সম্মানিত উহুদ জিহাদ: (৪৯ পর্ব)
, ১২ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৩ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৩ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২০ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
অত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই সম্মানিত জিহাদে কাফির মুশরিকদের পতাকাবাহীরা একের পর এক নিহত হলে এক পর্যায় কাট্টা কাফির মুসাফি ইবনে ত্বলহা পতাকা তুলে নেয়। হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কাফিরটাকে মুহূর্তের মধ্যে হত্যা করেন। তারপর তার ভাই কাট্টা কাফির আল জুলাস ইবনে ত্বলাহ মতান্তরে কাট্টা কাফির কিলাব ইবনে ত্বলাহ পতাকাটি নিলে তাকেও তিনি তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করেন।
উল্লেখ্য যে, এই কাট্টা কাফির উকবা সম্পর্কে বলা হয়, সে ছিলো খুবই নীচ প্রকৃতির লোক। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম দুশমনদের মধ্যে একজন। সে নানাভাবে কষ্ট দেয়ার চেষ্টায় দিন অতিবাহিত করতো। ঝুড়ি ভরে ময়লা-আবর্জনা এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হুজরা শরীফ উনার দরজা মুবারকে ফেলে রাখতো। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারকে অবস্থান মুবারক করছিলেন, এমতাবস্থায় এই কাট্টা কাফির, নরাধম কোথা থেকে ছুটে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূরুল হুদা তথা মহাসম্মানিত মাথা মুবারক উনার উপর এমন ভাবে চেপে বসে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক তাখলিফী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর একদিনের ঘটনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারকে অবস্থান মুবারক করছিলেন। এই পাষন্ড কোথা থেকে মরা ছাগলের নাড়িভুঁড়ি কাঁধে করে এনে উনার নূরুল হুদা অর্থাৎ মহাসম্মানিত মাথা মুবারক উনার উপর ঢেলে দেয়। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! এক বর্ণনায় রয়েছে, এই কাট্টা কাফির পাপিষ্ঠ উকবা সে সম্মানিত বদর জিহাদে মুসলমান উনাদের হাতে বন্দী হয়েছিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারকে হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কাফিরকে হত্যা করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি, আল ইসাবা, আনসাবুল আশরাফ, আছহাবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জীবন কথা)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদে অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি কাট্টা কাফির মুসাফি ইবনে ত্বলহা ও তার ভাই কাট্টা কাফির জুল্লাস ইবনে ত্বলহাকে হত্যা করেন। হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উভয় কাফিরের উপর একের পর এক তীর নিক্ষেপ করেন। তাদের এক একজন করে (মারাত্মকভাবে আহত হয়ে) তাদের মা সুলাফার কাছে পেীঁছে নিজের মাথা তার কোলে রাখে। তাদের মা তাদের দু’জনকে জিজ্ঞাসা করে, হে বৎস! কে তোমাদের আহত করেছে? তারা প্রত্যেকে বলল, তাতো জানি না, তবে আমি আমার উপর তীর নিক্ষেপ করার সময় এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি এই নাও, আমি আবূল আফলাহর ছেলে। তখন তাদের মা প্রতিজ্ঞা করলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি তাকে সুযোগ দেন, তবে সে হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা মুবারকের খুলিতে মদ পান করবে। নাউযুবিল্লাহ! অপর দিকে হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দুয়া মুবারক করেছিলেন যে-
أَنْ لَا يَمَسَّ مُشْرِكًا أَبَدًا. وَلَا يَمَسّهُ مُشْرِكٌ.
অর্থ: ‘তিনি নিজে কখনও কোন মুশরিককে স্পর্শ করবেন না। আর উনাকেও যেন কোন মুশরিক স্পর্শ করতে না পারে।’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, মাছাবিহুল জামি’, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ)
কাট্টা কাফির উছমান ইবনে আবূ ত্বলহা সম্মানিত উহুদের জিহাদের সময় এই কবিতা আবৃত্তি করেছিল, তখন সে মুশরিকদের পতাকাবাহী ছিল-
إنَّ عَلَى أَهْلِ اللِّوَاءِ حَقَّا ... أَنْ يَخْضِبُوا الصَّعْدَةَ أَوْ تَنْدَقَّا.
অর্থ: ‘মনে রেখ! পতাকাবাহীদের দায়িত্ব হলো, তারা নিজ তীরগুলোকে (শত্রুর রক্তে) ক্রমাগত রঞ্জিত করতে থাকবে, যতক্ষণ না তা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়।’ নাউযুবিল্লাহ!
যখন কাট্টা কাফির উছমান ইবনে আবূ ত্বলহা উক্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল, তখন সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি তাকে হত্যা করেন। (রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক) (চলবে)।
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৭)
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৫)
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৬)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৪)
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৫)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৪)
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৩)
১৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (২৩)
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরীমূলক কাজের ফিরিস্তি (৩)
১০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (২)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)