সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্থিত্ব নেই (২)
, ০৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمِنْ كُلِّ شَىْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
অর্থ: “আমি সমস্ত কিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা ফিকির করো। ” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
مَخْلُوْقُ اللهِ اَلذَّكَرُ وَالْاُنْثٰى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত মাখলূকাত বা সৃষ্টি (জীব বা প্রাণী) পুরুষ এবং মহিলা এই দুই শ্রেণীর। ” (তাফসীরে রূহুল বায়ান, তাফসীরে সিরাজুল মুনীর, ফুতুহুল গইব, তাফসীরে যামাখশারী ইত্যাদি)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ اِنَاثًا وَّيَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ الذُّكُوْرَ. اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّاِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَّشَاءُ عَقِيْمًا اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন সমস্ত আসমান এবং যমীনের মালিক। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা মেয়ে সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা ছেলে সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন ছেলে ও মেয়ে উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু জানেন, সমস্ত বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। ” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯-৫০)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِذَا مَرَّ بِالنُّطْفَةِ ثِنْتَانِ وَاَرْبَعُوْنَ لَيْلَةً بَعَثَ اللهُ اِلَيْهَا مَلَكًا فَصَوَّرَهَا وَخَلَقَ سَمْعَهَا وَبَصَرَهَا وَجِلْدَهَا وَلَحْمَهَا وَعِظَامَهَا ثُمَّ قَالَ يَا رَبِّ اَذَكَرٌ اَمْ اُنْثٰى فَيَقْضِىْ رَبُّكَ مَا شَاءَ وَيَكْتُبُ الْمَلَكُ
অর্থ: “(মাতৃগর্ভে) নুত্বফাহ্ (বীর্য) যখন ৪২ দিন অতিবাহিত হয়, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন। তিনি ওটাকে একটি ছূরত বা আকৃতি দান করে, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশত ও হাড় সৃষ্টি করে দেন। তারপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার রব! এটা কি পুরুষ, না মহিলা হবে? তখন আপনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান সিদ্ধান্ত মুবারক প্রদান করেন এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তা লিপিবদ্ধ করেন। ” (মুসলিম শরীফ, মুসনাদে ইবনে আবী শায়বাহ)
এরূপ আরো অনেক আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ রয়েছে। যেখান থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে কাউকে পুরুষ আর কাউকে মহিলা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি পুরুষ ও মহিলা ছাড়া তৃতীয় কোনো লিঙ্গ সৃষ্টি করেননি। এ বিষয়টিই হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে আরো সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। ফলে উনারা হিজড়া, যে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের লিঙ্গগত অঙ্গ ও আলামতধারী হয়, তাকেও প্রাধান্যপ্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে পুরুষ অথবা মহিলা স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তার উপর পুরুষ বা মহিলার শরঈ হুকুম-আহকাম আরোপ করেছেন। শুধু তাই নয়, খুনছায়ে মুশকিল বা জটিল হিজড়া- যে পুরুষ ও মহিলা উভয় ধরনের লিঙ্গগত বৈশিষ্ট্যধারী হয় এবং কোনো এক লিঙ্গের দিকে প্রাধান্য দেয়ার মতো বাহ্যিক কোনো কারণও জানা যায় না- তার ব্যাপারেও হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, খুনছায়ে মুশকিল বা জটিল হিজড়া যদিও বাহ্যিকভাবে জটিল ও অস্পষ্ট মনে হয়, তারপরেও সে প্রকৃতপক্ষে পুরুষ কিংবা মহিলা-ই হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে ডাক্তারী পরীক্ষা করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই জানতে হবে যে, অবশ্যই সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে পুরুষ ও মহিলার বাইরে তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্তিত্ব নেই। আর অস্তিত্বের স্বীকার করা হলো কাট্টা কুফরী। তাই উনারা আরো অন্যান্য পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَنَّهٗ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْاُنْثٰى
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই তিনিই পুরুষ ও মহিলা জোড়া সৃষ্টি করেছেন। ” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৫)
-মুহাদ্দিস মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীক্ব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৬)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গান-বাজনা অকাট্য দলীল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে হারাম
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪২)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)