সুন্নতী মুবারক তা’লীম
সন্তানের জন্য আক্বীক্বা করা খাছ সুন্নত মুবারক (৩)
, ২৭ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০১ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ১৬ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
সপ্তম দিনে নবজাতক সন্তানের নাম রাখা:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِتَسْمِيَةِ الْمَوْلُودِ يَوْمَ سَابِعِهِ وَوَضْعِ الأَذَى عَنْهُ وَالْعَقِّ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জন্মের সপ্তম দিবসে নবজাতকের নাম রাখা, তার কষ্টদায়ক বিষয় দূর করার (অর্থাৎ মাথার চুল মু-ন করার) ও আক্বীক্বা করার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। (তিরমিযী শরীফ: ২৮৩২)
হযরত সামুরা বিন জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كُلُّ غُلَامٍ رَهِيْنَةٌ بِعَقِيْقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى.
অর্থ: প্রত্যেক শিশুর-ই আক্বীক্বা করা আবশ্যক। জন্মের সপ্তম দিনে তার জন্য (পশু) যবাই করবে এবং তার মাথা নেড়া করবে আর নাম রাখতে হবে। (আবূ দাউদ শরীফ: ২৮৪০, মুসনাদে আহমদ শরীফ: ২০০৯৫)
আক্বীক্বা না করার পরিণতিঃ
আক্বীক্বা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করলে শিশু বিভিন্ন রোগ- শোক ও বালা-মুসিবত থেকে নিরাপদ থাকে। তাই আক্বীক্বার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন না করলে এগুলো থেকে নিরাপদ নাও থাকতে পারে।
আক্বীক্বার পশুর বৈশিষ্ট ও সংখ্যা :
দুম্বা, ভেড়া বা মেষ, খাসী বা বকরী, উট, গরু ও মহিষ। এই ছয় প্রকার পশুর নর-মাদী উভয়ই আক্বীক্বার যোগ্য পশু। পবিত্র কুরবানীর পশুর মতো আক্বীক্বার পশুর বয়স, সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “পবিত্র কুরবানী উনার আহকাম, ফাযায়িল ও মাসায়িল” কিতাব খানা পাঠ করুন)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ الْيَهُودَ تَعُقُّ عَنِ الْغُلَامِ وَلَا تَعُقُّ عَنِ الْجَارِيَةِ فَعُقُّوا عَنِ الْغُلَامِ شَاتَيْنِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ.
অর্থ: ‘ইহুদীরা ছেলে সন্তানের আক্বীক্বা করতো কিন্তু মেয়ে সন্তান হলে তার আক্বীক্বা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আক্বীক্বা করো। ’ (বায়হাক্বী শরীফ, সুনানুল কুবরা শরীফ: ১৯৭৬০; মুসনাদে বাযযার শরীফ : ৮৮৫৭)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنِ الْغُلَامِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ
অর্থ: ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুইটি সমবয়সের ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে আক্বীক্বা দিতে হবে। (আবূ দাউদ শরীফ, আহমাদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে ছেলে সন্তানের জন্য দু’টি সমবয়সী ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আক্বীক্বা করার জন্য মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারক করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-১৮৩; আবূ দাউদ শরীফ, দ্বিতীয় খ-, পৃষ্ঠা-৪৪)
অর্থাৎ ছেলে সন্তানের জন্য দুম্বা, ভেড়া-মেষ, খাসী-বকরী এগুলো দিয়ে আক্বীক্বা করলে যে কোন দুইটি পশু যবেহ করতে হবে। আর উট, গরু ও মহিষ দিয়ে আক্বীক্বা করলে দুই নাম দিতে হবে। আর মেয়ে সন্তানের জন্য এক নামের আক্বীক্বা দিতে হবে।
মাসয়ালা: ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীক্বা একসাথে দেয়া জায়িয হবে। (শামী, আলমগীরী)
আক্বীক্বার পশুর চামড়া : আক্বীক্বার পশুর চামড়া বাজারে বিক্রি করে, বিক্রিয়কৃত টাকা গরিব-মিসকিন, ইয়াতীমদের মধ্যে দান করে দিতে হবে। বিক্রয়কৃত টাকা নিজেরা ব্যবহার করতে পারবে না। তবে, নিজেরা আক্বীক্বার পশুর চামড়া ব্যবহার করতে পারবে।
পবিত্র আক্বীক্বার পশুর গোশত আহার করার হুকুম:
অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীক্বা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না। মূলত তাদের একথা শরীয়ত সম্মত নয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা হলো, পবিত্র আক্বীক্বা উনার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের পক্ষ থেকে যে পশু আক্বীক্বা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতা, সন্তান, আত্মীয়-স্বজনসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই সম্মানিত শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (দলীল: ফিক্বাহর কিতাবসমূহ)
হযরত সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি, ‘আক্বীক্বার গোশত তার পরিবার খেতে পারবে এবং হাদিয়াও দিতে পারবে। ’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি সদকা করে দিতে হবে? ‘তিনি বললেন, না, তুমি চাইলে খেতে পারো এবং হাদিয়াও দিতে পারো। ’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক:৭৯৬৯)
আক্বীক্বাদাতার জন্য আক্বীক্বাকৃত পশুর গোশ্ত কাউকে দেয়া বা না দেয়া তার ইখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। সে ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই দান করে দিতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই রেখে খেতে পারে। এতে আক্বীক্বা উনার কোন ত্রুটি হবে না।
আক্বীক্বা নিয়ে বর্তমান সমাজে কুসংস্কার : আক্বীক্বার পশু নানার বাড়ি থেকে দিতে হয়। আক্বীক্বার গোশত বাবা-মা, নানা-নানী ও দাদা-দাদীরা খেতে পারেন না। সন্তানের চুল মু-ানোর সময় মাথার তালুর উপর ক্ষুর ধরে রেখে আক্বীক্বার পশু জবাই করতে হয় ইত্যাদি কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে হবে। আক্বীক্বার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অশ্লীল নাচ-গান থেকে শুরু করে সর্বপ্রকার হারাম, নাজায়িয, কুফরী-শিরকী, বেদয়াত-বেশরা কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
পরিশেষে বলতে হয়, আক্বীক্বার সাথে শিশুর নাম রাখার সম্পর্ক রয়েছে। আক্বীক্বার সাথে শিশুর বালা-মুসিবত দূর হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আক্বীক্বার সাথে প্রথম চুল মু-ানোর সম্পর্ক রয়েছে। তাই সামর্থ্য থাকলে দ্রুত আক্বীক্বা সম্পন্ন করা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে তাওফীক্ব দান করুক। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (১)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘তালবীনা’
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি ও উপকারিতা : দুধ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খেজুরের রস খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)