সম্মানিত হিজরী তৃতীয় সনে রাজী’র জিহাদ ও মর্মান্তিক ঘটনা (৬)
, ০৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ لِلَّهِ مَلَكًا مُوَكَّلًا بِمَنْ يَقُولُ: يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، فَمَنْ قَالَهَا ثَلَاثًا قَالَ الْمَلَكُ: إِنَّ أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ قَدْ أَقْبَلَ عَلَيْكَ فَاسْأَلْ"
অর্থ: “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে একজন সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম নিয়োজিত রয়েছেন। উনার দায়িত্ব মুবারক হচ্ছে, যদি কোন বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে, ‘ইয়া আরহামার রহিমীন’ তিনবার পাঠ করে, তখন সেই সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি তার জবাবে বলেন, ‘আরহামুর র-হিমীন’ আপনার প্রতিও মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রহমত মুবারক বর্ষণ করতেছেন, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে আবেদন করুন, দোয়া করুন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরিকে হাকিম, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত আবু মুয়াল্লাক আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবন মুবারকে এমন একটি ওয়াক্বিয়া মুবারক উল্লেখ করা হয়, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বর্ণনা করেছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে হযরত আবু মুয়াল্লাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন বড়ই ইবাদতগুযার, পরহেযগার ও আল্লাহওয়ালা। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী ব্যক্তি। তিনি ব্যবসা উপলক্ষে মাঝে মাঝেই ছফর মুবারক করতেন। এমনি এক ছফরে উনার পথ রোধ করে দাঁড়ায় এক ডাকাত। সেই ডাকাত ছিলো তীর তরবারি দ্বারা সজ্জিত।
ডাকাত উনাকে বলল, টাকা-পয়সা, মাল-সামানা সব এখানে রাখুন, আমি এখনই আপনাকে শহীদ করবো। হযরত আবূ মুয়াল্লাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এই নাও সকল সম্পদ ও টাকা, তোমারতো এগুলোর চাহিদা, আর সবই এখানে রয়েছে, তুমি এসব নিয়ে নাও। আমার জানের ক্ষতি করার কি দরকার? ডাকাত বলল, আপনার জানেরই দরকার আমার। হযরত আবূ মুয়াল্লাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ডাকাতের এ জবাব শুনে বললেন, ঠিক আছে, তবে তুমি আমাকে দু’ রাকাআত পবিত্র নামায পড়ার সুযোগ দাও। ডাকাত বলল, পবিত্র নামায আপনি যত পড়তে চান পড়তে পারেন। হযরত আবু মুয়াল্লাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার কথা শুনে দু’ রাকআত পবিত্র নামায আদায় করলেন।
হযরত আবূ মুয়াল্লাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র নামায আদায়ের পর দোয়া মুবারকও করলেন-
يَا وَدُودُ يَا ذَا الْعَرْشِ الْمَجِيدُ، يَا فَعَّالًا لِمَا تُرِيدُ، أَسْأَلُكَ بِعِزِّكَ الَّذِي لَا يُرَامُ، وَمُلْكِكَ الَّذِي لَا يُضَامُ، وَبِنُورِكَ الَّذِي مَلَأَ أَرْكَانَ عَرْشِكَ أَنْ تَكْفِيَنِي شَرَّ هَذَا اللِّصِّ، يَا مُغِيثُ أَغِثْنِي،
অর্থ: “আয় পরম প্রিয় মহান আল্লাহ পাক! আয় মহাসম্মানিত আরশে মুয়াল্লা উনার অধিকারী। আয় কার্যসম্পাদনকারী! আপনি যা ইচ্ছা পোষণ করেন তা সম্পাদন করেন। আমি আপনার নিকট এমন সম্মান-ইজ্জত আরজী করছি যার মধ্যে ক্ষয় নেই, আপনার কাছে এমন ক্ষমতা চাচ্ছি যার মধ্যে কোন জুলুম নেই, আপনার কাছে এমন নূর মুবারক চাচ্ছি যা দ্বারা পূর্ণ করেছেন মহাসম্মানিত আরশে মুয়াল্লার স্তম্ভ সমূহ। আর এটাই এই ক্ষতিসাধনকারীর ক্ষতিসাধন থেকে আমাকে রক্ষা করবে। আয় আশ্রয়দানকারী! আমাকে আশ্রয় দান করুন।” (আত তারগীব ফিদ-দুয়া, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
তিনি উক্ত দোআ মুবারক তিনবার করলেন। দোয়া মুবারক শেষ হতেই দেখলেন, হাতে বর্শা নিয়ে এক ঘোড়সাওয়ার ঐ ডাকাতের দিকে এগিয়ে গেল এবং বর্শা দিয়ে ডাকাতের কর্মকান্ডের অবসান ঘটিয়ে দিলেন। হযরত আবূ মুয়াল্লাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি কে? বর্শাধারী ব্যক্তি বললেন, আমি চতুর্থ আকাশের এক সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (কারামাতুল আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিম, আত-তারগীব ফিদ-দুয়া’, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, উসুদুল গবা, হায়াতুস সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অর্থাৎ কেউ বিপদগ্রস্ত হলে কোন বান্দা এবং উম্মত যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনাদের ক্বায়িম-মাক্বাম, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে ডাকে তাহলে সেই বান্দা ও উম্মতের ডাকে উনারা সারা দিয়ে থাকেন এবং সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত দূর করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! স্বীয় মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে বিপদ-আপদ বা যে কোন মুছীবতে ডাকলে সেই সম্মানিত শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিও সেই মুরীদের ডাকে সরাসরি সাড়া দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)