সম্মানিত হিজরী তৃতীয় সনে রাজী’র জিহাদ ও মর্মান্তিক ঘটনা (৪)
, ২১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২২ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরপর শত্রুরা হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে বের হলো।
তানঈম নামক স্থানে পৌঁছে তারা যখন উনাকে শূলবিদ্ধ করতে চাইল, তখন তিনি তাদের বললেন, তোমরা আমাকে দু’রাকায়াত পবিত্র ছলাত বা নামায আদায় করার সুযোগ দাও? তারা বলল, অসুবিধা নেই, আদায় করে নিন।
তিনি মনের খুশু-খুযুর সাথে অতি সুন্দরভাবে দু’রাকায়াত ছলাত মুবারক আদায় করে নিলেন। এরপর তাদের সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমরা হয়ত ভাবছো আমি বিদায়ের ভয়ে ছলাত দীর্ঘ করছি, মূলত সেটা নয়। তোমরা এরূপ ধারণা না করলে আমি আরও দীর্ঘ ছলাতে রত হতাম।
সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য বিদায় প্রাক্কালে দু’রাকায়াত পবিত্র ছলাত আদায় করা সুন্নত। এ সম্মানিত সুন্নত মুবারক সর্বপ্রথম হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই চালু করেন। সুবহানাল্লাহ!
তারপর শত্রুরা উনাকে শূলে চড়াল। তারা উনাকে বাঁধা শেষ করলে তিনি দু’আ মুবারক করলেন-
اللهُمّ إنّا قَدْ بَلّغْنَا رِسَالَةَ رَسُولِك، فَبَلّغْهُ الْغَدَاةَ مَا يُصْنَعُ بِنَا، ثُمّ قَالَ اللهُمّ أَحْصِهِمْ عَدَدًا، وَاقْتُلْهُمْ بَدَدًا وَلَا تُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا. ثُمّ قَتَلُوهُ رَحِمَهُ اللهُ.
অর্থ: ‘ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হাদীছ শরীফ অর্থাৎ কথা মুবারক পৌঁছে দিয়েছি। দয়া করে আপনি আমাদের সাথে এদের ঘৃনিত আচরণের সংবাদ আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পৌঁছে দিন।
ইয়া বারী ইলাহী! এদের সকলকে গুনে গুনে এক এক করে খতম করে দিন। কাউকে নিস্তার দিবেন না। অবশেষে তারা উনাকে শহীদ করল। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।’
হযরত মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলতেন, সেদিন হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত বিদায় কার্য দেখতে যারা সমবেত হয়েছিল, আমি তাদের একজন ছিলাম।
حَضَرْتُهُ يَوْمَئِذٍ فِيمَنْ حَضَرَهُ مَعَ حَضْرَتْ أَبِي سُفْيَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، فَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يُلْقِينِي إلَى الْأَرْضِ فَرْقًا مِنْ دَعْوَةِ حَضْرَتْ خُبَيْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَكَانُوا يَقُولُونَ: إنَّ الرَّجُلَ إذَا دُعِيَ عَلَيْهِ، فَاضْطَجَعَ لِجَنْبِهِ زَالَتْ عَنْهُ.
অর্থ: আমার পিতা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে আমি গিয়েছিলাম এবং সেখানে উপস্থিত হই। (তখনও আমরা সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করি নাই)। হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বদদোয়া মুবারকের কারণে আমার উপর লা’নত পড়ার ভয়ে আমার পিতা আমাকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছিলেন।
তখন এই ধারণা বা কথা প্রচলন ছিলো যে, নিশ্চয়ই কারো প্রতি অভিসম্পাত করা হলে তৎক্ষণাৎ সে যদি মাটিতে শুয়ে পড়ে, তবে তাকে সে অভিসম্পাত স্পর্শ করবে না।’ (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আর রওদ্বুল উনূফ, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার জনৈক সাথী বর্ণনা করেন যে, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বানূ জুমাহ এর হযরত সাঈদ ইবনে আমির ইবনে হিযয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শামের এক অংশের গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যে লোকের সামনে হঠাৎ মুর্ছা যেতেন।
এ কথা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানানো হলো এবং বলা হলো, হযরত সাঈদ ইবনে আমির ইবনে হিযয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অবসাদগ্রস্ত। নাঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এক সাক্ষাৎকারে উনাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন।
তিনি বললেন, হে হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার মাঝে মধ্যে এসব কি হয়? তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার কোন অসুখ নেই।
তবে আসল ব্যাপার এই যে, হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে যখন শহীদ করা হয়, তখন আমি সেখানে উপস্থিত দর্শকদের মাঝে ছিলাম। আমি উনার বদদোয়া শুনেছিলাম। তাই যে কোন মজলিসে সে কথা আমার মনে পড়লেই আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি।
একথা শোনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বেমেছাল মর্যাদা মুবারক স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)