পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল
, ১৪ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১১ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যাকাত উছূলকারী কর্তৃক সম্মানিত যাকাত
উনার মাল আত্মসাৎ করার ভয়াবহ শাস্তি
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, এ দায়িত্ব আমানত স্বরূপ। তাই এর খিয়ানত করা মুনাফিক্বী।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুনাফিক্ব সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفاقِ حَتّٰى يَدَعَهَا اِذَا اؤْتُـمِنَ خَانَ وَاِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَاِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَاِذَا خَاصَمَ فَجَرَ.
অর্থ : “হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হবে খাঁটি মুনাফিক্ব। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিক্বের একটি স্বভাব থেকে যায়। আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে; কথা বললে মিথ্যা বলে; অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে এবং বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়। ” (বুখারী শরীফ ২য় খ- : হাদীছ শরীফ নং ৩৪; মুসলিম শরীফ ১ম খ- : হাদীছ শরীফ নং ৫৮)
খ) উছূল কর্মচারী বা সম্মানিত যাকাত আদায়কারী যা কিছু গোপন বা খিয়ানত করবে সেটা নিয়েই কিয়ামতের দিন উঠবে :
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَدِىِّ بْنِ عَمِيْرَةَ الْكِنْدِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُمْ عَلٰى عَمَلٍ فَكَتَمَنَا مِـخْيَطًا فَمَا فَوْقَهٗ كَانَ غُلُوْلاً يَاْتِىْ بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ : হযরত আদী ইবনে আমীরাহ আল কিন্দী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের মধ্যে আমি যাকে কোন কর্মে কর্মচারী নিযুক্ত করি, আর তিনি আমাদের নিকট হতে একটি সুঁচ অথবা তদপেক্ষা ছোট কিছুও গোপন করেন, তা নিশ্চয়ই আমানতের খিয়ানত হবে, যা নিয়ে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন হাযির হবে। নাঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ইমরাত : বাবু তাহরীমি হাদাইয়াল ‘য়ুম্মাল : হাদীছ শরীফ নং ৪৬৩৭; আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল আক্বদিয়া : বাবু ফী হাদাইয়াল ‘য়ুম্মাল : হাদীছ শরীফ নং ৩৫৮১)
ছদাক্বাতুল ফিত্বর পর্ব (كِتَابُ صَدَقَةُ الْفِطْرِ)
ছদাক্বাতুল ফিত্বর শব্দের অর্থ
ছদাক্বাতুল ফিত্বর (صَدَقَةُ الْفِطْرِ) আরবী শব্দ। এখানে صدقة শব্দের অর্থ দান করা। আর الفطر শব্দের অর্থ ভঙ্গ করা, পূর্ণ করা। সুতরাং ছদাক্বাতুল ফিত্বরের সম্মিলিত অর্থ হল পূর্ণ করার দান। যাকে যাকাতুল ফিত্বর বলেও উল্লেখ করা হয়।
পারিভাষিক অর্থে দীর্ঘ একমাস রোযা রাখার পর পবিত্র ঈদুল ফিত্বর উনার দিন মালিকে নিছাবের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ সম্পদ গরীবকে প্রদান করতে হয় তাকে ছদাক্বাতুল ফিত্বর বলে।
ছদাক্বাতুল ফিত্বর কে দিবেন
ছদাক্বাতুল ফিত্বর প্রদান করা ধনীদের জন্যে ওয়াজিব। দ্বিতীয় হিজরীর শা’বান মাসে ছদাক্বাতুল ফিত্বর ওয়াজিব হয়। পবিত্র ঈদুল ফিত্বর উনার দিন ছুবহে ছাদিকের সময় ছহিবে নিছাব তথা নিছাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তার উপর ছদকাতুল ফিত্বর ওয়াজিব হবে।
ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম, পুরুষ ও মহিলা প্রত্যেকের জন্যই ছদাক্বাতুল ফিত্বর ওয়াজিব।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ اَبِـىْ صُعَيْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صِلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاعٌ مِّنْ بُرّ اَوْ قَمْحٍ عَلٰى كُلِّ اِثْنَيْنِ صَغِيْرٍ اَوْ كَبِيْرٍ حُرٍّ اَوْ عَبْدٍ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى اَمَّا غَنِيُّكُمْ فَيُزَكِّيْهِ اللهُ وَاَمَّا فَقِيْرُكُمْ فَيَرُدُّ اللهُ عَلَيْهِ اَكْثَرَ مِـمَّا اَعْطَاهُ.
অর্থ : “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ ছু’আইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। উনার পিতা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম, পুরুষ অথবা মহিলা প্রত্যেক দুইজনের উপর এক ছা’ গম (ফিত্বরাহ) নির্ধারিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের ধনীদেরকে এ দ্বারা পবিত্র করবেন এবং তোমাদের দরিদ্রদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের দানের চাইতে অধিক দিবেন। ” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১৬১৯)
এমনকি গোলামের উপরও ছদাক্বাতুল ফিত্বর ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ فِى الْعَبْدِ صَدَقَةٌ اِلَّا صَدَقَةُ الْفِطْرِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছদাক্বাতুল ফিত্বর ছাড়া গোলামের কোন ছদক্বা নেই। ” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু লা যাকাতা ‘আলাল মুসলিমি ফী আব্দিহি ওয়া ফারাসিহি : হাদীছ শরীফ নং ৯৮২)
যদিও ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম, পুরুষ ও মহিলা প্রত্যেকের জন্যই ছদাক্বাতুল ফিত্বর ওয়াজিব। তবে কোন পরিবারের অভিভাবক উনার পোষ্য সকলের তরফ থেকে ছদাক্বাতুল ফিত্বর আদায় করতে পারেন। এমনকি গোলামের তরফ থেকে মুনীব ছদাক্বাতুল ফিত্বর আদায় করতে পারেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)