সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে রজম বা ছঙ্গেছারের বিধান (৩)
, ১৬ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ২ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنَّهُ خَطَبَ فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ بَعَثَ حَضْرَتْ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بِالْحَقِّ، وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ، فَكَانَ فِيمَا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْهِ آيَةُ الرَّجْمِ. قَرَأْنَاهَا وَوَعَيْنَاهَا وَعَقَلْنَاهَا، فَرَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَرَجَمْنَا بَعْدَهُ، فَأَخْشَى إِنْ طَالَ بِالنَّاسِ زَمَانٌ أَنْ يَقُولَ قَائِلٌ: مَا نَجِدُ الرَّجْمَ فِي كِتَابِ اللَّهِ، فَيَضِلُّوا بِتَرْكِ فَرِيضَةٍ أَنْزَلَهَا اللَّهُ، وَإِنَّ الرَّجْمَ حَقٌّ فِي كِتَابِ اللَّهِ عَلَى مَنْ زَنَى، إِذَا أُحْصِنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ، إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ، أَوْ كَانَ الْحَبَلُ، أَوِ الاعْتِرَافُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার খুতবা মুবারকে বলেছেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হক্ব বা সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। আর উনার উপর সম্মানিত কিতাব মুবারক অবতীর্ণ করেছেন। এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অবতীর্ণ বিষয়াদির একটি ছিলো রজম বা ছঙ্গেছারের পবিত্র আয়াত শরীফ। আমরা সেই সম্মানিত আয়াত শরীফ পড়েছি, বুঝেছি ও আয়ত্তও করেছি। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাথর মেরে হত্যা করেছেন। (অর্থাৎ উনার নির্দেশ মুবারকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা রজম বা ছঙ্গেছার করেছেন। ) আমরাও উনার পরে পাথর মেরে হত্যা বা রজম করেছি। আমি আশংকা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পর কোন লোক এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবে রজম বা পাথর মেরে হত্যার আয়াত শরীফ পাচ্ছি না। ফলে তারা এমন একটি ফরয আমল বাদ দেয়ার কারণে পথভ্রষ্ট হবে, যা মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওহীর মাধ্যমে নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কিতাব অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির উপর রজম বা পাথর মেরে হত্যা অবধারিত যে বিবাহিত হবার পর যিনা বা ব্যভিচার করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী হোক, যখন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা হামিলা বা স্বীকারোক্তি পাওয়া যাবে। ” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
স্মরণীয় যে, ব্যভিচার বলতে বুঝায় সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধন ছাড়া নারী-পুরুষের অবৈধ নিরিবিলি অবস্থান। সম্মানিত শরীয়তের দৃষ্টিতে ব্যভিচার সম্পূর্ণরূপে হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً
অর্থ: “আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা চরম অশ্লীল কাজ এবং মন্দ রাস্তা। ” (পবিত্র সূরা বানী ইসরাইল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩২)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নারী-পুরুষের অবৈধ নিরিবিলি অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর ব্যভিচার একটি ঘৃণ্য, চরম অশ্লীল ও নিকৃষ্টতম কাজ। এতে করে নৈতিক ও সমাজ জীবনে সৃষ্টি হয় কঠিন অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা। নাউযুবিল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী ব্যভিচারী বৃদ্ধকে অভিসম্পাত দেয়। আর জাহান্নামে ব্যভিচারীর লজ্জাস্থান থেকে যে দুর্গন্ধ বের হবে, সেই দুর্গন্ধে অন্যান্য জাহান্নামীও কষ্ট পাবে। ’ নাউযুবিল্লাহ!
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ব্যভিচারপরায়ণ লোক মূর্তিপূজকের মতো। ’ নাউযুবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
অর্থ: “প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, তোমরা অশ্লীল আচরণের নিকটেও যাবে না। ” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫১)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘ফাওয়াহিশা’ শব্দ মুবারকের অর্থ ব্যভিচার কিংবা অশ্লীল আচরণ। ইহা বড় পাপ (কবীরা গোনাহ)। এই অশ্লীল আচরণগুলো প্রকাশ্যে হাত, পা, চোখ ইত্যাদি বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। নাউযুবিল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوى وَيَتَمَنّى وَيُصَدِّقُ ذلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُه.
অর্থ: “দুই চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, কানের ব্যভিচার হলো উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের ব্যভিচার হলো আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের ব্যভিচার (নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা, আর পায়ের ব্যভিচারের দিকে অগ্রসর হওয়া এবং মনের বা অন্তরের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর শরমগাহ তা সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। ” নাউযুবিল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, আহমাদ শরীফ, ইবনে হিব্বান) (ইনশাল্লাহ চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৬)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৭)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যে বা যারা কাফিরদের সাথে সম্পর্ক রাখবে সে দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হবে
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
টাইম বোমার মতোই সুপ্ত বিপদ হলো প্রতিবেশী বিধর্মী সম্প্রদায়
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)