ইলমে আরূজী অর্থাৎ ছন্দ প্রকরণ সংশ্লিষ্ট আদব (১২)
শায়েখ মুরীদ উনাদের গভীর নিছবত
, ০৮ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০২ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মায়ের আদেশে ৮ বছর বয়স মুবারকে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন প্রথম মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ আসেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ না করে বাইরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উনার আধ্যাত্মিকতার বিষয়টি উপলব্ধির জন্য কয়েকটি কবিতার লাইন রচনা করে পাঠ করেন।
তিনি বলেন (যার ভাবার্থ হলো)- “আপনি এমনি এক শাহেনশাহ, যেখানে একটি কবুতর বাজপাখিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। একজন অত্যন্ত সাধারণ মুসাফির আপনার দরজার ভেতরে প্রবেশ করবে কি করবে না?”
মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ কথাগুলো শোনার সাথে সাথে একজন খাদিমকে দিয়ে উনার কথার উত্তর দেন। তিনি বলে পাঠান- (যার ভাবার্থ হলো)- “তুমি একজন বাস্তববাদী মানুষ ভেতরে আসো। তুমি অল্প সময়ের জন্য আমার প্রিয়ভাজন হতে পারো। যদি এ ব্যক্তি বুদ্ধিহীন হয় তবে সে যেভাবে এসেছে সেভাবেই ফেরত যেতে পারে।”
সুতরাং জীবনের শুরুতেই, বাইয়াতের শুরুতেই হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে শায়েখের যে নিছবত ছিল তাতেই উনার হাক্বীক্বী পরিচয় পাওয়া যায়।
মুজাদ্দিদুয যামান, মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে উনার বিশিষ্ট মুরীদ মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী, জগদ্বিখ্যাত কবি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে কী গভীর নিছবত ছিলো তা নিচের ঘটনা শুনলেই বোঝা যাবে।
একদিন এক ভিক্ষুক মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ এসে কিছু সাহায্যের জন্য আবেদন করলো। কিন্তু সে সময় দরবার শরীফ-এ সেই ভিক্ষুককে দেয়ার মতো কিছুই ছিল না। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার মহান ওলী খালি হাতে ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দিতেও পছন্দ করলেন না। উনার কাছে নিজের এক জোড়া স্যান্ডেল (পাদুকা বা নালাইন শরীফ) দেখতে পেয়ে তিনি তাই সেই ভিক্ষুককে দান করে দিলেন। ভিক্ষুক সেই মুবারক স্যান্ডেল শরীফ নিয়ে যাওয়ার পথে দূর থেকে তাকে দেখতে পেলেন হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট তখন বেশ অর্থকড়ি ছিলো এবং মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীও ছিল। ভিক্ষুক উনার কাছে আসতেই তিনি বলে উঠলেন’ ‘ওহে ভিক্ষুক তোমার কাছে আমার শায়েখ উনার খুশবু পাই।’ ভিক্ষুক সব খুলে বললে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অর্থ বা মূল্যবান উপঢৌকনের বিনিময়ে স্যান্ডেল মুবারক ফেরত নিয়ে নেন। তিনি সেই স্যান্ডেল মুবারকসহ আবার উনার শায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন, তখন মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছিলেন, “হে আমীর খসরু! তুমি অতি সস্তায় এ স্যান্ডেল ফেরত নিয়েছো।”
এ ঘটনা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে উনার বিশিষ্ট মুরীদ হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কী নিবিড় আত্মিক যোগ ছিল! এই আত্মিক বিকাশসম্পন্ন ওলীআল্লাহগণ উনাদের সম্পর্কে কাফিররাই অপবাদ ছড়ায় যে, উনারা হারমোনিয়াম-তবলাসহ কাওয়ালী শুনতেন। নাঊযুবিল্লাহ!
ছূফী সম্প্রদায় কখনোই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সামা করেননি
মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কাওয়ালী করা এবং তবলা এবং সেতার যন্ত্র আবিষ্কার করা যে সম্ভব নয়, তা উনার তাক্বওয়া, পরহেযগারী এবং উনার শায়েখের সঙ্গে নিছবতের বিষয়টি বুঝলে সহজেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এখানে উনার আরো একটি মুবারক ঘটনা তুলে ধরা হলো।
বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ, মাহবুব-এ ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ক্ষমতাবান লোকদের থেকে, বিশেষ করে দিল্লীর সুলতানদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন। এক সময় দিল্লীর সুলতান জালালুদ্দিন খিলজী হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে সেই সময়কার মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি উনার সাথে দেখা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। সুলতান নিজেই দিনক্ষণ ঠিক করেন কিন্তু সেই দিন তারিখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জানাতে নিষেধ করেন।
কিন্তু হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই সংবাদ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জানিয়ে দিলে তিনি ভিন্ন জায়গায় চলে যান। ফলে সুলতান গিয়ে আর দেখা পাননি। পরে জালালুদ্দিন খিলজি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ওয়াদা ভঙ্গের কারণ জিজ্ঞাসা করলে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুলতানকে উত্তর দেন ‘সুলতানের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করাতে শাস্তিস্বরূপ আমার জীবন সংহার হতে পারে। তবে আমার মুর্শিদ উনার সাথে একই রকম আচরণ করলে আমার ঈমানহানি হবে এবং পরকালে এর জবাবদিহি করতে হবে।’
এ ঘটনাটি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাক্বওয়া, পরহেযগারী এবং উনার শায়েখ উনার সঙ্গে হৃদ্যতার বিষয়টি বোঝার জন্য যথেষ্ট। যে সকল বদআক্বীদার লোক মাহবুব-ই-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কাওয়ালী করেছেন, সামা করেছেন বলে অপপ্রচার চালায় এবং এই অজুহাতে নিজেরাও এ সমস্ত হারাম কাজে লিপ্ত রয়েছে তাদের জবাব দেয়ার জন্য নিচের ঘটনাটিই যথেষ্ট।
একবার হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ সামা শরীফ উনার অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেই সামা শরীফ উনার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সামা শরীফ শুনতে শুনতে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাঝে হাল সৃষ্টি হয়ে যায় এবং উনার অজান্তেই তিনি দাঁড়িয়ে শরীর দোলাতে থাকেন। উনার এ অবস্থা দেখে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এভাবে দুলতে বারণ করলেন এবং শিখিয়ে দিলেন এ অবস্থায় হাত উঠিয়ে মুনাজাতের ভঙ্গিতে দোয়া করতে এবং পা দ্বারা মাটিতে মাঝে মাঝে আঘাত করতে। পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করার অর্থ হচ্ছে পৃথিবীর মায়া-মোহকে পরিত্যাগ করা।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, সামা শরীফ শুনে হাল উঠলে এবং তাতে শরীর দুলালে যাতে নাচের মতো মনে না হয় এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। ফলে তিনি কী করে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সামা করার অনুমতি দিতে পারেন? মূলত নফসের পূজারীরাই এ সমস্ত অপপ্রচার চালায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)