারা হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ও হযরত ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বিক্রি করে দেয়। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বানূ নাওফেলের মিত্র হুজাইর ইবনে আবূ ইহাব উকাবা ইবনে হারিছ ইবনে আদি ইবনে নাওফেলের পক্ষে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ক্রয় করল। হুজাইরের পিতা আবূ ইহাব ছিলো উকবার পিতা হারিছ ইবনে আমিরের বৈপিত্রেয় ভাই। হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করে উকবা তার পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিবে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হারিছ ইবনে আমির ছিলো আবূ ইহাবের মামা, আর আবূ ইহাব ছিল উসাইদ ইবনে আমর ইবনে তামীম গোত্রের লোক। কারো মতে, সে বানূ তামীমের শাখা আদাস ইবনে যায়িদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে দারিম গোত্রের লোক।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া ইবনে খালফের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হযরত যায়িদ ইবনে দাসিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কিনে নেয়। সে উনাকে শহীদ করার জন্য নিজ মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) নিসতাসের সাথে হারাম এলাকার বাইরে তানয়ীম নামক স্থানে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ কুরাইশ গোত্রের কতিপয় কাফির মুশরিক উপস্থিত ছিল। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে যখন শহীদ করার জন্য সামনে আনা হয়, তখন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বললেন, হে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি বলুনতো আপনার এ স্থলে যদি এখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক আনতেন এবং আপনার পরিবর্তে উনাকে আমরা শহীদ করতাম, আর আপনি নিজ পরিবারবর্গের কাছে নিরাপদ চলে যেতেন, তা কি আপনি পছন্দ করতেন না? তিনি দীপ্ত কন্ঠে বললেন-
وَاللَّهِ مَا أُحِبُّ أَنَّ مُحَمَّدًا صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْآنَ فِي مَكَانِهِ الَّذِي هُوَ فِيهِ تُصِيبُهُ شَوْكَة تؤذيه، وأنّى جَالِسٌ فِي أَهْلِي. قَالَ: يَقُولُ حَضْرَتْ أَبُو سُفْيَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَا رَأَيْتُ مِنَ النَّاسِ أَحَدًا يُحِبُّ أَحَدًا كَحُبِّ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ مُحَمَّدًا صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ،
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এখন যেখানে অবস্থান মুবারক করছেন সেখানেও যদি উনার জিসিম মুবারকে কেউ একটি কাটা ফুঁটিয়ে উনাকে কষ্ট দেয়, আর আমি আমার পরিবার পরিজনের কাছে বসে থাকা সেটাও আমার পছন্দ নয়। একথা শুনে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেমন উনাকে মুহব্বত করেন, এমন মুহব্বত আমি আর কাউকে কখনও করতে দেখিনি।’ সুবহানাল্লাহ! এরপর নিসতাস উনাকে শহীদ করে ফেলল। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উপর খাছ রহমত মুবারক বর্ষণ করুন। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, ছহীহুল আছার ওয়া জামীলুল ইবর, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলক)
বাকি থাকলেন হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। হুজাইর ইবনে আবূ ইহাবের বাঁদী মারিইয়ার সূত্রে যিনি পরবর্তীতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ নুজাইহ আমার (ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার) কাছে বর্ণনা করেছেন। মারিইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি বলেন, হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কাছে, আমার একটি কক্ষে বন্দী ছিলেন। আমি একদিন উনার কাছে উপস্থিত হই। আমি দেখতে পাই যে উনার হাত মুবারকে এক থোকা আঙুর, তিনি তা থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছেন। আমার জানা মতে মহান আল্লাহ পাক উনার এ যমীনে তখন কোথাও এ আঙুর ছিল না।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত আসিম ইবনে উমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে নুজাইহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উভয়ে বর্ণনা করেন যে, মারিইয়া বলেছেন, সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারকের পূর্বে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বললেন, আপনি আমার কাছে একটি ক্ষুর পাঠিয়ে দিন। সম্মানিত বিছালী শান মুবারকের আগে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নেই। আমি পাড়ার একটি শিশুকে দিয়ে উনার কাছে একটি ক্ষুর পাঠিয়ে দিলাম। শিশুটি উনার কাছে প্রবেশ করলে আমার চেতনা ফিরে এলো এবং আমি বললাম, আমি এ কি করলাম? ঐ ব্যক্তিতো শিশুটিকে হত্যা করে আগেই নিজের সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের প্রতিশোধ নিতে পারেন। হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। শিশুটির মা এ অবস্থা দেখে খুবই বিচলিত হয়ে পড়ে, হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তা বুঝতে পারলেন। তখনও উনার হাত মুবারকে ক্ষুরটি ছিলো। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে পাঠিয়েছে নিশ্চয়ই সে ভয় পাচ্ছে এবং ভাবছে আমি এই ক্ষুর দিয়ে তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি। আমি ইনশাআল্লাহ তা করবো না। এই বলে তিনি শিশুটিকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।’ (সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)