সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
, ২৩ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ৯ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

সম্মানিত যাকাত কাকে দিবেন
মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত যাকাত পাওয়ার হক্বদারদের ব্যাপারে অর্থাৎ যে খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা ফরয সে খাতগুলো সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّـمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُـهُمْ وَفِي الرّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِي سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ ط فَرِيْضَةً مّنَ اللهِ ط وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ.
অর্থ : “নিশ্চয়ই সম্মানিত যাকাত কেবল ফক্বীর, মিসকীন ও সম্মানিত যাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্যে, যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্যে অর্থাৎ নও মুসলিমের জন্য, গোলাম বা বাঁদীদের মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য, মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদকারী এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত বিধান এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। ” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬০)
বিশেষ দ্রষ্টব্য : সম্মানিত আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা অভাবগ্রস্ত হলে উনাদের জন্যে যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি গ্রহণ যদিও জায়িয রয়েছে। তথাপি উম্মতের জন্যে করণীয় হচ্ছে উক্ত দান-ছদক্বার পরিবর্তে উনাদেরকে হাদিয়া মুবারক করা। এটা উম্মতের জন্যে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবী ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের সর্বোত্তম উসীলা।
খাতসমূহের মধ্যে যাদেরকে যাকাত দেয়া অধিক উত্তম :
সম্মানিত যাকাত প্রদানের আট প্রকার খাতের মধ্যে তিন প্রকার খাতে সম্মানিত যাকাত দেয়া উত্তম। যেমন,
১ ও ২। নিকটতম গরীব আত্মীয়-স্বজন ও গরীব প্রতিবেশী : নিকটতম গরীব আত্মীয়-স্বজন ও গরীব প্রতিবেশীর আক্বীদা-আমল যদি বিশুদ্ধ থাকে। এর ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিকে সম্মানিত যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। যদিও নিকটতম গরীব আত্মীয়-স্বজন ও গরীব প্রতিবেশী হোক না কেন।
৩। গরীব ত্বলিবুল ইলম : যারা দ্বীনি ইলম্ অন্বেষণ করে। তাদেরকে সম্মানিত যাকাত দেয়া অতি উত্তম এবং অধিক ফযীলতের কারণ। তাদের আক্বীদা-আমল যদি বিশুদ্ধ থাকে।
এ প্রসঙ্গে একদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ, আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বইয়্যুমে আউওয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহ তিনি উনার মাকতুবাত শরীফ-এ উল্লেখ করেন সম্মানিত যাকাত আদায়ের খাতসমূহের মধ্যে গরীব ত্বলিবুল ইলম্দের সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, মান্নত, কুরবানীর চামড়া বা চামড়ার টাকা দেয়া সর্বত্তোম এবং বেশি ছাওয়াব ও ফযীলত অর্জিত হবে।
ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে যে সমস্ত খাতগুলো যাকাত আদায়ের খাত নয় :
১. নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী ব্যক্তি।
২. বনু হাশিম উনাদের বংশধর। (মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মতে উনাদের জন্য সম্মানিত যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মতে বৈধ। )
৩. সম্মানিত যাকাত অমুসলিম ব্যক্তিকে দেয়া যাবে না।
৪. ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং নেই এমন মাদরাসা।
৫. দরিদ্র পিতামাতা এবং উর্ধ্বতন পুরুষ।
৬. আপন সন্তান এবং অধঃস্তন পুরুষ।
৭. আহাল-আহলিয়া (স্বামী-স্ত্রী) পরস্পর পরস্পরকে যাকাত দিতে পারবে না।
৮. ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্যে নিযুক্ত যাকাত আদায়কারী।
৯. উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
১০. পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ আমল ও আক্বীদায় অভ্যস্ত ব্যক্তি।
১১. বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধীনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে যাকাত উনার টাকা দেয়া যাবে না।
১৩. জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।
সম্মানিত যাকাত যাদেরকে দেয়া যাবে না
সম্মানিত যাকাত প্রদান করার ক্ষেত্রে শরয়ী খুঁতমুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে প্রদান করতে হয়, নতুবা যাকাত আদায় হবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন-
تَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرّ وَالتَّقْوٰى ۖ وَلا تَعَاوَنُوْا عَلَى الاِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللهَ ۖ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ.
অর্থ : “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতাতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। ” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
সুতরাং সম্মানিত যাকাত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে প্রদানের পূর্বে নি¤œলিখিত বিষয়গুলো অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে।
১. তাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ কিনা,
২. সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে দ্বীন উনাকে ক্ষতি করার কাজে লিপ্ত কিনা,
৩. নেককার-পরহেজগার কিনা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৬)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৭)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যে বা যারা কাফিরদের সাথে সম্পর্ক রাখবে সে দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হবে
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
টাইম বোমার মতোই সুপ্ত বিপদ হলো প্রতিবেশী বিধর্মী সম্প্রদায়
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)