সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (১১)
, ০৫ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- কা’ব বিন আশরাফ দ্বীন ইসলামের ক্ষতি সাধনে মারাত্মকভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আপনাদের মধ্যে কে আছেন তার একটা বিহিত করবেন?
সাথে সাথে আওস গোত্রীয় আনছারী ছাহাবী হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়িয়ে আরজী পেশ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি তাকে হত্যা করে ফেলবো? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন ইরশাদ মুবারক করলেন- আপনাকে সেই এখতিয়ার দেয়া হলো।
তখন হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তাকে হত্যা করতে গিয়ে আমাকে কিছু হিকমত অবলম্বন করার ইজাযত দান করুন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন সম্মতি মুবারক দান করলেন।
অতঃপর হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কয়েকজন সঙ্গী-সাথীসহ কাট্টা কাফির কা’ব বিন আশরাফের দফা-রফা করতে গেলেন। তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন- উনি তো (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে দান করতে বলেন তাই আমি বেকায়দায় পড়ে, তোমার কাছে কিছু কর্জ নিতে আসলাম।
তখন কা’ব বিন আশরাফ বললো- আরে এতো মাত্র শুরু! জ্বালাতনের কি দেখেছেন? এমন উৎপীড়ন নির্যাতনে জর্জরিত করে ছাড়বেন, আপনাদের জীবনটাই অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ!
তখন হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন- এখন কি করবো, উনার আনুগত্যতাকে স্বীকার করে ফেলেছি; হুট করে তো ছাড়াও যায় না। আর ক’টি দিন দেখি, কি অবস্থা দাঁড়ায়। তুমি বরং দয়া করে এখন কিছু শস্য ধার দাও।
কা’ব বললো- হ্যাঁ, দিতে তো পারি, তবে তার বদলে আমার কাছে কিছু বন্ধক রাখতে হবে। তখন হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার সঙ্গী-সাথীরা জিজ্ঞেস করলেন- তুমি বন্ধক হিসেবে কি চাও? কা’ব বললো- আপনাদের আহলিয়া বা স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখতে পারেন। এ কথা শুনে হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, এ কেমন কথা? তুমি হলে সারা আরবের মাঝে সবচাইতে সুদর্শন পুরুষ। আমাদের আহলিয়া বা স্ত্রীদের সম্পর্কে কতটুকুই বা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি? কা’ব বললো- তাহলে আপনাদের পুত্র-কন্যাদেরকেই রেখে যান। হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তাও বা কি করে হতে পারে? তাহলে পরবর্তী সময়ে লোকজন বলাবলি করবে, খোটা দিবে সামান্য দু’এক মণ শস্যের দায়ে যাদের বন্ধক রাখতে হয়েছিল, এরা তো উনারাই। এটা তো আমাদের জন্য চরম লাঞ্ছনাকর ও অপমানজনক। হ্যাঁ, আমরা একটা উপায় করতে পারি আর তা হলো, আমাদের হাতিয়ার, তরবারী তোমার কাছে বন্ধক রাখতে পারি। ইহুদী দুশমন এতেই রাজী হয়ে গেল।
অতঃপর রাতে বন্ধক রাখার জন্য তরবারীসহ হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সঙ্গী সাথী উনাদেরকেসহ পুনরায় কা’বের বাড়িতে গেলেন। উনাদের সাথে ছিলেন কা’বের দুধভাই সম্পর্কীয় হযরত আবূ নায়লা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। কা’ব উনাদেরকে দূর্গের ভিতরে ডেকে নিলো। কা’ব নিজের শয়নকক্ষ থেকে বের হয়ে উনাদের নিকট আসার সময় তার স্ত্রী বলে উঠলো- অসময়ে তুমি যাচ্ছ কোথায়? কা’ব বললো- ভয়ের কোন কারণ নেই, মুহম্মদ বিন মাসলামা এবং আমার ভাই আবূ নায়লাও রয়েছে। কা’বের স্ত্রী বললো- এদের ডাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে, আমি যেন রক্তের গন্ধ পাচ্ছি। কা’ব বললো- না না, ভয়ের কোন কারণ নেই। এছাড়া কোন মোকাবিলার জন্য যদি রাতেও ডাকা হয় তবে খান্দানী ব্যক্তি হিসেবেও আমার যাওয়া উচিত।
এদিকে হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে আরো দু’জন ছিলেন। উনাদেরকে তিনি বলে রাখলেন- যখন দেখবেন আমি কা’বের চুল শুঁকার ভান করতে করতে তার চুল খুব শক্ত করে ধরে মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছি তখনি আপনারা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ইতোমধ্যে কা’ব মতির চাদর পরে নিচে নেমে এলো। তার চুল এবং শরীর থেকে ভূর ভূর করে আতরের ঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন- আজকের মত এতবেশি সুঘ্রাণ আমি জীবনেও শুঁকি নাই। কা’ব তখন ফখর করে বলে উঠলো- বর্তমানে আরবের সবচাইতে এক সুন্দরী রমণী আমার ঘরে। সে খুবই সুগন্ধিযুক্ত আতর ব্যবহার করে। তখন হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কা’বকে বললেন- ভাই! তোমার মাথাটা একটু শুঁকতে অনুমতি দিবে কি? কা’ব বললো- হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই দেবো।
অতঃপর একবার কাব শুঁকতে দিলে আবারো হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ভাইরে! কি সুন্দর সুঘ্রাণ! দাও দাও আবারো একটু শুঁকতে দাও। কা’ব উৎফুল্ল চিত্তে বললো, চমৎকার, শুঁকেন শুঁকেন। আবার শুঁকে দেখেন।
এবার শুঁকতে গিয়ে হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কা’বের মস্তকের কেশগুচ্ছ এমন দৃঢ় মুষ্ঠিতে ধরলেন যে নড়াচড়ার কোনো উপায় নেই। তিনি উনার সাথীদেরকে ইশারা করে বললেন- এবার দফা-রফা করে দিন। সাথে সাথেই উনার সঙ্গী-সাথীবৃন্দ কাট্টা কাফির কা’ব বিন আশরাফের চিরস্থায়ী মূলোৎপাটন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কা’ব বিন আশরাফের মূলোৎপাটনের ঈমানদীপ্ত অভিযান শেষ করে আওস গোত্রীয় বীর মুজাহিদ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ফিরে আসলে তিনি স্বয়ং তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উনাদেরকে স্বাগত জানালেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে উনাদের জন্য সন্তুষ্টি ও কল্যাণের দুআ মুবারক করলেন। (সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) *****
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)