ইলমে তাছাওউফ
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে আদব-কায়দা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত (৬)
, ০৩ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০১ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
عَنْ حَضْرَتْ عَطَاءِ الْخُرَاسَانِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَصَافَحُوْا يَذْهَبِ الْغِلُّ وَتَهَادَوْا تَحَابُّوْا وَتَذْهَبِ الشَّحْنَاءُ
অর্থ: হযরত আতা খুরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পরস্পর মুছাফাহা করো। এতে অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পায়, মনের কালি দূর হয়। একে অন্যকে হাদিয়া দাও। এতে মহব্বত গভীর হয় এবং হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয়।” (মুয়াত্তা মালিক শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)
আমি (আলী হাজবিরী) হযরত শায়েখ আবুল কাসিম গুরগানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, ছোহবত বা সঙ্গ লাভের শর্ত কি? তিনি বললেন, মানুষকে আনন্দ দিবে এবং উপকার করবে। নিজের স্বার্থসিদ্ধির আশায় অন্যের সাথে বন্ধুত্ব করার মধ্যেই সংশ্রবের যাবতীয় বিপদ নিহিত। ছোহবত মুবারকের সঙ্গ মাধ্যমে উপকার ও ছওয়াব ওই সময় অর্জিত হবে, যখন তুমি অন্যের স্বার্থ ও শান্তিকে অগ্রাধিকার দিবে।
এখানে মুরীদ বা সালিকের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু আদব বর্ণনা করা হলো। বাকী আরো অনেক কিছু রয়েছে যা শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবত মুবারকে এসে শিখে নিতে হবে।
১। সালিক বা মুরীদ সর্বদাই নিজ মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করবে।
২। মনকে সকল দিক থেকে সরিয়ে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দিকে নিয়োজিত রাখবে। যথাসম্ভব মাল ও জান দিয়ে উনার খিদমত করবে।
৩। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার হুকুম ছাড়া উনার সামনে ফরয ও সুন্নত ব্যতীত কোনো নফল আমল করবেনা, এমনকি যিকিরও না।
৪। মুরীদ এমন স্থানে দাঁড়াবেনা, যাতে করে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার উপর বা উনার ছায়া মুবারক উনার উপর মুরীদের ছায়া পড়ে।
৫। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার খাছ কোনো কিছুই ব্যবহার করবেনা। উনার জায়নামায বা স্যান্ডেল মুবারক উনার উপর পা রাখবেনা। ওযূ-গোসলের স্থানে ওযূ-গোসল করবেনা। পায়খানা-প্র¯্রাবখানার ক্ষেত্রেও একই হুকুম।
৬। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সামনে বসে উনার বিনা হুকুমে খাওয়া-দাওয়া করবেনা, এমনকি এক মুহূর্তের জন্যও অমনোযোগী হবেনা।
৭। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যেদিকে আছেন, সেদিকে কখনোই পা বিস্তার করবেনা বা থুথু ফেলবেনা।
৮। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সকল কাজকেই ভালো মনে করবে, যদিও প্রকাশ্যে তা ভালো মনে না হয়। কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ তায়ালা উনার তরফ থেকে ইলহামপ্রাপ্ত হয়েই কাজ করে থাকেন।
৯। মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করবে। সব ব্যাপারে উনার অনুসরণ করবে। উনার কাছ থেকেই ফিক্বাহর হুকুমাদি শিক্ষা করবে।
১০। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার চাল-চলন ও আচার-ব্যবহার মুবারকে কখনো বাদ-প্রতিবাদ, এমনকি অন্তরে কোনো সন্দেহ পর্যন্ত পোষণ করবেনা।
১১। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট কখনোই কারামত দেখতে চাইবেনা।
১২। মুরীদের মনে কোনো সন্দেহের উদ্রেক হলে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট আরয করবে। তিনি বুঝিয়ে দিলে যদি মন না বুঝে, তবে নিজেরই ত্রুটি মনে করবে। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি কোনো সন্দেহ পোষণ করবেনা।
১৩। কোনো ঘটনা বা স্বপ্ন প্রকাশ পেলে, তা শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট আরয করবে। তিনি যা ব্যাখ্যা করেন, তাই মেনে নিবে। নিজের কাশফ বা ইলহামের উপর কোনোরূপ ভরসা করবেনা।
১৪। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবত মুবারক থেকে বিনা কারণে ও বিনা অনুমতিতে প্রস্থান করবেনা। উনার সামনে উচুস্বরে কথা বলবে না।
১৫। মুরীদ বা সালিক যা কিছুই হাছিল করুক না কেন, তা স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ওসীলায় হাছিল হয়েছে বলে ধারণা রাখবে।
১৬। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট অপরের সালাম নিয়ে আসা আদবের খিলাফ। উনার নিকট এসে কিছুদিন থাকার ইচ্ছা হলে পূর্বেই চিঠি-পত্রাদি বা অন্য কোনো মারফত অনুমতি নিয়ে আসা দরকার। চিঠি-পত্রাদি সরাসরি মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট না লিখে দরবার শরীফ উনার অন্য কারো নিকট লেখাই অধিক শিষ্টতা বা আদব।
১৭। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে কখনোই তর্ক-বিতর্ক করবেনা। উনার উপর নিজ ইচ্ছা চাপানোর চেষ্টা করবেনা বরং উনার ইচ্ছানুসারে কাজ করবে। উনার নিকট এমনভাবে থাকবে, যেমন গোসলদানকারীর হাতে মৃত ব্যক্তি।
১৮। নিজের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ যথাসম্ভব উনার পরামর্শ অনুযায়ী করবে।
১৯। মুরীদ বা সালিক নিজকে সকলের চেয়ে নিকৃষ্ট ও হীন মনে করবে।
২০। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা কাশফ দ্বারা মুরীদের অবস্থা জ্ঞাত হচ্ছেন, এটা না ভেবে উনার নিকট নিজ হাল বা অবস্থা জানাবে।
২১। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে সময় ও সুযোগ বুঝে বিনয়ের সাথে কথা বলবে। উনার জবাব খুব মনোযোগ ও ভক্তিভরে শুনবে।
২২। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার পবিত্র আওলাদ-র্ফযন্দ মুবারক উনাদেরকে উনারই জাত মুবারক হিসেবে উনার তুল্য সম্মান করবে। উনার আত্মীয়-স্বজন উনাদেরকেও পরম শ্রদ্ধা করবে। অন্যদিকে উনার সাথে ঘনিষ্ঠতার দোহাই দিয়ে উনার নিকট মর্যাদা তলব করবেনা।
২৩। অবশ্য মুরীদ যদি প্রাণপণ চেষ্টা করেও শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি আদবসমূহ রক্ষা করতে না পারে, তবে অবশ্য অবশ্যই উনার নিকট অক্ষমতা প্রকাশ করে মাফ নিতে হবে।
২৪। প্রত্যেক তরীক্বা উনার মুরীদ বা সালিকগণের জন্য স্বীয় তরীক্বা উনার পূর্ববর্তী বুযুর্গগণ উনাদের শাজরানামা পাঠ করা, সে বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকিফহাল থাকা একান্ত আবশ্যক।
২৫। প্রত্যেক সালিক বা মুরীদের আপন শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি নিবদ্ধ থাকা উচিত। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)