সপ্তাহের সাত দিনের নামকরণ সম্পর্কে কিছু কথা
, ২৩ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
انَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِىْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّموتِ وَالْاَرْضَ مِنْهَا اَرْبَعَة حُرُم ذلِكَ الدّينُ الْقَيّمُ فَلَا تَظْلِمُوْا فِيهِنَّ اَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِيْنَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُوْنَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوْا اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ.
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উনার বিধানে আসমানসমূহ ও যমীনসমূহ সৃষ্টির দিন হতেই গণনা হিসেবে মাসের সংখ্যা ১২টি। তন্মধ্যে ৪টি হারাম (যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ) মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ মাসগুলোর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না। তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে জিহাদ করবে, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখুন! মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি মুত্তাক্বীনগণের সঙ্গে আছেন। (পবিত্র সূরাতুত তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৬)
উক্ত ‘পবিত্র সূরাতুত্ তওবাহ শরীফ’ উনার ৩৬ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে-
اسماء الايام اولـها الاحد ويجمع على احاد واوحاد ووحود، ثم يوم الاثنين ويجمع على اثانين، الثلاثاء يـمد ويذكر ويؤنث ويجمع عل ثلاثاوات واثالث، ثم الاربعاء بالـمد ويجمع على اربعاوات وارابيع، والخميس يجمع على اخمسة واخامس ثم الجمعة بضم الـميم واسكانـها وفتحها ايضا ويجمع على جمع وجماعات، السبت ماخوذ من السبت وهو القطع لانتهاء العدد عنده.
وكانت العرب تسمى الايام اول ثم اهون ثم جبار ثم دبار ثم مؤنث ثم العروبة ثم شيار، قال الشاعر من العرب العرباء العاربة الـمتقدمين.
ارجى ان اعيش وان يومى + باول او باهون او جبار
او التالى دبار فان افته + فمؤنث او عروبة او شيار.
( تفسير القران العظيم لابن كثير اى تفسير ابن كثير فى نفسير سورة التوبة ۳۶ اية الجلد ۲ الصفحة ۵۵۳ دار الفكر بيروت لبنان)
অর্থ: হযরত আল্লামা শায়েখ ইলমুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি الـمشهور فى اسماء الايام والشهور ‘আল মাশহূর ফী আসমায়িল আইয়ামি ওয়াশ শুহূর’ নামে একখানা কিতাব রচনা করেছেন। তাতে তিনি লিখেন, সপ্তাহের সাত দিনের আরবী নাম হচ্ছে-
يوم الاحد ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)। الاحد শব্দটির বহুবচন হচ্ছে-
وحودও اوحاد- احاد
يوم الاثنين ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার)। الاثنان শব্দটির বহুবচন হচ্ছে اثانين
يوم الثلاثاء ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)। শব্দটি মাদ্ যোগে পড়তে হবে। এটি উভয় লিঙ্গ জাতীয় শব্দ। এর বহুবচন হচ্ছে ثلاثاوات ও اثالث।
يوم الاربعاء ইয়াওমুল আরবিয়া’ (বুধবার)। শব্দটি মাদ্ যোগে পড়তে হবে। শব্দটির বহুবচন হচ্ছে اربعاوات ও ارابيع।
يوم الخميس ইয়াওমুল খমীস (বৃহস্পতিবার)। الخميس শব্দের বহুবচন হচ্ছে اخمسة ও اخامس।
يوم الجمعة ইয়াওমুল জুমুআহ (জুমুআবার)। الجمعة শব্দটির م ‘মীম’ বর্ণটি কখনো পেশ যোগে, কখনো সাকিন যোগে এবং কখনো যবর যোগে পঠিত হয়ে থাকে। الجمعة শব্দটির বহুবচন হচ্ছে جمع ও جماعات।
يوم السبت ইয়াওমুস সাবত (শনিবার)। السبت শব্দটির অর্থ হচ্ছে- কেটে ফেলা, সমাপ্ত করা। শনিবার সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
অতি প্রাচীন আরববাসী উনারা সপ্তাহের দিনগুলোকে নিম্নোক্ত নামে অভিহিত করতেন:
اول আউয়াল বা রোববার। اهون আহওয়ান বা সোমবার। جبار জুবার বা মঙ্গলবার। دبار দুবার বা বুধবার। مؤنس মু’নিস বা বৃহস্পতিবার। عروبة আরূবাহ বা জুমুআবার এবং شيار শাইয়ার বা শনিবার। অতি প্রাচীন এক আরবী কবি বলেন,
