সম্মানিত বনূ কায়নুকার জিহাদ (৩)
, ১৬ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২৫ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
এ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে-
لَمَّا حَارَبَتْ بَنُو قَيْنُقَاعٍ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , تَشَبَّثَ بِأَمْرِهِمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ , وَقَامَ دُونَهُمْ . ومَشَى عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَكَانَ أَحَدَ بَنِي عَوْفِ بْنِ الْخَزْرَجِ مَنْ لَهُ حِلْفُهُمْ مِثْلُ الَّذِي لَهُمْ مِنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُبَيٍّ , فَخَلَعَهُمْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَتَبْرَأَ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ مِنْ حِلْفِهِمْ , وَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَبْرَأُ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ مِنْ حِلْفِهِمْ وَأَتَوَلَّى اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ , وَأَبْرَأُ مِنْ حِلْفِ الْكُفَّارِ وَوَلاَيَتِهِمْ
অর্থ: (হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) বানূ কাইনুকা যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্মুখীন হলো, তখন উবাই বিন সুলূল ইহুদীদের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে লাগলো এবং তাদের পক্ষ হয়ে দাঁড়ালো। বর্ননাকারী বলেন, হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আসলেন। আর তিনি ছিলেন বানূ আওফ ইবনে খাযরাজ গোত্রের একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, অনুরূপভাবে মুনাফিক উবাই বিন সুলূলও ছিলো সেই গোত্রের। বানূ কাইনুকার সাথে হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মিত্রতার সম্পর্ক ছিলো। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে তাদের মিত্রতার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেললেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হয়ে তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মুহব্বত করি। আমি এসব কাফির মুশরিকদের বন্ধুত্ব ও মিত্রতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মুখতাসারু তারিখে দামেশক, রওদ্বুল উনূফ ফি গারীবিস সীর)
প্রসিদ্ধ তাফসীর, তারিখ ও সীরতগ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে, মুনাফিক উবাই বিন সুলূলকে লক্ষ্য করে এই পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّـهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ- فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَن تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ ۚ فَعَسَى اللَّـهُ أَن يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنفُسِهِمْ نَادِمِينَ- وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا أَهَـٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمُوا بِاللَّـهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ ۙ إِنَّهُمْ لَمَعَكُمْ ۚ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَأَصْبَحُوا خَاسِرِينَ- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّـهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّـهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ- إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّـهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ- وَمَن يَتَوَلَّ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّـهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে, বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে অবশ্যই তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না অর্থাৎ তারা হিদায়েত লাভের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। আর যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে আপনি তাদেরকে শীঘ্রই তাদের সাথে মিলিত হতে দেখবেন, এই বলে আমাদের আশংকা হয় আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার বিজয় অথবা উনার নিকট থেকে এমন কিছু দিবেন যাতে তারা তাদের অন্তরে যা গোপন রেখেছিল তার জন্যে লজ্জিত বা অনুতপ্ত হবে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলবেন, এরাই কি তারা যারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, তারা আপনাদের সঙ্গে রয়েছে? তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়েছে। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হে ঈমানদারগণ! আপনাদের মধ্যে কেউ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম হতে ফিরে গেলে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন এক সম্প্রদায়কে আনবেন যাদেরকে তিনি মুহব্বত করবেন এবং যারা উনাকে মুহব্বত করবেন, উনারা মু’মিনদের প্রতি কোমল বা দয়াশীল হবেন ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবেন। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পথে জিহাদ করবেন এবং নিন্দুকের নিন্দায় পরওয়া করবেন না। ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি উনাকেই দান করেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রাচুর্যময় ও প্রজ্ঞাময়। আপনাদের মুহব্বততো মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জন্যে যারা বিনীতভাবে ছলাত আদায় করেন এবং যাকাত আদায় করেন। কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং যারা মু’মিন উনাদেরকে ইতায়াত ও মুহাব্বত করেন। আর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার দলই বিজয়ী হবেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৫১-৫৭)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইহুদী খ্রিস্টান তথা সমস্ত কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন ও মুনাফিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। আর ইহুদী-নাছারা ও সমস্ত কাফির-মুশরিকরা একে অপরের বন্ধু। অর্থাৎ মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করার ব্যাপারে তারা একে অপরের একই মত ও পথের অনুসারী। কাজেই মুসলমানদের মধ্য থেকে কেউ তাদের সাথে বন্ধুত্বকে গ্রহণ করলে সে হবে তাদেরই একজন। অর্থাৎ কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে ইহুদীদের পক্ষ অবলম্বন করে সেও ইহুদীদের মতো কাফির এবং কাট্টা মুনাফিক রূপে পরিনত হয়েছে। এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আখাছছুল খাছ আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মত পথ বাদ দিয়ে ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সাথে মিল রাখবে বা তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করবে সে ব্যক্তি কাট্টা কাফির, মুরতাদ ও মুনাফিক হবে। (তাফসীরে মাযহারী) (চলবে)।
-সাইয়্যিদ আহমদ শাবীব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)