সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে আদব-কায়দা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত (৫)
, ০২ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
অর্থাৎ একমাত্র আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরই ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে।
বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ হযরত আলী হাজবিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, “সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক দরবেশ মুরীদের ধারণা হলো, আমি কামালিয়াত অর্জন করেছি, ওলী হয়ে গিয়েছি।
সুতরাং কোনো ওলী উনার বা লোক সংশ্রবে থাকার চেয়ে নির্জনে থাকাই আমার জন্য উত্তম। তাই তিনি লোক সংশ্রব ত্যাগ করে নির্জনতা অবলম্বন করেন।
একদিন গভীর রাতে কয়েকজন লোক সেখানে উট নিয়ে উপস্থিত হয়ে বললো, আপনাকে বেহেশতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি। সুতরাং উক্ত দরবেশ উটে আরোহণ করে রওয়ানা হলেন। বেশ কিছুক্ষণ ভ্রমণের পর তাকে একটি মনোরম স্থানে নিয়ে তারা উপস্থিত হলো। এখানে সুন্দর সুন্দর লোক, নানা জাতীয় উপাদেয় খাদ্য, সুমিষ্ট ফল ও ফোয়ারা রয়েছে। পবিত্র ফজর উনার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতেন, অতঃপর ঘুমিয়ে পড়তেন। নিদ্রা ভঙ্গ হলে তিনি দেখতে পেতেন, তিনি তার ঘরের দরজায় পড়ে রয়েছেন।
বেশ কিছুদিন এভাবে চলতে থাকে। তিনি নিয়মিত উটে আরোহণ করে বেহেশতে ভ্রমণ করেন, বেহেশতে আহার করেন। ফলে উনার মধ্যে অহঙ্কার ও গৌরব বদ্ধমূল হয়ে গেলো। তিনি তার বুযুর্গী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার দাবি করতে লাগলেন। হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হলেন, তখন তিনি উনার নিকট গমন করেন। দেখতে পেলেন, তিনি গৌরব ও অহঙ্কারের দাবানলে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি মুরীদকে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এরপর যেদিন তুমি সেখানে যাবে, তখন তিনবার ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলে ফুঁ দিবে।
পরবর্তী রাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। এবার দরবেশের অন্তরে এ বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো যে, সত্যিই তিনি বুযুর্গীর উচ্চ মর্যাদায় উপনীত হয়েছেন। স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার উঁচু মর্তবা ও মা’রিফাত উনার প্রতি তার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা রইলো না। তবুও শুধু অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তিনবার ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করে ফুঁ দিলেন।
মুরীদ স্বয়ং বলেন, আমার ফুঁ দেয়ার সাথে সাথেই বেহেশতের লোকজন যারা পানাহারে মত্ত ছিলো, চিৎকার করে পলায়ন করলো। আমি দেখতে পেলাম, আমি একটি আবর্জনার স্তূপের উপর বসা এবং আমার চারপাশে ইতস্তত ছড়ানো রয়েছে মৃত ব্যক্তিদের হাড়। আমি স্বীয় অবস্থা বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলাম এবং নির্জনতা ছেড়ে বুযুর্গগণ উনাদের ছোহবত মুবারক উনার মাঝে আসলাম।”
পবিত্র ছোহবত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى جحيفة رحـمة الله عليه قال سال الـحكماء وخالل العلماء وجالس الكبراء
অর্থ: “হযরত আবূ জুহাইফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অভিজ্ঞদেরকে জিজ্ঞাসা করো, আলিম উনাদের সাথে মুহব্বত রাখো এবং বৃদ্ধদের সাথে উঠা-বসা করো।” (কানযুল উম্মাল শরীফ, মুস্তাদরাকে হাকীম শরীফ)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ওহী মুবারক করেছিলেন যে, “হে আমার নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম! কয়েক প্রকার লোকের ছোহবত ইখতিয়ার করলে কয়েক প্রকার তাছীর পয়দা হয়ে থাকে।
(১) আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করলে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র মুহব্বত ও মা’রিফাত মুবারক পয়দা হয় এবং দুনিয়া বা গইরুল্লাহর মুহব্বত দূর হয়।
(২) যাহিরী আলিমদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে ইলম বৃদ্ধি হয় কিন্তু হাক্বীক্বতে পৌঁছা যায়না। অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক হাছিল হয়না।
(৩) হাকীম বা অভিজ্ঞদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে প্রত্যেক বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়ছালা পাওয়া যায়।
(৪) বৃদ্ধদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দুনিয়াবী অভিজ্ঞতা পয়দা হয়।
(৫) রাজা-বাদশাহদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে অহঙ্কার পয়দা হয়।
(৬) আমীর-উমরাহদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে দুুনিয়ার প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি পায়।
(৭) সম্পদশালীদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে ধন-সম্পদের প্রতি লোভ পয়দা হয়।
(৮) স্ত্রীলোকদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে কামভাব বৃদ্ধি হয়।
(৯) বাচ্চা বা শিশুদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে খেল-তামাশার প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি হয়।”
এ জন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الصحبة متأثرة
অর্থ: “ছোহবত ক্রিয়া করে।” (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)