অর্থাৎ আমি আশা করি আমি দীর্ঘদিন জীবিত থাকবো। আর আমার জন্ম দিন হচ্ছে اول অথবা اهون অথবা جبار অথবা دبار অথবা مؤنس অথবা عروبة অথবা شيار। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরে ইবনে কাছীর সূরা তওবাহ-এর ৩৬ নম্বর আয়াত শরীফ-এর তাফসীর ২য় খ- ৫৫৩ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুল ফিকর- বৈরূত লেবানন)
উল্লেখিত ইবারতে সাত দিনের নামগুলোকে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে সাধারণভাবেيوم الاحد ‘ইয়াওমুল আহাদ’ অর্থাৎ রোববারকে সপ্তাহের প্রথম দিন এবং يوم السبت ‘ইয়াওমুস সাবত’ শনিবারকে শেষ দিন হিসেবে সাজানো হয়েছে।
কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, পবিত্র আক্বায়িদ শরীফ ও তা’রীখ কিতাব পাঠে এটাই জানা যায় যে,
প্রথমত: প্রথম নবী-রসূল হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, আগমন ও পবিত্র বিছাল শরীফ হয়েছিলো জুমুআবার। এজন্য পৃথিবীর শুরু থেকে হযরত ইয়াকূব আলাইহিস সালাম পর্যন্ত জুমুআবার বিশেষভাবে সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য ও শুরুর দিন হিসেবে বিবেচিত হতো। ওই দীর্ঘ সময়ে সপ্তাহের শুরুর দিন ছিলো يوم الجمعة ইয়াওমুল জুমুআহ বা জুমুআবার এবং শেষ দিন ছিলো يوم الخميس ইয়াওমুল খমীস’ (বৃহস্পতিবার)।
দ্বিতীয়ত: হযরত ইয়াকূব আলাইহিস সালাম উনার বংশধর উনাদের থেকে শুরু করে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পূর্ব পর্যন্ত সকল বণী ইসরাঈলগণ সপ্তাহের বিশেষ দিন হিসেবে পালন করতেন يوم السبت ‘ইয়াওমুস সাব্ত’ (শনিবার) কে। এজন্য উনাদের সময় সপ্তাহের বিশেষ ও শুরুর দিন ছিলো يوم السبت ‘ইয়াওমুস সাবত (শনিবার) এবং শেষ দিন ছিলো يوم الجمعة ‘ইয়াওমুল জুমুআহ’ বা (জুমুআবার)।
তৃতীয়ত: হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অনুসারীগণ এবং যারা নাছারা নামে পরিচিত তারা রোববারকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ ও শুরুর দিন মনে করতেন। এজন্য বর্তমান বিকৃত পথভ্রষ্ট কাফির খ্রিস্টানরাও সপ্তাহের বিশেষ ও শুরুর দিন হিসেবে পালন করে يوم الاحد ‘ইয়াওমুল আহাদ’ (রোববার) কে এবং শেষ দিন হিসেবে মনে করে يوم السبت ‘ইয়াওমুস সাবত’ (শনিবার) কে।
চতুর্থত: আমরা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- আমাদের গ্রহণযোগ্য মতে, আমাদের প্রানাধিক প্রিয় রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ায় আগমন করেছেন يوم الاثنين العظيم ‘ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ’ (সোমবার)-এ। এজন্য সম্মানিত শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে আমাদের মতে, সপ্তাহের শুরু ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন হচ্ছে يوم الاثنين العظيم ‘ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম’ (সোমবার) এবং শেষের দিন হচ্ছে ‘ইয়াওমুল আহাদ’ (রোববার)।
এছাড়াও আমাদের নিকটে ‘আল ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম’ (সোমবার) উনার মতই জুমুআবার উনার মর্যাদা। তা এজন্য যে, এই জুমুআবার রাতেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র খিদমত মুবারকে তাশরীফ নিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সমস্ত হাজারো লাখো কোটি কারণে আমাদের মুসলমানগণের সাপ্তাহিক দিনগুলোর ধারাবাহিকতা হবে নিম্নোক্তভাবে:
১. يوم الاثنين العظيم ‘ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ’ (সোমবার)
২. يوم الثلاثاء ‘ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)
৩. يوم الاربعاء ‘ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)
৪. يوم الخميس ‘ইয়াওমুল খমীস (বৃহস্পতিবার)
৫. يوم الجمعة ‘ইয়াওমুল জুমুআহ (শুক্রবার)
৬. يوم السبت ‘ইয়াওমুস সাব্ত (শনিবার)
৭. يوم الاحد ‘ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)