সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
, ২০ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৬ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি কেবলমাত্র উনার ইবাদত-বন্দেগীর জন্যে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا خَلَقْتُا لْـجِنَّ وَالْاِنسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ.
অর্থ: “আমি জিন ও ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। ” (পবিত্র সূরা যারিয়াহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
কিন্তু মানুষ ও জিন জাতি কিভাবে ইবাদত করবে সে বিষয়ে তাদেরকে ব্যবহারিক জ্ঞান দানের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন গোত্রের জন্য কিংবা বিভিন্ন সমাজ বা জনপদের জন্যে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রেরণ করেছেন। সর্বশেষে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বযুগের, সর্বকালের, সমস্ত জনপদের জন্যে নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। উনার আগমন মুবারক উনার দ্বারা যেমনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন মুবারক উনাদের ধারা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তেমনি উনার উপর নাযিলকৃত মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম কুরআন শরীফ উনার দ্বারা দ্বীন ইসলাম উনার পূর্ণতার ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلْيَوْ مَاَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيْتُ لَكُمْ الاِسْلاَمَ دِينًا.
অর্থ: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নিয়ামত মুবারক পূর্ণ করলাম এবং দ্বীন ইসলাম উনাকেই তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। ” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্যে দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মই পরিপূর্ণ নয়। অর্থাৎ সবই অপূর্ণ ছিল এবং বর্তমানেও অপূর্ণ রয়েছে। একমাত্র দ্বীন ইসলামই পরিপূর্ণ। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِيْنٍ.
অর্থ: সুস্পষ্ট কিতাব মুবারক (অর্থাৎ কুরআন শরীফ) উনার মধ্যে সব কিছুই রয়েছে। (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
مَافَرَّطْنَا فِي الكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ.
অর্থ: আমি এ কিতাব মুবারক উনার মধ্যে কোন কিছুই বর্ণনা করতে ছেড়ে দেইনি। (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلاَ رَطْبٍ وَّلاَ يَابِسٍ اِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِيْنٍ.
অর্থ: “শুকনা এবং ভিজা এমন কিছুই নেই, যা এ স্পষ্ট কিতাব মুবারক উনার মধ্যে উল্লেখ মুবারক করা হয়নি। ” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
অতএব, “দ্বীন ইসলাম” পরিপূর্ণ অর্থাৎ দ্বীনী ও দুনিয়াবী সকল বিষয়ের ফায়সালা বা সব সমস্যার সমাধান দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে, এমনকি একজন মুসলমানের কি ধরনের পোশাক পরিধান করতে হবে সে বিষয়েও ফায়সালা দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যা উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মাধ্যমে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়।
অথচ কিছু লোক “কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহাম” অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৌসুমের চাহিদা মুতাবিক যখন যে ধরণের পোশাক পেতেন তাই পরিধান করতেন। নাউযুবিল্লাহ!
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, তবে কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন না? তবে কি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আয়াত শরীফ মিথ্যা? নাউযুবিল্লাহ! কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন-
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْـهَوَى. اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُوْحَى.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না। ” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)
কাজেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “মৌসুমের চাহিদা মুতাবিক সব ধরণের পোশাক পরিধান করতেন” এ কথা বলার অর্থই হলো উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাকে অস্বীকার করা, যা সকলের মতেই কাট্টা কুফরী।
দ্বিতীয়ত “দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই। ” তাদের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে- তবে কি দ্বীন ইসলাম নাক্বিছ বা অপূর্ণ? তাদের উক্ত বক্তব্য একথাই প্রমাণ করে যে, দ্বীন ইসলাম নাক্বিছ বা অপূর্ণ। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি দ্বীন ইসলাম উনার পরিপূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছেন।
মূলত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নির্দিষ্ট পোশাকের বর্ণনা রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। ” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিপূর্ণভাবেই নির্দিষ্ট পোশাকের বর্ণনা করেছেন। তাই মুসলমানদের জন্যে কোনভাবেই কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করা বৈধ নয়। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)