সম্মানিত হিজরী তৃতীয় সনে রাজী’র জিহাদ ও মর্মান্তিক ঘটনা (৫)
, ২৬ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১২ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আশহুরে হারাম (নিষিদ্ধ মাসসমূহ) পর হওয়া পর্যন্ত হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাদের কাছে বন্দী থাকেন এরপর তারা উনাকে শহীদ করে। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
এক সম্মানিত নারী বলেন-
وَاللهِ مَا رَأَيْتُ أَسِيرًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ حَضْرَتْ خُبَيْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَاللهِ لَقَدْ وَجَدْتُهُ يَوْمًا يَأْكُلُ قِطْفًا مِنْ عِنَبٍ فِي يَدِهِ وَإِنَّهُ لَمُوثَقٌ بِالْحَدِيدِ وَمَا بِمَكَّةَ مِنْ ثَمَرَةٍ وَكَانَتْ تَقُولُ إِنَّهُ لَرِزْقٌ رَزَقَهُ اللهُ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে ভালো বন্দী আমি আর কখনো দেখি নাই। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি একদা উনার নিজ হাতে খেজুর ছড়া হতে খেজুর খেতে দেখেছি, অথচ তখন পবিত্র মক্কা শরীফে কোন ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। আর তিনি ছিলেন সে দিনগুলোতে বন্দী ও বেঁড়িবাধা। আর এসব খেজুর দূর থেকে নিয়ে আসারও কোন সুযোগ ছিল না। সুবহানাল্লাহ! কেউ কেউ বলেন, নিশ্চয়ই ইহা ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এক প্রদত্ত বিশেষ রিযিক।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সুনানে নাসায়ীল কুবরা, ইবনে হাব্বান, মুসনাদে আহমদ, হুলিয়াতুল আউলিয়া, উমদাতুল ক্বারী, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হায়াত মুবারকে পবিত্র দু’রাকায়াত নামায আদায়ের উছীলায় মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে গায়িবী মদদের বিষয় একটি ঘটনা ঘটেছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আর ঘটনাটি ছিলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত দিদার মুবারকে যাওয়ার পূর্বের। একদা হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তায়ালা আনহু তিনি তায়িফ নামক স্থান থেকে ফিরে আসবেন, এজন্য তিনি একটি খচ্চর ভাড়া করেন। খচ্চরের মালিকও উনার সাথে ছিলো। লোকটি পথ চলতে চলতে এক নির্জন স্থানে উনাকে নিয়ে এলো। সেখানে অনেক মৃত লোকের দেহ পড়েছিলো। সেই স্থানেই খচ্চরের মালিক হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও শহীদ করতে উদ্যত হলো। তখন তিনি তার কাছে দু’রাকায়াত নামায আদায় করার অনুমতি চাইলেন। লোকটি ঠাট্টাভরা কন্ঠে বলল, ঠিক আছে, আপনি দু’রাকায়াত নামায আদায় করে নিতে পারেন। আপনার আগে এই সমস্ত লোকগুলোও নামায পড়ার অনুমতি চেয়েছিল। তারা নামায পড়লেও তাদের সে নামাযে কোন লাভ হয় নাই। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দু’রাকায়াত পবিত্র নামায আদায় করলেন। সে লোকটি উনাকে শহীদ করতে আসছে দেখে তিনি পাঠ করলেন,
يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
অর্থ: ‘হে মহাসম্মানিত সর্বাধিক দয়ালু মহান আল্লাহ পাক!’ তিনি এ ইসমে আ’যম মুবারক বলার সাথে সাথে গায়েবী আওয়াজ শোনা গেল, উনাকে শহীদ করো না। লোকটি হঠাৎ এ আওয়াজ শুনে বেশ ভয় পেয়ে গেল এবং এদিক সেদিক কাউকে দেখতে না পেয়ে বেশ ঘাবড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর পুনরায় এ অপকর্মের ইচ্ছায় যখন সামনে এগিয়ে এলো তখন হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পুনরায় পাঠ করলেন-
يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
অর্থ: ‘হে মহাসম্মানিত সর্বাধিক দয়ালু মহান আল্লাহ পাক!’ লোকটি আবার গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেল এবং পিছনে সরে গেল। তৃতীয় দফা আবার যখন সামনে এগিয়ে আসতে লাগল, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পুনরায় পাঠ করলেন-
يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
অর্থ: ‘হে মহাসম্মানিত সর্বাধিক দয়ালু মহান আল্লাহ পাক!’
তৃতীয়বার ‘ইয়া আরহামার রহিমীন’ বলার সাথে সাথে দেখা গেল, এক ঘোড়সাওয়ার কোথা থেকে এসে সেই খচ্চরওয়ালা লোকটিকে বর্শা দিয়ে আঘাত করলো, সেই বর্শা মুহূর্তের মধ্যে তার বুক ভেদ করে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে লোকটি মারা গেল। এরপর সেই ঘোড়াওয়ালা হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, প্রথমবার আপনি যখন ‘ইয়া আরহামার রহিমীন’ এই সম্মানিত বাক্য মুবারক পাঠ করেছেন, তখন আমি ছিলাম সপ্তম আসমানে। দ্বিতীয়বার যখন আপনি পাঠ করলেন তখন আমি প্রথম আসমানে এবং তৃতীয়বার যখন আপনি তা পাঠ করেন তখন আমি আপনার সামনে চলে এলাম। সুবহানাল্লাহ! (সুনানে তিরমিযী শরীফ, মা’রিফাতুস সুনান, মুসতাদরিকে হাকিম, আদ দুয়ায়ে লিত-ত্ববারানী, শুয়াইবুল ঈমান, মা’রিফাতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, মাজালিছুল উলামা)
আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ ঘটনাটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আনুষ্ঠানিক দুনিয়াবী হায়াত মুবারকের সময়ই সংঘটিত হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)