সম্মানিত বদরী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা মুবারক
, ০২ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২২ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) আইন ও জিহাদ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছ থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেন, হযরত হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন অল্প বয়সী একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সম্মানিত বদর জিহাদে তিনি শহীদ হয়ে গেলে উনার মা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কত আদরের সন্তান ছিলেন তা আপনি সবই জানেন। তিনি যদি জান্নাতী হন তা হলে আমি অবশ্যই ধৈর্য্যধারণ করবো এবং এজন্যে আপনাদের সন্তুষ্টি ও রেযামন্দী মুবারকের আশা পোষণ করবো। আর যদি ভিন্ন কিছু হয় তা হলে আপনি দেখতে পাবেন আমি কি করি। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনার কি হলো, আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন? সম্মানিত জান্নাত কি একটি? অনেক জান্নাত আছে। তিনিতো সম্মানিত জান্নাতুল ফেরদাউসে রয়েছেন। ” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৩৯৮২, উমদাতুল ক্বরী, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এক নিগূঢ় তত্ত্ব লুকায়িত রয়েছে। হযরত হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত বদর জিহাদের দিন হাওয থেকে পানি পান করার সময় হঠাৎ একটি তীর এসে উনার শরীরে বিদ্ধ হয়। এই তীর বিদ্ধ হওয়ায় তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। পুরস্কার স্বরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। সুবহানাল্লাহ! যা হচ্ছে সব জান্নাতের শ্রেষ্ঠ জান্নাত মুবারক। সর্বোত্তম জান্নাত মুবারক। সেখান থেকে নহর সমূহ প্রবাহিত হয়ে চলে গেছে অন্যান্য জান্নাতে।
সেই জান্নাত সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “তোমরা যখন মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে জান্নাত উনার আর্জি করবে বা চাইবে তখন জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্য দোয়া করবে। ”
তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে সম্মানিত বদরী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা কতো বেমেছাল। তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ মারসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আমাকে এক স্থানে প্রেরণ করেছিলেন এবং আমরা সকলেই ছিলাম অশ্বারোহী। তিনি আমাদেরকে বলেছিলেন, আপনারা যান। যেতে যেতে আপনারা রাওযা খাখ নামক জায়গায় পৌঁছে সেখানে একজন স্ত্রীলোক দেখতে পাবেন। তার কাছে মুশরিকদের প্রতি লিখিত হাতিব ইবনূ আবূ বালতার একটি চিঠি আছে। (সেটা নিয়ে আসবেন। ) সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশিত জায়গায় গিয়ে তাকে ধরে ফেললাম। সে তখন তার একটি উটের উপর চড়ে পথ অতিক্রম করছিল। আমরা তাকে বললাম পত্রখানা আমাদের নিকট দিয়ে দাও। সে বলল, আমার নিকট কোন পত্র নেই। আমরা তখন তার উটটিকে বসিয়ে তল্লাশী করলাম। কিন্তু পত্রখানা বের করতে পারলাম না। আমরা বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনও সত্যের বিপরীত বলেননি। তোমাকে চিঠিটি বের করতেই হবে। নতুবা আমরা তোমার কাপড় খুলে চিঠি বের করবো। যখন আমাদের শক্ত মনোভাব বুঝতে পারলো তখন স্ত্রীলোকটি তার কোমরের পরিহিত বস্ত্রের গিঁটের কাপড়ের পুঁটুলির মধ্য থেকে চিঠিটি বের করে দিল। আমরা তা নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হলাম। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনিতো হযরত হাতিব ইবনে আবু বালতায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ও মু’মিন উনাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি উনার গর্দান উড়িয়ে দেই। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (হযরত হাতিব ইবনে আবূ বালতায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ডেকে) বললেন, আপনাকে এ কাজ করতে কিসে বাধ্য করলো? হযরত হাতিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আমি অবিশ্বাসী নই বরং আমার মূল উদ্দেশ্য হল শত্রু দলের প্রতি কিছু অনুগ্রহ করা যাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি এ উছিলা মুবারকে আমার মাল এবং আমার পরিবার ও পরিজনকে রক্ষা করেন। আর আপনার মুহাজির হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন আত্মীয় পবিত্র মক্কা শরীফে রয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের মাল-সম্পদ ও পরিজনকে রক্ষা করেছেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তিনি ঠিকই বলেছেন। সুতরাং আপনারা উনার সম্পর্কে ভালো ব্যতীত আর কিছু বলবেন না। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সুতরাং আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি উনার গর্দান উড়িয়ে দেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তিনি কি বদরী ছাহাবী নন?
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বদরী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি লক্ষ্য করেছেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আপনারা যা ইচ্ছে করুন। আপনাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব এবং অবশ্যই আমি আপনাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার দু’চক্ষু মুবারক অশ্রু সিক্ত হয়ে উঠল। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সবচেয়ে অধিক জানেন। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ- হাদীছ শরীফ নং- ৩৯৮৩, উমদাতুল ক্বারী, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)