সম্মানিত গাতফানের জিহাদ (২)
, ২৪শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০২ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) :
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি দাছূরের বুকে আঘাত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে পড়ে গেল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার হাত থেকে তরবারী নিয়ে বললেন, এখন কে তোমাকে হিফাযত করবে? সে বলল, আমাকে হিফাযতকারী আর কেউ নেই। তবে আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি-
أَشْهَدُ أَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ-
অর্থ: “আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই নতুন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে তরবারি তুলে দিলেন। এই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আপন ক্বওমের লোকদের কাছে ফিরে গেলেন। তারা বললো, আপনার কি হয়েছিল? আপনিতো তরবারি তাক করে উনার কাছে পৌঁছে গেলেন। কিন্তু কিছুইতো করতে পারলেন না। নাঊযুবিল্লাহ! তিনি বললেন, আমি সেখানে একজন সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিকে দেখেছি। তিনি আমার বুকের উপর এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। চিৎ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। একথা বলার পর দাছুর স্বীয় ক্বওমের লোকদেরকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দিলেন। এদিকে পবিত্র আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হলো-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَن يَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ-
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহকে স্মরণ কর, যখন এক সম্প্রদায় আপনাদের বিরুদ্ধে হস্ত উত্তোলন করতে চেয়েছিল, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের হাত থেকে আপনাদেরকে হিফাযত করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১১)
উপরোক্ত ওয়াক্বিয়া মুবারক ‘বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে’ বর্ণিত রয়েছে।
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَخْبَرَهُ أَنَّهُ غَزَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قِبَلَ نَجْدٍ فَلَمَّا قَفَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَفَلَ مَعَهُ فَأَدْرَكَتْهُمُ الْقَائِلَةُ فِي وَادٍ كَثِيرِ الْعِضَاهِ فَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَتَفَرَّقَ النَّاسُ فِي الْعِضَاهِ يَسْتَظِلُّونَ بِالشَّجَرِ وَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ تَحْتَ سَمُرَةٍ فَعَلَّقَ بِهَا سَيْفَهُ قَالَ حَضْرَتْ جَابِرٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا فَنِمْنَا نَوْمَةً ثُمَّ إِذَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدْعُونَا فَجِئْنَاهُ فَإِذَا عِنْدَهُ أَعْرَابِيٌّ جَالِسٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إِنَّ هَذَا اخْتَرَطَ سَيْفِي وَأَنَا نَائِمٌ فَاسْتَيْقَظْتُ وَهْوَ فِي يَدِهِ صَلْتًا فَقَالَ لِي مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي قُلْتُ اللَّهُ فَهَا هُوَ ذَا جَالِسٌ ثُمَّ لَمْ يُعَاقِبْهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ.
অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি নজদ এলাকায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সম্মানিত জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণ করেন। সম্মানিত জিহাদ শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তন মুবারক করলে তিনিও উনার সাথেই প্রত্যাবর্তন করেন। পথিমধ্যে এক উপত্যকায় একটি কাঁটা ভরা গাছের নিকটবর্তী হন, তখন ছিলো দিনের মধ্যভাগ তথা মধ্যাহ্নের সময়। উনাদের সকলের ভীষণ গরম অনুভূত হচ্ছিল। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই গাছের নিচে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ছায়াদার বৃক্ষের খোঁজে কাঁটাবনের মাঝে ছড়িয়ে পড়লেন। এদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি বাবলা গাছের নিচে অবস্থান মুবারক করে স্বীয় তরবারি মুবারক খানা গাছের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখলেন। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সবেমাত্র আমরা বিশ্রামে গিয়েছি। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে ডাকলেন। আমরা উনার কাছে খুব দ্রুত হাযির হলাম। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এক বেদুঈন বসা ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মুত্বমাইন্নাহ্ মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘুমানো শান মুবারক-এ) ছিলাম, সে আমার তরবারি মুবারক হস্তগত করে কোষমুক্ত অবস্থায় তা আমার উপর উঁচিয়ে ধরলে আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মুত্বমাইন্নাহ্ মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘুমানো শান মুবারক) থেকে উঠি। তখন সে আমাকে বলল, এখন আপনাকে আমার হাত থেকে কে হিফাযত করবেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন। আমি বললাম, যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে হিফাযত করবেন। সুবহানাল্লাহ! আপনারা দেখুন, এই সে ব্যক্তি বসে আছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে কোন প্রকার শাস্তি দিলেন না।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৪১৩৫, ৪১৩৬, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে হাব্বান)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)