সম্মানিত উহুদ জিহাদ: (৩১ পর্ব)
, ২১শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ৩০শে মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আইন ও জিহাদ
স্মরণীয় যে, মক্কার কাফির মুশরিকরা সম্মানিত উহুদের ময়দান থেকে সবাই এদিক সেদিক পলায়ন করল যার ফলে ময়দানে কাফিরদের কেউই অবশিষ্ট থাকলো না। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন দেখলেন কাফির মুশরিকরা পলায়ন করেছে তারা আর ময়দানে নেই তখন উনারা নিজেদের মাল-সামানা এবং কাফির মুশরিকদের সম্পদগুলো গনীমত হিসেবে পেয়ে সংগ্রহ করতে লাগলেন। কারণ সম্মানিত জিহাদে কাফির মুশরিকদের থেকে লব্ধ গনীমতকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَكُلُوا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًا ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۚ إِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.
অর্থ: “আর আপনারা খাদ্য গনীমত হিসেবে পবিত্র ও হালাল সম্পদ অর্জন করেছেন তা থেকে আহার করুন। মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় করুন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (পবিত্র সূরা আল আনফাল শরীফ: পবিত্র সূরা শরীফ- ৮)
অর্থাৎ সম্মানিত জিহাদের ময়দান থেকে কাফির মুশরিকরা ছুটাছুটি করতে থাকে ও তারা জিহাদের ময়দান থেকে এক পর্যায় পলায়ন করে। যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দেখলেন যে, কাফির মুশরিকরা জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে গেছে তখন কিছু সংখ্যক সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা স্বীয় জিনিস পত্র গোছগাছ ও হালাল গনিমতের মাল সংগ্রহ করতে লাগলেন। কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অনেকেই মনে করলেন যে, সম্মানিত জিহাদের সমাপ্তি ঘটেছে তাই উনারা বিলম্ব না করে গনিমতের মাল সংগ্রহ করা শুরু করেন। আর এ সুযোগে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) তিনি কিছু লোকজন নিয়ে চুপি চুপি পাহাড়ের আড়াল দিয়ে এসে অতর্কিত হামলা করেন। এতে অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
সম্মানিত উহুদ জিহাদে কাফির মুশরিকরা এমন পরাজয় বরণ করেছিল যে, তাদের কথিত পতাকা যা তারা যুদ্ধের জন্য উত্তোলন করেছিল সেই পতাকা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। তাদের পতাকা মাটিতে পড়ে যাওয়ার ফলে তারা সম্মানিত জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যেতে লাগলো। তাদের পতাকা মাটিতে পড়ে গেলেও পরবর্তীতে এক কাট্টা কাফির সুয়াব সেই পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয় এবং সেও সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হাত মুবারকে নিহত হয়। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
কাট্টা কাফির সুয়াব সম্পর্কে হযরত হাসসান ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। যা হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক আলিম উনাদের বর্ণনা মতে এ সময় কাফির মুশরিকদের পতাকা একেবারেই অবনমিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু পরে যখন আমরাহ বিনতে আলকামা হারিছী কুরাইশ কাফির মুশরিকদের উদ্দেশ্যে তা উত্তোলন করল তখন কাফির মুশরিকরা পুনরায় পতাকার চারপাশে সমবেত হলো। এক পর্যায় এই পতাকা কাট্টা কাফির সুয়াব নামের এক হাবশীর হাতে এসে গেল। সে ছিল কাট্টা কাফির আবূ ত্বলহার ক্রিতদাস এবং কাফির মুশরিকদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তি যে এই কাফিরদের পতাকা উঠিয়েছিল। কাট্টা কাফির এই পতাকা রক্ষা করতে গিয়ে ক্রমাগত লড়াই করে যেতে লাগল এমনকি যখন তার উভয় হাত কেটে দেওয়া হলো, তখন সে হাঁটুর উপর উপুড় হয়ে বুক ও গলার দ্বারা পতাকাকে ধরলো এবং নিহত না হওয়া পর্যন্ত তা ধরে রাখলো। নাউযূবিল্লাহ! সে তখন বলছিল, আয় আল্লাহ পাক! আমি কি কোন ওযর অবশিষ্ট রেখেছি। (সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এ প্রসঙ্গে হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
فَخَرْتُمْ بِاللِّوَاءِ وَشَرُّ فَخْرٍ ... لِوَاءٌ حِينَ رُدَّ إلَى صُؤَابِ
পতাকা নিয়ে তোমরা গর্ব করে থাক। পতাকা বিষয়ে সবচেয়ে বেশী নিন্দনীয় ঘটনা ঘটল যখন সেটি সাওয়াব ক্রীতদাসের হাতে দেয়া হল।
جَعَلْتُمْ فَخَرَكُمْ فِيهِ بِعَبْدٍ ... وَأَلْأَمُ مَنْ يَطَا عَفَرَ التُّرَابِ
এ পতাকা নিয়ে তোমরা গর্ব করছো, এক ক্রিতদাসের কারণে যার মায়ের অবস্থা এই যে, তাকে ধূসর বর্ণের লোকেরা ব্যবহার করতো। (এখানে লোক দ্বারা আবূ ত্বলহার দিকে ইংগিত করা হয়েছে)।
ظَنَنْتُمْ، وَالسَّفِيهُ لَهُ ظُنُونُ ... وَمَا إنْ ذَاكَ مِنْ أَمْرِ الصَّوَابِ
তোমরা ধারণা করেছিলে আর মুর্খ লোকেরা তো অনেক কিছুই অনুমান করে থাকে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাস্তবতার সাথে ধারণার সম্পর্ক খুব কমই থাকে।
بِأَنَّ جِلَادَنَا يَوْمَ الْتَقَيْنَا ... بِمَكَّةَ بَيْعُكُمْ حُمْرَ الْعِيَابِ
নিশ্চয়ই যেদিন আমরা এবং তোমরা (সম্মানিত উহুদ জিহাদে) মুখোমুখী হয়েছিলাম, সেদিন তোমাদের ধারণা ছিল যে) তোমরা আমাদের চামড়া পবিত্র মক্কা শরীফে (বানিজ্যিক পণ্য রাখার) লাল থলে বানিয়ে বিক্রি করবে। নাউযুবিল্লাহ!
أَقَرَّ الْعَيْنَ أَنْ عُصِبَتْ يَدَاهُ ... وَمَا إنْ تُعْصَبَانِ عَلَى خِضَابِ
তার দুহাত রক্তাক্ত হওয়ার দৃশ্যে আমি চোখ জুড়িয়েছি। রক্তের খিযাবতো তাকে লাগাতেই হবে। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারিখুত ত্ববারী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) (চলবে)।
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)