পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল
, ২৩ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২০ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
উশর শব্দের অর্থ
عُشْرٌ ‘উশর’ শব্দখানা আরবী, যা ‘আশারাতুন’ (দশ) শব্দ হতে এসেছে। উনার আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- ‘এক দশমাংশ’। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায়, যমীন থেকে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য তথা ফল ও ফসলের যাকাতকে উশর বলে।
উশর সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَنفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِـمَّآ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ.
অর্থ : “তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল সম্পদ হতে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে যমীন হতে উৎপন্ন করেছি তা হতে দান করো। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ
অর্থ : “ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। ” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)
অর্থাৎ যমীন থেকে উৎপাদিত ফল ও ফসলের যাকাতকে উশর বলে। ফল ও ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ সম্মানিত যাকাত হিসেবে আদায় করাকে উশর বলে। আর ফল ও ফসলের ২০ ভাগের ১ ভাগ সম্মানিত যাকাত হিসেবে আদায় করাকে নিছফু উশর বলে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَالِـمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اَبِيْهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِيْمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُوْنُ اَوْ كَانَ عَثَرِيًّا اَلْعُشْرُ وَمَا سُقِىَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ.
অর্থ : “হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বৃষ্টির পানি, প্রবাহিত ঝর্ণার পানি বা মাটির স্বাভাবিক আর্দ্রতা থেকে (কোন সেচ ব্যবস্থা ছাড়া) আপসে আপ যে ফল বা ফসলাদি উৎপাদিত হয়,
সে ফল ও ফসলের এক দশমাংশ (১০ ভাগের এক ভাগ বা ১০%) সম্মানিত যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে (আরবীতে যাকে উশর বলে)। আর সেচের মাধ্যমে যে ফল বা ফসল উৎপন্ন হয় তা থেকে এক-দশমাংশের অর্ধেক (২০ ভাগের এক ভাগ বা ৫%) সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে (আরবীতে যাকে নিছফু উশর বলে)। ” (বুখারী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবুল উশরি ফীমা ইউস্ক্বা মিম্মায়িস সামায়ি ওয়াবিল মায়িলযারি : হাদীছ শরীফ নং ১৪৮৩)
অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُوْنُ اَلْعُشْرُ وَفِيْمَا سُقِىَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বৃষ্টির পানি অথবা ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত যমীনের উৎপন্ন ফসলের এক-দশমাংশ এবং সেচের পানি দ্বারা সিক্ত যমীনের উৎপন্ন ফসলের এক-বিংশ অংশ যাকাত দিতে হবে। ” (ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবুল ছদাক্বতিয যুরূ‘য়ি ওয়াছ ছিমারি : হাদীছ শরীফ নং ১৮১৬)
সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের নির্দেশ অনুযায়ী সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ফতওয়া মুতাবিক ধান, গম, যব, খেজুর ও আঙ্গুর প্রভৃতি শস্য ও ফলমূল বিনা সেচে বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন হলে- অল্প হোক বা বেশি হোক সেই ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত হিসেবে দিতে হয়। ইহাকে সাধারণতঃ ‘উশর’ বলে। এই সকল ফসল সেচ বা পরিশ্রম দ্বারা উৎপন্ন হলে উহার نصف العشر বা ২০ ভাগের ১ ভাগ সম্মানিত যাকাত হিসেবে দিতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ কারো যমীনে পরিশ্রমের মাধ্যমে ৫০ মণ ধান উৎপন্ন হলো তাকে নিছফু উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের ১ ভাগ উশর প্রদান করতে হবে, অর্থাৎ ২.৫ মণ ধান উশর হিসেবে দিতে হবে। আর যদি বিনা পরিশ্রমে উৎপন্ন হয় তাহলে উশর তথা দশ ভাগের একভাগ ধান দিতে হবে, অর্থাৎ ৫ মণ ধান উশর হিসেবে দিতে হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৭)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)