সম্মানিত মুতার জিহাদ মুবারক (৪)
, ২২ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৪ হাদি ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি:, ০১ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) আইন ও জিহাদ
তারপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা রওয়ানা হয়ে যান এবং শামের মা‘আন (مَعَانُ) নামক অঞ্চলে অবতরণ করেন। তখন উনারা গোয়েন্দা উনাদের মারফত সংবাদ পান যে, রোমের শাসক হিরাক্লিয়াস এক লাখ সৈন্য নিয়ে শামের বালক্বা অঞ্চলের মাআব (مَآبُ) নামক স্থানে অবস্থান করছে। সেখানে তার সাথে যোগ হয়েছে লাখাম, জুযাম, ক্বাইন (قَيْنُ), বাহরা ও বালী ইত্যাদি আরবখ্রিষ্টান গোত্রসমূহের আরো এক লাখ সৈন্য। উল্লেখিত শেষোক্ত এক লাখ ছিলো আরব গোত্রসমূহের সমন্বিত সেনাদল। কারো কারো মতে সব মিলিয়ে কাফিরদের সৈন্য সংখ্যা ছিলো ২ লাখের অধিক। আর সম্মানিত মুসলমান উনাদের সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার। (সীরাতে হালাবিয়্যাহ্, শারহুয যারক্বানী, ইবনে হিশাম ইত্যাদি)
গোয়েন্দা উনাদের মারফত সংবাদ পেয়ে মজলিসে শূরার বৈঠক:
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়া‘লা আনহুম উনারা গোয়েন্দা উনাদের মারফত শত্রুবাহিনীর সংবাদ পেয়ে পরামর্শ সভায় বসেন। এটি ছিল সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক উনার ন্যায়। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এটা চিন্তা করেননি যে, কাফিররা এতো বিশাল বাহিনী নিয়ে পূর্ব থেকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা দুই রাত পর্যন্ত পরামর্শ করলেন। কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেন যে, আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ শত্রু সংখ্যার খবর দিয়ে পত্র লিখি। অতঃপর তিনি আমাদের জন্য সাহায্যকারী বাহিনী পাঠাবেন অথবা আমাদেরকে যা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নির্দেশ মুবারক দিবেন, আমরা তাই করব। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জালাময়ী ভাষায় সকলের উদ্দেশ্যে বলেন-
يَا قَوْمِ وَاللهِ إنَّ الَّتِي تَكْرَهُونَ لَلَّتِي خَرَجْتُمْ تَطْلُبُونَ الشَّهَادَة وَمَا نُقَاتِلُ النَّاسَ بِعَدَد وَلاَ قُوَّةٍ وَلاَ كَثْرَةٍ مَا نُقَاتِلُهُمْ إلاَّ بِهَذَا الدِّينِ الَّذِي أَكْرَمَنَا اللهُ بِهِ فَانْطَلِقُوا فَإِنَّمَا هِيَ إحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ إمَّا ظُهُورٌ وَإِمَّا شَهَادَةٌ قَالَ فَقَالَ النَّاسُ قَدْ وَاللهِ صَدَقَ حضرت ابْنُ رَوَاحَةَ رضى الله تعالى عنه
অর্থ: “হে আমার ক্বওম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনারা যেটাকে অপছন্দ করেন, নিশ্চয়ই আপনারা সেটা অন্বেষণের জন্যই বের হয়েছেন। আর তা হলো সম্মানিত শাহাদাত মুবারক। আমরা মানুষের সঙ্গে সংখ্যা দ্বারা, শক্তি দ্বারা বা আধিক্য দ্বারা সম্মানিত জিহাদ মুবারক করি না। আর আমরা কেবলমাত্র এই মহাসম্মানিত দ্বীন উনার স্বার্থ ব্যতীত তাদের সাথে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করি না- যেই মহাসম্মানিত দ্বীন উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। অতএব সামনে চলুন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কেবলমাত্র দু’টি কল্যাণের একটি রয়েছেন। হয়তো সম্মানিত বিজয় মুবারক; অথবা সম্মানিত শাহাদাত মুবারক। অতঃপর সকলে বললেন-
قَدْ وَاللهِ صَدَقَ حضرت ابْنُ رَوَاحَةَ رضى الله تعالى عنه
‘অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সত্য বলেছেন’।” (বিদায়া-নিহায়া, ইবনে হিশাম, সীরাতে হালাবিয়্যাহ্)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত কবিতা পাঠ:
এরপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সকলের উদ্দেশ্যে সম্মানিত কবিতা পাঠ করেন-
جَلَبْنَا الْخَيْلَ مِنْ أَجَإٍ وَفَرْعٍ ... تُغَرُّ مِنْ الْحَشِيشِ لَهَا الْعُكُومُ
حَذَوْنَاهَا مِنْ الصَّوَّانِ سِبْتًا ... أَزَلَّ كَأَنَّ صَفْحَتَهُ أَدِيمُ
أَقَامَتْ لَيْلَتَيْنِ عَلَى مَعَانٍ ... فَأَعْقَبَ بَعْدَ فَتْرَتِهَا جُمُومُ
فَرُحْنَا وَالْجِيَادُ مُسَوَّمَاتٌ ... تَنَفَّسُ فِي مَنَاخِرِهَا السَّمُومُ
فَلَا وَأَبِي مَآبَ لَنَأْتِيَنهَا ... وَإِنْ كَانَتْ بِهَا عَرَبٌ وَرُومُ
فَعَبَّأْنَا أَعِنَّتَهَا فَجَاءَتْ ... عَوَابِسَ وَالْغُبَارُ لَهَا بَرِيمُ
بِذِي لَجَبٍ كَأَنَّ الْبَيْضَ فِيهِ ... إذَا بَرَزَتْ قَوَانِسُهَا النُّجُومُ
অর্থ: “আজা ও ফারার গিরিকন্দর থেকে আমরা সে সব অশ্ব নিয়ে বের হয়েছি, যেগুলোকে খাওয়ানো হয় বোঝা বোঝা ঘাস এবং যেগুলোর পায়ে আমরা পরিয়ে দিয়েছি এমন লৌহ পাদুকা যার উপরিভাগ অত্যন্ত মসৃণ এবং চর্মের ন্যায় কোমল। মাআন নামক স্থানে দু’রাত অবস্থান করার পর দুর্বলতা ও স্থবিরতা দূর হয়ে এগুলোর মধ্যে জেগে উঠে নতুন উদ্যম। তারপর শুরু হয় আমাদের ভ্রমন। আমাদের চিহ্নিত অশ্বগুলো তখন নাসারন্ধে গ্রহণ করছিল উষ্ণবায়ু। আমি ক্বসম করে বলছি, প্রতিপক্ষ আরবের হোক অথবা রোমেরই হোক, মাআবে আমরা পৌঁছবই। তারপর আমরা অশ্বগুলির বাগ টেনে ধরি। ফলে সেগুলো অত্যন্ত অনীহা সত্ত্বেও, অপ্রসন্ন মুখে এবং ধূলি-ধূসরিত অশ্রুচোখে থমকে দাঁড়ায়। এসব অশ্ব এমন বিরাট বাহিনীর সাথে এসেছে, যাদের শিরস্ত্রাণগুলো নক্ষত্রমালার মতো।” (ইবনে হিশাম)
(পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকুন।)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)