সম্মানিত বনূ কায়নুকার জিহাদ (১)
, ০৯ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৩ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ০১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
বানূ কায়নুকা ছিল হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভ্রাতৃ সম্পর্কীয় গোত্র। তারা নিজেদেরকে অত্যন্ত শক্তিশালী ও সাহসী মনে করতো। পবিত্র শাওওয়াল শরীফের পনের বা ষোল তারিখ ইয়াওমুস সাবতিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা ইহুদীদের বাজারে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং তাদেরকে একত্রিত করে ইরশাদ মুবারক করলেন-
يَا مَعْشَرَ يَهُودَ احْذَرُوا مِنْ اللّهِ مِثْلَ مَا نَزَلَ بِقُرَيْشِ مِنْ النّقْمَةِ وَأَسْلِمُوا ، فَإِنّكُمْ قَدْ عَرَفْتُمْ أَنّي نَبِيّ مُرْسَلٌ تَجِدُونَ ذَلِكَ فِي كِتَابِكُمْ وَعَهْدِ اللّهِ إلَيْكُمْ- قَالُوا يَا مُحَمّدُ إنّك تَرَى أَنّا قَوْمُك لَا يَغُرّنّكَ أَنّك لَقِيت قَوْمًا لَا عِلْمَ لَهُمْ بِالْحَرْبِ فَأَصْبَحْت مِنْهُمْ فُرْصَةً إنّا وَاَللّهِ لَئِنْ حَارَبْنَاك لَتَعْلَمَنّ أَنّا نَحْنُ النّاسَ-
অর্থ: “ হে ইহুদী সম্প্রদায়! মহান আল্লাহ পাক উনাকে তোমরা ভয় করো, যেন কুরাইশ কাফির মুশরিকদের মত তোমাদের উপরও কঠিন শাস্তি না আসে। আর তোমরা সব ছেড়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই তোমাদের জানা রয়েছে, আমি তোমাদের কাছে প্রেরিত রসূল তথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর আমার প্রেরণের সুসংবাদ বা প্রমাণ তোমরা তোমাদের কিতাবে পেয়েছ ও পাবে। এ ব্যাপারে স্বয়ং খলিক্ব মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের কাছ থেকে ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। তখন তারা বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ভেবেছেন আমরাও আপনার সম্প্রদায়ের মত। আপনি এটা মনে করবেন না। আপনি (সম্মানিত বদর জিহাদে) এমন সম্পদায়ের সাথে মুকাবিলা করেছেন যাদের যুদ্ধ সম্পর্কে আদৌ জ্ঞান নেই। যার কারণে আপনারা তাদের উপর আক্রমণ করে তাদেরকে পরাজিত করেছেন। আর আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম করছি। যদি আমরা আপনার সাথে যুদ্ধ করি তবে বুঝিয়ে দিবো আমরা কেমন পুরুষ।” নাউযুবিল্লাহ! (সীরাতে ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিলু ফিত্ তারীখ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তিনি বলেন, নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ইহুদীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে-
قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ- قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّـهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ-
অর্থ: “(আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদেরকে বলে দিন, যারা কুফরী করে তোমরা অতিশীঘ্রই পরাভূত হবে এবং তোমাদেরকে জাহান্নামে একত্রিত করা হবে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল। দু’টি দলের পরস্পর সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে সম্মানিত বদরী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এবং কুরাইশ কাফির মুশরিকরা) একদল মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য জিহাদ করেছিলেন, অপরদিকে কাফির মুশরিক যারা ছিল তারা (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনাদেরকে চোখ দিয়ে দ্বিগুণ দেখছিল। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য তথা গায়েবী মদদ দ্বারা সাহায্য করেন, এর মাঝে অর্ন্তদৃষ্টিসম্পন্ন তথা জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নছীহত বা শিক্ষা। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১২-১৩)
অর্থাৎ সম্মানিত বদর জিহাদে মক্কার কাফির মুশরিকরা যখন লাঞ্চিত ও পরাজিত হলো তখন পবিত্র মদীনা শরীফের ইহুদীরা তারা বলতে লাগলো মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই সম্মানিত আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যার সুসংবাদ সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দিয়েছেন। উনার প্রতি ঈমান এনে উনাকে অনুসরণ করাই উত্তম। আবার ইহুদীদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, এতো তাড়াতাড়ি কেনো? আরো দু’ একটি ঘটনা দেখে নাও। পরবর্তীতে ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা করে ধ্বংস হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي عَوْنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهَ قَالَ كَانَ مِنْ أَمْرِ بَنِي قَيْنُقَاعَ أَنّ امْرَأَةً مِنْ الْعَرَبِ قَدِمَتْ بِجَلَبِ لَهَا ، فَبَاعَتْهُ بِسُوقِ بَنِي قَيْنُقَاعَ وَجَلَسَتْ إلَى صَائِغٍ بِهَا ، فَجَعَلُوا يُرِيدُونَهَا عَلَى كُشْفِ وَجْهِهَا ، فَأَبَتْ فَعَمِدَ الصّائِغُ إلَى طَرَفِ ثَوْبِهَا فَعَقَدَهُ إلَى ظَهْرِهَا ، فَلَمّا قَامَتْ انْكَشَفَتْ سَوْءَتُهَا ، فَضَحِكُوا بِهَا ، فَصَاحَتْ . فَوَثَبَ رَجُلٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ عَلَى الصّائِغ فَقَتَلَهُ وَكَانَ يَهُودِيّا ، وَشَدّتْ الْيَهُودُ عَلَى الْمُسْلِمِ فَقَتَلُوهُ فَاسْتَصْرَخَ أَهْلُ الْمُسْلِمِ الْمُسْلِمِينَ عَلَى الْيَهُودِ ، فَغَضِبَ الْمُسْلِمُونَ فَوَقَعَ الشّرّ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ بَنِي قَيْنُقَاعَ.
অর্থ: “হযরত আবূ আউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বানূ কাইনুকার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, আরবের জনৈক মহিলা কিছু পণ্য নিয়ে একদা বানূ কাইনুকার বাজারে বিক্রি করলো। তারপর সেখান থেকে এক ইহুদী স্বর্ণকারের কাছে যেয়ে বসে পড়লো। ইহুদী স্বর্ণকার মহিলাকে তার চেহারা খুলতে বলল। মহিলা তাতে অসম্মত হলেন, স্বর্ণকার মহিলার কাপড়ের এক কোণ তার পিছনের দিকে বেঁধে দিল। ফলে মহিলা উঠার সময় তার কাপড় উঠে গেল। এ অবস্থা দেখে ইহুদীটি হাসতে লাগলো। সাথে সাথে মহিলাটি চিৎকার করে উঠলো। তখন জনৈক হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ অবস্থা দেখে ইহুদী স্বর্ণকারকে হত্যা করে ফেললেন। যখন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই স্বর্ণকার ইহুদীকে হত্যা করে ফেললেন তখন অন্যান্য ইহুদীরা সেই হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর আক্রমণ করে উনাকেও শহীদ করে ফেলল। উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আত্মীয়- স্বজন উনারা ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুকাবিলা করার জন্য অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কাছে সাহায্য চাইলেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিলেন। এখান থেকেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও বানূ কাইনুকার মাঝে জিহাদের সূত্রপাত ঘটে।” (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, রওদ্বুল উনূফ, তারিখুল ইসলাম লিইমামি যাহাবী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) (চলবে)
-সাইয়্যিদ আহমদ শাবীব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)