সম্মানিত উহুদ জিহাদ: (৪২ পর্ব)
, ২৮ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২১ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২১ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক উনার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর থেকে পরবর্তী হায়াত মুবারক ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে পূর্ণ ফানা ও বাঁকা। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! যা প্রত্যেক মুসলমান উনাদের জীবনে শিক্ষণীয় ও ফিকিরের বিষয়।
উল্লেখ্য যে, হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক হচ্ছে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক ‘মুছয়াব’। উনার কুনিয়াত মুবারক ‘আবূ মুহম্মদ’। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর উনার নাম মুবারক রাখা হয় মুছয়াব আল-খাইর। উনার পিতার নাম উমাইর এবং মাতা খুনাস বিনতে মালিক। পিতা-মাতার পরম আদরের মধ্যে তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে লালিত পালিত হন। তিনি অন্যতম সুদর্শন যুবক ছিলেন। উনার মা ছিলেন আরব দেশের বড় সম্পদশালীদের একজন। যার কারণে তিনি অত্যন্ত বিলাসের সাথে প্রতিপালিত হন। তখনকার যুগে পবিত্র মক্কা শরীফে যত রকমের আতর সুঘ্রাণ পাওয়া যেত এবং উৎকৃষ্ট কাপড় পাওয়া যেত তিনি সবগুলোই ব্যবহার করতেন। তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মাঝে সর্বোৎকৃষ্ট সুঘ্রাণময় আতর ব্যবহারকারী। তিনি উনার সুপুরুষ, বুদ্ধিমত্তা এবং বিচক্ষণতার জন্যও তৎকালীন কুরাইশদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তি। তিনি ছিলেন কুরাইশদের সকল বৈঠক ও মাজলিসের শোভা ও মধ্যমণি। তীক্ষè মেধা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক ছিলো উনার চরিত্র মুবারক উনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি যে খুশবু মুবারক ব্যবহার করতেন তার এমন সুঘ্রান ছিলো যে, তিনি যে রাস্তা দিয়ে যেতেন সেই রাস্তার পাশে মহিলারা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো উনার সাক্ষাত লাভের জন্য। তিনি যে পোশাক মুবারক পরিধান করতেন তা অনেক দামি এবং বিশেষভাবে উহা আলাদা করে সেলাই করা হতো।
বর্ণিত রয়েছে, যে কাপড় তিনি একবার পরিধান করতেন সে কাপড় আর দ্বিতীয়বার পরিধান করতেন না। তিনি যে কতখানি প্রাচুর্যতা সম্পন্ন ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। (মাগাযিউল ওয়াক্বিদী)
হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, তিনি উনার এই বিলাসবহুল অবস্থা থেকেই একবার শুনতে পেলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নতুন একটি সম্মানিত দ্বীন নিয়ে আগমন করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! কিন্তু উনার মা ছিলো খুব কড়া মেজাজের। তিনি ভাবলেন একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে যাবেন। তাই তিনি সুযোগ খুঁজছিলেন। একদা রাতের বেলা চুপিচুপি পা টিপে টিপে ঘরের দরজা খুলে ‘দারুল আরকাম শরীফ’ তথা যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিতেন সেখানে উপস্থিত হয়ে দরজা মুবারকে টোকা দিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দরজা মুবারক খুলে দেখতে পেলেন হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, যিনি শাহিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি মুত্বালা’ আলাল গয়িব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সেই মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন ‘দারুল আরকাম শরীফে’ তা’লীম তালক্বীন মুবারক দিচ্ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বসার জন্য নির্দেশ মুবারক করলেন। তিনি মহাসম্মানিত মাজলিস মুবারকে বসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত তা’লীম-তালক্বীন মুবারক শুনতে লাগলেন। মহাসম্মানিত তা’লীম মুবারক শুনামাত্রই তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সম্মানিত ঈমান মুবারক দান করুন। তিনি “দারুল আরাকাম শরীফেই’ ঈমান আনয়ন করলেন। তিনি পাঠ করলেন-
أَشْهَدُ أنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَأشْهَدُ أنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)