হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ
সত্যিই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী
, ২৭ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১২ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মেছালস্বরূপ বলা হয়ে থাকে যে- হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, পূর্ববর্তী বুযুর্গ ছিলেন, বড় ওলী ছিলেন। উনার প্রসঙ্গে বলা হয় যে, মানুষ কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না। শুধু নেক আমলটা তার সাথে যাবে। প্রথম যামানায় তিনি মণিমুক্তার ব্যবসা করতেন। রোম থেকে মণিমুক্তা এনে তিনি বছরাতে বিক্রি করতেন। তিনি একবার গেলেন সেই রোমে। রোমের এক উযীরের সাথে, এক মন্ত্রীর সাথে উনার সম্পর্ক ছিল। সেই রোমের মন্ত্রী বললো, হে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি এসেছেন ব্যবসার মাল নেয়ার জন্য, আজকে আমি আপনাকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যাব। একটা নতুন জিনিস দেখাব। ঠিক আছে, নিয়ে চলেন, কোথায়? নিয়ে যাওয়া হলো, অনেক দূরে একটা মাঠের মধ্যে। সেই মাঠে একটা বড় তাঁবু টাঙ্গানো। সে তাঁবুর ভিতরে কিছু একটা রাখা হয়েছে। তিনি দূরের থেকে লক্ষ্য করলেন, সেই রোমবাসীদের মধ্যে রোমের বাদশাহ সেখানে গিয়েছে, তার উযির-নাযির সকলেই গিয়েছে। দেখা গেল কি, কিছুক্ষণ পরে কিছু সৈন্য-সামন্ত তাদের ঢাল-তলোয়ার নিয়ে সেই তাঁবুটাকে প্রদক্ষিণ করলো, কি যেন তারা বলতে বলতে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
দুই নম্বরে দেখা গেল- কিছু সংখ্যক আলেম, কিছু জ্ঞানী লোক তারাও সেই তাঁবুটাকে প্রদক্ষিণ করে কাঁদতে কাঁদতে, কিছু বলতে বলতে চলে গেল।
তৃতীয়তঃ কিছু বৃদ্ধ লোক, তারাও সেই তাঁবুটাকে প্রদক্ষিণ করলো। কাঁদতে কাঁদতে কিছু বলে তারা চলে গেল।
চতুর্থতঃ দেখা গেল, কিছু খুবছূরত মহিলা। তাদের মাথায় স্বর্ণ মণি-মুক্তার ডালা রয়েছে। সেটা নিয়ে তারা সেই তাবুটাকে প্রদক্ষিণ করে কিছু বলে, কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। ঘটনা শেষ।
এরপরে যখন বাদশাহ স্বয়ং নিজেই সেটা প্রদক্ষিণ করে এবং সে নিজেও কাঁদতে কাঁদতে কিছু বলে, সেখান থেকে বের হয়ে আসল।
যখন ঘটনাটা ঘটে গেল, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, সেই মন্ত্রীকে যে, হে ভাই মন্ত্রী! আমি তো তোমাদের ভাষা বুঝি না। তোমরা কি বললে, কি করলে? আমি তো কিছুই বুঝলাম না। এটা যখন বলা হলো, তখন সেই মন্ত্রী বললো, হে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি! মূলতঃ এখানে বাদশাহ্’র একটা ছেলে শায়িত আছে, সে খুব উপযুক্ত ছিল। বাদশাহ মনে করেছিল, বাদশাহ্’র পরে তাকে গদীনশীন করা হবে। কিন্তু হঠাৎ অসুখে সে মারা যায়। যখন সে মারা গেল তখন তাকে এখানে দাফন করা হয়েছে, এজন্য প্র্রত্যেক বৎসর তার মৃত্যুর দিন বাদশাহ এখানে আসে। আপনি যে দেখলেন, কতগুলি সৈন্য-সামন্তÍ তারা কি বললো জানেন? সৈন্য-সামন্তরা তাদের ঢাল-তলোয়ার নিয়ে তারা তার কবরকে প্রদক্ষিণ করলো এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে বললো, হে শাহযাদা! যদি ঢাল দিয়ে, তলোয়ার দিয়ে তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো, তাহলে আজকে তোমাকে আমরা অবশ্যই রক্ষা করতাম সেই মৃত্যু থেকে। কিন্তু তোমাকে এমন এক মহান অস্তিত্ব অর্থাৎ খালিক্ব মালিক মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন মৃত্যু দিয়েছেন, যাঁর কাছে আমাদের ঢাল-তলোয়ারের কোন মূল্যই নেই। কাজেই তোমাকে রেখে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোন পথ নেই। এই কথা বলে তারা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। এরপরে জ্ঞানী ব্যক্তিরা আসল। এসে বললো, হে শাহযাদা! যদি জ্ঞান দিয়ে, আক্বল দিয়ে, সমঝ দিয়ে তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো, আমরা রক্ষা করতাম। কিন্তু যিনি তোমাকে নিয়ে গেছেন, উনার কাছে আমাদের জ্ঞান, আমাদের আক্বল তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। এই কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে তারাও চলে গেল। এরপর আসলো বৃদ্ধ লোকেরা। তারা এসে বললো, হে শাহযাদা! যদি কান্নাকাটি করে, রোনাজারি করে, আহাজারি করে, মায়া মুহব্বত দিয়ে, তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো আমরা রক্ষা করতাম। কিন্তু যিনি নিয়ে গেছেন, উনার কাছে আমাদের রোনাজারি, আহাজারি, কান্নাকাটির কোনই মূল্য নেই। এ কথা বলে তারাও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
এরপরে আসলো সেই মহিলারা। তারা বললো যে, যদি ছূরত দিয়ে, মাল দিয়ে তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো, আমরা রক্ষা করতাম। কিন্তু যিনি নিয়ে গেছেন, উনার কাছে এগুলো তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, কোন মূল্য নেই। কাজেই আমাদেরও চলে যেতে হলো।
শেষ পর্যন্ত বাদশাহ্ বললো, হে শাহযাদা! যদি আমার সমস্ত রাজত্বের বিনিময়ে, সমস্ত ধন-সম্পদের বিনিময়ে তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো, আমি করতাম। কিন্তু আমার এই সমস্ত সম্পদ, ধন-সম্পদ, রাজত্ব, যিনি নিয়ে গেছেন উনার কাছে কোন মূল্য নেই। কাজেই তোমাকে রেখে যাওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। এ কথা বলে তারা সকলেই কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই ঘটনা যখন দেখলেন, দেখে তিনি খুব চিন্তিত হয়ে গেলেন। তিনি খালিছ তওবা করলেন যে, সত্যিই তো দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। এখান থেকে কিছুই নিয়ে যাওয়া যাবে না। ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, বাড়ী-গাড়ী, সম্পদ কিছুই নেয়া যাবে না। শুধু নেয়া যাবে নেক আমলগুলি, এছাড়া তো কিছুই নেয়া যাবে না।
-আল্লামা মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)