সম্মানিত বনূ কায়নুকার জিহাদ (২)
, ১০ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৪ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত আসিম ইবনে আমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহুদীদের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ দেখে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। পরিশেষে ইহুদীরা সাময়িকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়সালা মুবারক মেনে নিতে রাজি হয়। তখন মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে ইহুদীদের পক্ষ নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কথা বলল। সে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমার মিত্রদের প্রতি অনুগ্রহ করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন জবাব দিলেন না। সে আবার বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মিত্রদের প্রতি অনুগ্রহ, দয়া ও ইহসান করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য দিকে উনার নূরুর রহমত মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিলেন। এবার সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পকেট মুবারকে হাত ঢুকিয়ে দিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে উবাই বিন সুলূল! তুমি আমার মহাসম্মানিত কোর্তা মুবারক ছেড়ে দাও। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুবই গোসসা মুবারক করলেন। উনার নূরুল মুনাওওয়ার ও নূরুর রহমত মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চোখ মুবারক ও চেহারা মুবারক গোস্সায় নূর মুবারক চমকাচ্ছিল। তিনি আবারও বললেন, তুমি আমার মহাসম্মানিত কোর্তা মুবারক ছেড়ে দাও। কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল বলল, না আমার মিত্রদের প্রতি যতক্ষণ উদার ও সহজ সিদ্ধান্ত না দেবেন ততক্ষণ কোর্তা মুবারক ছেড়ে দিব না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, বানী কাইনুকা তারা সংখ্যায় ছিল ৭০০ জন। তারমধ্যে চার শ’ জন নিরস্ত্র আর তিন শ’ জন বর্ম পরিহিত। কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে বলল, এই ইহুদীরা সাদা কালো সকল মানুষদের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। আপনি কি এক ভোরেই তাদের সকলকে ধ্বংস ও নির্মূল করে দিতে চান? মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কিন্তু তাতে বড় বিপদের আশঙ্কা করছি।
فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ " هُمْ لَك " .
অর্থ: “অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “(হে উবাই বিন সুলূল!) তবে তাদের ব্যাপারটি তোমার উপরই ছেড়ে দিলাম।” (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, তারিখুল ইসলাম লিল ইমামিয যাহাবী, তারিখে আবিল ফাদা)
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছিলেন তখন বানী কাইনুকা, বানী কুরাইযা ও বানী নাযীর ইহুদী গোত্রদের সাথে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিলো যে, আমরা তোমাদের সাথে জিহাদ করবো না এবং তোমরা কোন শত্রুকে আমাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে না। অথচ এই বানী কাইনুকা তারা সর্বপ্রথম সন্ধি ভঙ্গ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রূঢ় জবাব দেয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকল্প গ্রহণ করে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বনূ কাইনুকার এই জিহাদের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার খিদমত মুবারকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন হযরত আবূ লুবাবা বাশীর ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। বনূ কাইনুকা তারা পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে ইহুদীদের কেল্লায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে তাদেরকে অবরুদ্ধ করেন। এই বানী কাইনুকার ইহুদীদের অবরুদ্ধের ১৫ দিন পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে পানি পান করার অনুমতি দান করেন।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে জানিয়েছেন হযরত উবাদা ইবনে ওয়ালীদ ইবনে উবাদা ইবনে ছামিত রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে। তিনি বলেন, বনূ কাইনুকা গোত্র যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিল তখন মুনাফিক উবাই বিন সুলূল তাদের পক্ষে কথা বলার দায়িত্ব নিল এবং সে তাদের পক্ষ অবলম্বন করল। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসেন। আর ইহুদী গোত্র কাইনুকা এর মৈত্রীচুক্তি ছিলো বনূ আওফ গোত্রের হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে। মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে ওই চুক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলো এবং সে তাদের সাথে সম্পর্ক বর্জন করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ অবলম্বন করল। মুনাফিক বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে রয়েছি। সাথে সাথে আরো বলল, এসব ইহুদী কাফিরদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ও বন্ধুত্ব আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ আহমদ শাবীব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)