সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে (নববর্ষ) বা নওরোজ পালন করা হারাম (২)
, ২৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ০১ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন পালন করা হারামের দলীল:
হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟ قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে যখন মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন, তখন তাদের দু’টি দিন ছিল, যেখানে তারা খেলা-ধুলা করত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এ দু’টি দিন কি? তারা বলল: আমরা এতে জাহিলি যুগে খেলা-ধুলা করতাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তার (এ দুইটি দিনের) পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন: পবিত্র ঈদুল আদ্বহা ও পবিত্র ঈদুল ফিতর”। (আবূ দাউদ শরীফ ১১৩৪, আহমদ শরীফ: ১৩২১০, হাকিম শরীফ: ১১২৪)
ঐ দু’টি দিন ছিল ‘নওরোজ’ বা নববর্ষ। অর্থাৎ সৌরবর্ষের প্রথম দিন এবং ‘মেহেরজান’ বছরে এইদিন রাত্রি-দিন সমান হয়।
যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
مَنْ تَنَافَى أَرْضَ الأَعَاجِمِ فَصَنَعَ نَيْرُوزَهُمْ وَمَهْرِجَانِهِمْ حُشِرَ مَعَهُمْ
অর্থ: যে অনারব দেশ বিচরণ করে, অতঃপর তাদের নওরোজ ও মেহেরজান উৎযাপন করে, তাদের সাথে তাকে উঠানো হবে”। (সুনানে বায়হাক্বী শরীফ ২য় খ-, ৩২৫ পৃষ্ঠা)
নওরোজ বা বছরের পহেলা দিন পালন করা সম্পর্কে ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের ফতওয়া:
(১) ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: “নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়িয। এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; এবং কুফরী”। (তাবইনুল হাকায়িক : ৬/২২৮)
(২) ইমাম হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন:
ক) ফতওয়ায়ে শামীসহ আরো অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছেন-
قَالَ حَضْرَتْ اَبُوْ حَفْصِ نِ الْكَبِيْرُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ لَوْ اَنَّ رَجُلًا عَبَدَ اللهَ خَمْسِيْنَ سَنَةً ثُمَّ اَهْدٰى لِمُشْرِكٍ يَوْمَ النَّيْرُوْزِ بَيْضَةً يُرِيْدُ تَعْظِيْمَ الْيَوْمِ فَقَدْ كَفَرَ وَحَبِطَ عَمَلُه
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “কোনো ব্যক্তি যদি ৫০ বছর মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করে, তারপর সে নওরোজকে তা’যীম করে সেদিন কোনো মুশরিক বা অন্য কাউকে একটি ডিমও দান করে, তাহলে অবশ্যই সে কুফরী করবে এবং তার জিন্দেগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। ” (ফতওয়ায়ে শামী ২৯/৩৩৮, তাবঈনুল হাক্বাইক্ব ৬/২৮৮, আল বাহ্রুর রায়েক্ব ২৫/৫ ইত্যাদি)
খ) উক্ত কিতাবসমূহে আরো উল্লেখ রয়েছে-
رَجُلٌ اِشْتَرٰى يَوْمَ النَّيْرُوْزِ شَيْئًا لَمْ يَكُنْ يَشْتَرِيْهِ قَبْلَ ذٰلِكَ اِنْ اَرَادَ بِه تَعْظِيْمَ ذٰلِكَ الْيَوْمِ كَمَا يُعَظِّمُهُ الْمُشْرِكُوْنَ كَفَرَ
অর্থ: “কোনো ব্যক্তি নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন এমন কিছু খরিদ করলো যা সে পূর্বে খরিদ করতো না, এর মাধ্যমে সে যদি ঐ দিনকে সম্মান করতে চায়, যেমন মুশরিকরা সম্মান করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। ” নাউযুবিল্লাহ! (ফতওয়ায়ে শামী ২৯/৩৩৮, তাবঈনুল হাক্বাইক্ব ৬/২৮৮, আল বাহ্রুর রায়েক্ব ২৫/৫ ইত্যাদি)
গ) “নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে, তবে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে”
(৩) হাম্বলী মাযহাবের ফিকাহ গ্রন্থ ‘আল- ইকনা’-তে বলা হয়েছে- “কাফিরদের উৎসবে যোগদান করা, সেই দিন উপলক্ষে বেচা-বিক্রি করা ও উপহার বিনিময় করা হারাম”।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الحلال بين، والحرام بين
অর্থাৎ হালাল সুস্পষ্ট আর হারামও সুষ্পষ্ট। (বুখারী শরীফ)
অতএব, সম্মানিত শরীয়ত উনার কোনো বিষয় যদি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার চার দলীলের কোনো একটি দ্বারাও যদি হালাল বা হারাম সাব্যস্ত হয়, তবে সেই হালাল বিষয়কে হারাম বলা আর হারাম বিষয়কে হালাল বলা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে (নববর্ষ) বা নওরোজ পালন করা হারাম (৩)
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘হাইস’
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার “হারীসাহ
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে (নববর্ষ) বা নওরোজ পালন করা হারাম (১)
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সেলাইবিহীন সুন্নতী ইযার বা লুঙ্গি
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি ও উপকারিতা : দুধজাতীয় খাবার
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রতিক্ষেত্রে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ করা ফরয। কোন অবস্থাতেই কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করা যাবে না (১)
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাবারের সময় দস্তরখানা ব্যবহার করা সুন্নত
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
শীতল-ঠান্ডা এবং মিঠা পানি পান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল “আনার বা ডালিম”
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কাফির-মুশরিকদের সঙ্গে কখনই সাদৃশ্য রাখা যাবে না
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন ঘুম বা বিশ্রামের জন্য সুন্নতী চকি
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)