সম্মানিত উহুদ জিহাদ: (৬৭ পর্ব)
, ২৯ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
সম্মানিত উহুদ জিহাদে পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পাশাপাশি হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারাও বেমেছাল অবদান মুবারক রেখেছেন। উনারা সম্মানিত এই জিহাদ মুবারকে হযরত পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উনারা পানি পান করাতেন। আবার কোন হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা স্বশরীরে সম্মানিত জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণও করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এই সমস্ত হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন, হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি। সম্মানিত জিহাদের ময়দানে তিনি ছিলেন, ক্ষিপ্রগতিসম্পন্না, তেজোদ্দীপ্তা ও অপ্রতিরোধ্যা। সরাসরি তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুবারকে জিহাদ করেছেন। তিনি পাশে ছিলেন উনার আহাল হযরত যায়িদ ইবনে আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার এবং উনার দু’ ছেলে হযরত আম্মারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের। তিনি বলেন, আমি সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন মশক ভর্তি করে পানি নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কাছে পৌঁছতাম। একসময় সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন অনেকে শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন তখন আমি সরাসরি কাফির মুশরিকদের সাথে জিহাদ মুবারক শুরু করলাম।
এই সম্মানিত জিহাদ মুবারকে আমার উপর তেরটি আঘাত লেগেছিল। এগুলোর মধ্যে একটি আঘাতের ক্ষত ভালো হতে লেগেছিলো পুরো একটি বৎসর। একবার উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এ আঘাত আপনাকে কে দিয়েছে? হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, মালউন ইবনে কামিয়া। তিনি আরো বললেন, তাকে আমি ছেড়ে দেইনি। বিভিন্নভাবে তাকে আমি আঘাত করেছি। কিন্তু এই কাট্টা কাফির ইবনে কামিয়া সে দু’টি বর্ম পরিহিত ছিলো বিধায় আমার আঘাত তাকে কাবু করতে পারেনি।
স্মরণীয় যে, যখন আমাকে কাফির মুশরিকরা আঘাত করে জখম করে, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার ছেলে হযরত আম্মারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ডেকে বললেন, তাড়াতাড়ি আপনি আপনার মায়ের কাছে চলে যান। উনার ক্ষতস্থানে পট্টি লাগান। হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন আমি ও আমার দুই ছেলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে থেকে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করেছি। হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আরো বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে যখন সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করছিলেন তখন আমি সামনে ছিলাম। আমার হাতে কোন ঢাল ছিলো না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে ঢাল দেখে উনাকে বললেন, হে ঢালধারী ব্যক্তি! আপনার ঢালটি এমন একজনকে দিন যিনি সম্মানিত জিহাদ মুবারকে রত। তিনি উনার ঢাল মুবারকটি আমাকে দিলেন। আমি সেই ঢাল মুবারক হাতে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে যে সমস্ত কাফির মুশরিকরা এগিয়ে এসেছিলো তাদেরকে প্রতিহত করতে লাগলাম। এক পর্যায়ে এক কাফির তলোয়ার দিয়ে আমাকে আঘাত করলো। আমি আঘাতও ফিরিয়ে দিলাম। অতঃপর আমার তরবারি মুবারক দিয়ে তার ঘোড়ার উপর আঘাত করলাম। তার ঘোড়াটি পড়ে গেলো।
সেই কাফির ছিটকে পড়ে গেল তার বাহন থেকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবকিছুই তখন দেখছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমার ছেলেকে ডাক দিয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত আম্মারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! তাড়াতাড়ি আপনার মায়ের কাছে চলে আসুন। তারপর আমার ছেলে ও আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারকে সম্মিলিতভাবে ওই কাফিরকে আক্রমণ করলাম এবং তাকে জাহান্নামের পাঠিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
সম্মানিতা মহিলা ছাহাবী হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন কাফির মুশরিকরা আমাকে জখম করলো। ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না। আমার মা ক্ষতস্থানে পট্টি বেঁধে দিলেন এবং বললেন, আপনি উঠুন। সম্মানিত জিহাদের ময়দানে যান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত আম্মারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মা! আপনার মতো শক্তি ও সাহস আর কার আছে? তখন ওই কাফির লোকটি আমাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, যে আমাকে জখম করেছিলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে উম্মু আম্মারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! ওই লোকটি আপনার ছেলেকে জখম করেছে। হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি লোকটির পায়ের গোছায় তরবারী দ্বারা আঘাত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুদ দারাজাত অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারকে লুটিয়ে পড়লো। তা দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরুর তাক্বরীর বা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাবাস্সুম মুবারক (মুচকি হাসি) দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল্লাহ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দাঁত মুবারক দৃষ্টিগোচর হলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত উম্মে আম্মারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আপনিতো আপনার ছেলের আঘাতের ক্বিছাছ খুব ভালো ভাবেই গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া, যিনি আপনাকে শক্রর উপর প্রাবল্য দান করলেন এবং আপনার সামনেই তাকে হালাক করে দিয়ে আপনার চোখকে প্রশান্ত করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত নাসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমার জন্য দোয়া মুবারক করবেন, আমি যেনো আপনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের গোলামীতে সম্মানিত জান্নাতে অবস্থান মুবারক করতে পারি। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য, উনার আহাল ও সন্তান উনাদের জন্য দোয়া মুবারক করলেন।
"اللَّهُمَّ اجْعَلْهُمْ رِفَاقِي في الْجَنَّةِ"
অর্থ: “ইয়া বারে ইলাহী! আপনি উনাদেরকে সম্মানিত জান্নাতে আমার গোলাম বানিয়ে নিন।” হযরত উম্মু আম্মারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই সম্মানিত দোয়া মুবারক আমার সম্বল। এখন আমার উপর যত মুছিবত আসুক না কেনো, তাতে আমার আর কোন অসুবিধা নেই। সুবহানাল্লাহ! পরবর্তীতে হযরত নাসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি অনেক জিহাদ মুবারকে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। (দিরাসাতু ফিস্ সীরাত, মিরয়াতুয যামান, মাদারিজুন নুবুওওয়াত) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)